বাণিজ্যিক কেন্দ্র হংকং নিয়ে শঙ্কা

মার্কিন-চীন বৈরিতায় বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ধস

বণিক বার্তা ডেস্ক

এশিয়ার বাণিজ্যিক হাব বা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকং। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই অঞ্চলে চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণমূলক শাসন থেকে বের হওয়ার জন্য আন্দোলন করে আসছে হংকংয়ের বাসিন্দারা। আন্দোলনের মধ্যেই হংকংয়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি জাতীয় নিরাপত্তা বিলে অনুমোদন দিয়েছে চীনের পার্লামেন্ট। এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা এবং পরিচালনা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের শঙ্কা। এছাড়া চীনে বিলটি পাস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চিরবৈরী দেশ যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। হংকং নিয়ে বেইজিংয়ের এমন উদ্যোগের বিপরীতে ওয়াশিংটনের মনোভাবের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তারা। আর এতেই শুরু হয়েছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে ধস। অন্যদিকে পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল সেফ হেভেন হিসেবে পরিচিত বন্ড এবং জাপানি মুদ্রা ইয়েনের মূল্যবৃদ্ধি পায়।

গত বৃহস্পতিবার চীনের পার্লামেন্টে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুমোদন পায়। আইনে দেশদ্রোহিতা, বিচ্ছিন্নতা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর অধীনে হংকংয়ের আইনপ্রণেতাদের বাদ দিয়েই এসব অপরাধে অভিযুক্তদের সাজা দেয়ার সুযোগ পাবে চীনা কর্তৃপক্ষ। সমালোচকদের আশঙ্কা, অনুমোদন পাওয়া আইনটির কারণে অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন খর্ব হতে পারে। আর আইনটি অনুমোদন পাওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়ে হোয়াইট হাউজের মনোভাব ব্যাখ্যা করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের কথা জানান। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কী ধরনের বার্তা আসতে পারে, সেটির জন্য বিনিয়োগ থেকে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের ওপর।

গতকাল ইউরোপীয় পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতা দিয়ে শুরু হয়। স্টকস ৬০০ সূচক দশমিক ৮৬ শতাংশ পড়ে যায়। এছাড়া জার্মানির ডিএএক্স সূচক দশমিক শতাংশ, ব্রিটেনের এফটিএসই ১০০ সূচক শতাংশ, ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক শতাংশ কমে যায়। আর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ফিউচারস কমে দশমিক শতাংশ।

এছাড়া এশিয়া প্যাসিফিকের মধ্যে জাপানের বাইরে এমএসসিআই ব্রডেস্ট সূচক কমেছে দশমিক শতাংশ। অন্যদিকে জাপানের নিক্কেই এন২২৫ সূচক তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় উঠে আবার নিম্নমুখী হওয়া শুরু করেছে। আর ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মূল্য বিনিময় হার ১০৭ দশমিক শূন্য - পৌঁছে। চাঙ্গা ভাবে ফিরেছে বন্ডও।

অন্যদিকে হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক এইচএসআই কমেছে দশমিক শতাংশ। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে নতুন করে চীনের উদ্যোগ শুরুর পর গত দুই সপ্তাহে হ্যাংসেং সূচক কমেছে শতাংশ।

গ্রাহকদের উদ্দেশে ডেনমার্কের ডান্সকে ব্যাংকের লেখা এক নোটে বলা হয়েছে, চীনের এমন পদক্ষেপের পর এখন ট্রাম্প কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটি দেখার বিষয়। হংকংয়ের বর্তমান অবস্থার ওপর এমন ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ বাজারের ওপর এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা বৈশ্বিক সেন্টিমেন্টের জন্যও বড় ধাক্কা। আর এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্যও একটি বিপর্যয়কর পদক্ষেপ। ফলে মার্কিন-চীন বৈরিতা আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে চীন-হংকং টানাপড়েন মূলত গত বছর থেকে শুরু হয়। তবে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হংকং বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলেন। মূলত সময় বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনারত ট্রাম্প স্বভাবতই ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের বিরাগভাজন হতে চাননি। তবে এরই মধ্যে হানা দেয়া বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ নিয়ে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে নতুন করে হংকং ইস্যুতে বৈরী দেশ দুটোর মধ্যে তিক্ততা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এরই মধ্যে হংকং সংকটকে অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে ওয়াশিংটনকে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছে বেইজিং। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন পরামর্শ যে সহজেই গিলবে না, সেটি ভালোভাবেই জানেন বিনিয়োগকারীরা। তাই আপাতত বিনিয়োগ নিয়ে খাদের কিনারে দাঁড়ানোটা নিরাপদ মনে করছেন না তারা। সূত্র: রয়টার্স

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন