নওগাঁর পর্যটন

করোনায় ৫ লাখ টাকার রাজস্ববঞ্চিত সরকার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নওগাঁ

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার রবীন্দ্রনাথের পতিসর কাচারি বাড়ি জাদুঘর। এতে প্রায় লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এসব পর্যটন স্পট বন্ধ থাকায় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মজীবী ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়েছেন।

নওগাঁর প্রধান পর্যটন স্পট ধরা হয় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারকে। এটি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। পাহাড়পুরসংলগ্ন জাদুঘরে বেলে পাথরের চামুণ্ডা মূর্তি, লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তির খণ্ডাংশ, কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গণেশ মূর্তি, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, দুবলহাটির মহারানীর তৈলচিত্র, হরগৌরীর মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী মূর্তি, নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, নন্দী মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি সূর্য মূর্তি সংরক্ষিত আছে।

আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত আত্রাই উপজেলার পতিসর কাচারি বাড়ি। বিশ্বকবির শিল্পকর্ম ব্যবহূত আসবাব নিয়ে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে রবীন্দ্র জাদুঘর। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এসব পর্যটন স্পটে সবসময় দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকত। তবে দুই ঈদে দর্শনার্থীর আগমন সবচেয়ে বেশি হয়। কারণে ঈদকেই প্রধান পর্যটন মৌসুম ধরা হয়। দর্শনার্থীর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে প্রতি মাসে রাজস্ব হয় ২০ হাজার টাকা। প্রতি ঈদে তিনদিনে আয় হয় প্রায় লাখ টাকা। অন্যদিকে পতিসর কাচারি বাড়িতে প্রতি মাসে ১৭ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়। প্রতি ঈদের তিনদিনে গড়ে আয় হয় লাখ ২০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত মার্চ। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নওগাঁয় পর্যটনকেন্দ্র, দর্শনীয় স্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঈদুল ফিতরেও এসব পর্যটন স্পট বন্ধ ছিল। এতে প্রায় লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

আত্রাই পতিসর কাচারি বাড়ি জাদুঘরের কর্মী আবুল কালাম হোসেন বলেন, প্রতি মাসে প্রায় ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকার রাজস্ব আয় হতো। এছাড়া প্রতি ঈদের প্রথম দিন প্রায় ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দিন ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দিনে ৪০ হাজার টাকার মতো রাজস্ব আয় হতো। চতুর্থ দিন থেকে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির সুবাদে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েছিল। সারা বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হতো, দুই ঈদে তার চেয়ে বেশি অর্থ আয় হয়। কিন্তু করোনার কারণে এখন জাদুঘর পর্যটন স্পট বন্ধ রয়েছে। এতে রাজস্ব আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। জনজীবন স্বাভাবিক হলে আবারো রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে এসব পর্যটন স্পট বন্ধ থাকায় বেকায়দা পড়েছেন সম্পৃক্ত কর্মজীবী ব্যবসায়ীরা। তাদের অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেক দোকান মালিক বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাবছেন।

পাহাড়পুর বিহারের প্রধান ফটকের পাশে অবস্থিত দোকানের মালিক মানিক হোসেন বলেন, প্রায় আড়াই মাস আমাদের দোকান বন্ধ রয়েছে। এতে অনেক পণ্য নষ্ট মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। ইঁদুর মালামাল কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। আয়-রোজগার না থাকায় কষ্ট করে দিন পার করতে হচ্ছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন