কভিড-১৯ মহামারী

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দায় ইতালি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ব্যবসায় আস্থায় পতনের জেরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার সামনে দাঁড়িয়েছে ইতালি। কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশটির জন্য নভেল করোনাভাইরাস মহামারী মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। খবর এএফপি।

২০০৫ সালের মার্চ থেকে পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট ইস্টাটের সূচক রাখার পর গত মে মাসে ইউরো অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির ব্যবসায় আস্থা সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জোট কনফেসারসেন্তি বলছে, প্রকাশিত উপাত্তগুলো খুবই উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য অর্থনৈতিক জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবসা খাত বিশেষ করে দোকানপাট, সেবা পর্যটনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

ফেডারেশনটির প্রধান প্যাট্রিজিয়া দো লুইজ বলছেন, খরচ বেতনাদি পরিশোধে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থের সংকট নিয়ে তাদের সদস্যরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে পড়েছি, যেখান থেকে ফেরার উপায় নেই। এজন্য সরকারকে শিগগিরই ঋণ সরবরাহ, এসএমই ভর্তুকি নিশ্চিত করতে হবে।  

এদিকে গত সপ্তাহে সরকারের তরফ থেকে অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকগুলো দ্রুত সাড়া দিচ্ছে না। সরকারের সেন্ট্রাল গ্যারান্টি ফান্ডের আওতায় চার লাখ ঋণ আবেদনের বিপরীতে হাজার ৮০০ কোটি ইউরো বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় ইতালি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই মাসেরও বেশি সময় কঠোর লকডাউন অনুসরণ করায় দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাংক অব ইতালি গত শুক্রবার জানায়, দেশটির জিডিপি থেকে ১৩ শতাংশ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির উপাত্তে আরো বলা হচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ইতালির অর্থনীতি দশমিক শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা প্রাথমিক দশমিক শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি।

মেদিওবাঙ্কার এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, চলতি বছরে ইতালির অর্থনীতি ১৭ হাজার কোটি ইউরো খোয়াতে পারে, যা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম অঞ্চল ভেনেতোর জিডিপির সমান।

দেশটির প্রধান ব্যবসায় কনফেডারেশন কোফিনডাস্ট্রিয়ার প্রধান কার্লো বনোমি মনে করছেন, কভিড-১৯ মহামারীতে দেশটির প্রায় এক মিলিয়ন চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, মে মাসের পুরো উপাত্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া উপাত্তের ভিত্তিতে আমাদের আশঙ্কা সাত লাখ থেকে ১০ লাখ কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন বিনিয়োগ থাকলেই কেবল নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ভর্তুকি বা সাময়িক ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে গাড়ি নির্মাণ খাতের সংকট দূর করা যাবে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যে ৭৫ হাজার কোটি ইউরোর পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা দিয়েছে, তার প্রধান সুবিধাভোগী ইতালি হলেও দেশটির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হবে, তা ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট বিবেচিত নাও হতে পারে।

কর্মহীন বা সাময়িক ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের জন্য সরকার হ্যান্ডআউটের ব্যবস্থা করলেও সুরক্ষা জালের বাইরে থেকে গেছেন অনেকে। এমন একজন হচ্ছেন এলিওনোরা ফজলিয়াচু। লমবার্ডির বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী ফিটনেস সাঁতারের প্রশিক্ষক জানান, নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ায় ফেব্রুয়ারির শেষের দিকেই তাদের জিম বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, আমি মাসিক ৬০০ ইউরো হ্যান্ডআউটের জন্য বিবেচিত হইনি, কারণ গত বছর আমি ১০ হাজার ইউরোর চেয়ে বেশি আয় করেছি।

প্রথম দিকে কোনোমতে চালিয়ে নিতে পারলেও এখন প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য সঙ্গীর ওপর নির্ভর করছেন। সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে হতাশা দেখছেন এলিওনোরা।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত কনফকর্মার্সিও-সেনসিসের এক জরিপে বলা হচ্ছে, ৫৩ শতাংশ ইতালীয় পরিবারই নেতিবাচক ভবিষ্যতের আশঙ্কা করছে এবং দেশের জন্য নেতিবাচক ভবিষ্যতের আশঙ্কা করছে ৬৮ শতাংশ। লকডাউনের কারণে ৪২ শতাংশ পরিবারেরই কাজ আয় কমে গিয়েছে, ২৬ শতাংশ পরিবারের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং সাময়িক ছাঁটাইয়ে পড়েছে ২৪ শতাংশ পরিবার। প্রতি ১০ পরিবারের মধ্যে ছয়টিই চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন