মহামারীকালে সামাজিক মেলামেশার নিরাপদ উপায় আছে কি?

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মানুষের জীবনধারার অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। যার মাঝে সামাজিক দূরত্বের নীতি মেনে চলাটা অনেকের জন্য বেশ কঠিন কাজ। মানুষ সামাজিক জীবস্পর্শ যোগাযোগ তার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তাই এটা খুব স্বাভাবিক যে সতর্কতাজনিত যে অবসন্নতা এবং সামাজিক দূরত্ব মানার যে বিধি তা অনিশ্চিত এক ভবিষ্যেক নির্দেশ করছে। এমনকি খুব সচেতন মানুষেরাও এখন ফাঁকফোকর খোঁজার চেষ্টা করছে তাদের প্রিয় মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য।

কিন্তু আসলেই সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে পরিবার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা সম্ভব? জনস হপকিনস স্কুল অব নার্সিং অ্যান্ড মেডিসিনের প্রফেসর জ্যাসন ফারলে বলেন, প্রশ্নের কোনো জাদুকরী উত্তর নেই।

সবসময় ঝুঁকি থাকবে

সিডিসি আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করে বলেছে ঘরের বাইরে যেকোনো ধরনের আকারের ভিড় এড়িয়ে চলতে। যেমন বন্ধুর বাসায় আড্ডা, পার্কে, রেস্টুরেন্টে, দোকানে অথবা অন্য যেকোনো জায়গায় মিলিত হওয়াও।

এটা সেসব মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা অসুস্থ এবং ঝুঁকির মাঝে আছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ অথবা যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল এবং যারা উপরোক্ত মানুষদের সরাসরি সংস্পর্শে আছে তাদের জন্যও বিধি মেনে চলা জরুরি। কিন্তু আপনি ঝুঁকিমুক্ত থাকার পরও অর্থাৎ উপরোক্ত সব ক্যাটাগরির বাইরে থাকার পরও কভিড-১৯- আক্রান্ত হতে পারেন এবং ছড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক মানুষ যারা কভিড-১৯- সংক্রমিত হয়েছে, তাদের দেখা গেছে মৃদু উপসর্গ কিংবা একেবারেই উপসর্গবিহীন। যার অর্থ আপনি আপনার প্রিয় মানুষ ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন পুরোপুরি সুস্থ মনে হওয়ার পরও।

এমনকি নেগেটিভ রেজাল্টও আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কভিড-১৯ নির্ণয় সঠিক হয় না এবং যেকোনো সময়ে আপনি সংক্রমিত হতে পারেন। ফারলে বলেন, এখানে ভবিষ্যদ্বাণী করার কোনো সুযোগ নেই। যদি আপনি আজ নেগেটিভও আসেন, সেটি এই নিশ্চয়তা দেয় না যে কাল পজিটিভ হবেন না। এছাড়া অ্যান্টিবডি টেস্টে পজিটিভ হলেও আপনি ভবিষ্যৎ সংক্রমণ থেকে ইমিউন হবেন তা নয়।

মাস্ক ব্যবহার করা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং বাইরে যাওয়া সীমিত করা কভিড-১৯- আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু কতটা কম সেটা নির্ণয় করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ফারলে। তাছাড়া কে নিরাপদ এবং কে নিরাপদ নয় এমন কোনো ডেমোগ্রাফিও নেই। সব বয়সী মানুষ এতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হতে এবং মারা যেতে পারে।

এসব জানা-অজানা ঝুঁকি মাথায় রেখে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে ভার্চুয়ালি সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা, বলেছেন এপিডেমিওলজিস্ট ব্র্যান্ডন ব্রাউন। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে বিস্তৃতভাবে ইমিউনিটি অর্জন করা পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি টেস্ট করার সুযোগ বাড়ানো এবং মৃত্যু আক্রান্তের হার কমিয়ে স্বাস্থ্য খাতের ওপর বোঝা না কমা পর্যন্ত বিধিনিষেধ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রাউন।

একপক্ষীয় বিবেচনার সুযোগ নেই

সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যে মডেল তাতে সবাইকে বাসায় থাকতে হয় এবং যোগাযোগ রক্ষা করা যেতে পারে কেবল ঘরের বাসিন্দাদের সঙ্গে। যদিও মানব অস্তিত্ব ঠিক অতটা গোছালো নয়।

যেমন ঘরভর্তি মানুষ নিয়ে পার্টি করা সুস্পষ্টভাবে সামাজিক দূরত্বের যে বিধি তার লঙ্ঘন। আবার সবকিছু একপক্ষীয়ভাবে বিবেচনা করাও কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন আছে।

এখানে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকেও বিবেচনা করতে হবে। আইসোলেশন মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে তাদের জন্য যারা এরই মধ্যে বিষণ্নতা উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছেবেকারত্ব, আইসোলেশন বেদনা এসব কভিড-১৯-এর মহামারীর সঙ্গে যুক্ত, যার ফলে অতিরিক্ত ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। যেখানে থাকতে পারে আত্মহত্যার বিষয়টিও। এখন রোগের ছড়িয়ে পড়ার বিপরীতে আপনি এটাকে কীভাবে মাপবেন?

অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, মানুষকে সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত হওয়ার কথা না বলে বরং বলা যেতে পারে কীভাবে যতটা সম্ভব নিরাপদে থেকে তাদের প্রিয় মানুষকে দেখতে পারেন সেটা।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের পপুলেশন মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর জুলিয়া মার্কুস বলেন, আমরা সামাজিক দূরত্বকে বিবেচনা করছি হয় এপাড় নয়তো ওপাড় হিসেবে। কিন্তু রকম একপক্ষীয়ভাবে ভাবার বিপক্ষে তিনি।

ভেতরের চেয়ে বাইরে ভালো

অনেক বিশেষজ্ঞ কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে এখনো কিছুই জানেন না। . কেলি মিচেলসন বলেন, অনেক গবেষণা বলছে বাইরে থাকলে যেহেতু আপনি মাস্ক পরে থাকেন এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলেন তাই আপনার সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

আবার বাইরের যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আছে তারতম্য। বাইরে একসঙ্গে খাওয়ার ক্ষেত্রে একই পাত্র চামচ অনেকেই ব্যবহার করে। এমন আয়োজন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাফেরার চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

মেডিকেল সোসিওলজিস্ট প্যাট্রিসিয়া রিয়েকারের মতে, অনেকের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার চেয়ে একজনের সঙ্গে অন্যজনের মিলিত হওয়া ভালো।

বিশ্বস্ততা গুরুত্বপূর্ণ

রিয়েকার বলেন, তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে স্বস্তি বোধ করেন। কারণ তারা দুজনই সামাজিক দূরত্বের বিধিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। আস্থা কিংবা বিশ্বাসটাই হচ্ছে আসল। কারণ মুহূর্তে কারো সঙ্গে দেখা করার অর্থ হচ্ছে আপনি ভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সব সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।

তবে রিয়েকার বলেন, যদি আপনি কাউকে বিশ্বাস করেন তার পরও যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদে করা যাবে না, ততক্ষণ সাক্ষাৎ করা ঠিক নয়। টেস্টের ফল শতভাগ নিশ্চিত না হলেও উভয় পক্ষকে দেখা করার আগে টেস্ট করে নিতে হবে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে

কভিড-১৯ সব জায়গায় একইভাবে ছড়ায় না। এখন আপনি যদি সামাজিক মেলামেশা করতে চান, তবে আপনাকে জনস্বাস্থ্য বিধি এবং আপনার এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় করোনাভাইরাস অনেক দ্রুত ছড়াতে পারে। সেখানে নিরাপদে মেলামেশা অসম্ভব। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা খুব জরুরি। কারণ সামাজিক দূরত্ব সবার ভালোর জন্য মেনে চলতে হয়। এখানে আপনাকে বিবেচনা করতে হবে সামগ্রিক কল্যাণের বিষয়টা।

টাইম ম্যাগাজিন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন