দুই সপ্তাহে উহানের সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা করেছে চীন

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশাল এক কর্মযজ্ঞই শেষ করেছে চীন। দুই সপ্তাহের মধ্যে কোটি ১০ লাখ মানুষের কভিড-১৯ পরীক্ষা করাটা কর্মযজ্ঞই বটে। প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের আবার ফিরে আসা প্রতিহত করতে উহানের সব বাসিন্দার পরীক্ষা করছে সরকার। কাজে বিপুল ব্যয় হলেও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার খাতিরে তাই করছে জিনপিং প্রশাসন। খবর ব্লুমবার্গ।

নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল উহান। শহরটিতে যেন ভাইরাসটি আবার মহামারী আকার ধারণ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে শহরের সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ মে কার্যক্রম শুরু হয়। শহরটির নাগরিকত্বের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দুই সপ্তাহের পরীক্ষায় মাত্র একজন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকেই দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। বলা হচ্ছে, করোনা মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বেশ দেরি করেছে দেশটি। অবস্থায় মহামারীটির দ্বিতীয় দফায় প্রকোপ এড়াতে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই চালাচ্ছে চীন।

প্রতিষেধক তৈরির কার্যক্রম জোরেশোরে পরিচালনা করছে বেইজিং। এছাড়া দেশজুড়ে করোনা পরীক্ষার ব্যাপ্তি বাড়ানো হয়েছে। চলাচলেও আরোপ করা হয়েছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ।

সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্লোবাল বায়োসিকিউরিটি বিষয়ের অধ্যাপক রায়না ম্যাকিনটায়ার বলেছেন, চীন দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা জরুরি প্রয়োজনে কোনো কাজ দ্রুত ব্যাপক আকারে সম্পন্ন করতে মানবসম্পদ যন্ত্রপাতি কতটা সফলভাবে ব্যবহার করতে পারে। এখানে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রাজনৈতিক সদিচ্ছার সমন্বয় রয়েছে।

চীন বরাবরই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। উল্টো তারা করোনা-পরবর্তী বিশ্বে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। গত সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনর্গঠন মহামারীর প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই তার প্রতিবেদন প্রকাশের কৌশলগত ব্যবস্থার উন্নয়নের আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কেকিয়াং বলেন, যখনই কোনো সংক্রমণ শনাক্ত হবে, তখনই দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিষয়ে কোনো রাখঢাক বরদাস্ত করা হবে না।

উহানে পরীক্ষার ক্ষেত্রে চীন কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। একটি হলো রোগ নিরীক্ষণ, যার মাধ্যমে সক্রিয় সংক্রমণ সরাসরি পরীক্ষা করা হয়। আরেকটি প্রক্রিয়া হলো অ্যান্টিবডি পরিমাপ করা, যার মাধ্যমে পরীক্ষাধীন ব্যক্তির করোনা-সংবেদনশীলতা নিরূপণ করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিভিন্ন আবাসিক এলাকার কম্পাউন্ডে অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বলতে গেলে এক অসাধ্যই সাধন করেছে চীন। উহানের এক নাগরিক সে কথাই বলছেন। ঝৌ জিয়াংনিং নামের ওই ব্যক্তি বলেন, সত্যি সত্যি মাত্র দুই সপ্তাহে কোটি ১০ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করাটা নিশ্চিতভাবেই একটি অতিলৌকিক ঘটনা। তিনি জানান, তার সোয়াব পরীক্ষা করতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লেগেছে।

অল্প সময়ের মধ্যে কোটি ১০ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষার জন্য ব্যাচ টেস্টিং প্রক্রিয়ার সাহায্য নেয়া হয়েছে, যেখানে একজন স্বাস্থ্যকর্মী একসঙ্গে প্রায় ১০টি নমুনা নিরীক্ষা করতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন