সচেতনতায় করোনা জয় করতে চায় সরকার

তানিম আহমেদ

সাধারণ ছুটিকে দীর্ঘায়িত না করে স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাসকে মোকাবেলার পথে হাঁটছে সরকার। এজন্য শর্তসাপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা, অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, যেহেতু ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেকটা নিরুপায় হয়ে সরকার লকডাউনের বিকল্প এসব উপায় খুঁজে বের করেছে।

ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের এই মহামারী সহসা দূর হবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। যতদিন না কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হচ্ছে, ততদিন করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

দেশে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। তা চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। তবে এরই মধ্যে সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা, সীমিত আকারে চালু ছিল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোও। ঈদের আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের পর অনুমেয় ছিল শর্তসাপেক্ষে সাধারণ ছুটি বাড়ানোর বিষয়টিও।

সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, লকডাউন বা সাধারণ ছুটি দিয়ে করোনাভাইরাসের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। সম্ভব হচ্ছে না মানুষকেও আটকে রাখা। বিশ্বের অন্য দেশগুলোও এখন লকডাউনের বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। উন্নত দেশগুলোও অর্থনীতির হুমকির কথা ভাবতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এখনো কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। ফলে এই দুর্যোগ শিগগিরই কেটে যাচ্ছে না। পরিস্থিতিতে সরকারকে করোনা মোকাবেলায় নতুন কিছু ভাবতে হচ্ছে। ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এর ভয়াবহতা কমবেশি থাকবে। ততদিন মানুষকে ঘরে বসিয়ে রাখা যাবে না। ফলে সরকারকে ভাবতে হচ্ছে বিকল্প উপায়। আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মানা, সতর্কতা অবলম্বন করে মানুষকে চলতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঙ্গরোধ করে রাখা অব্যাহত থাকবে। পুষ্টিমান নিশ্চিত করে খাবার গ্রহণের বিষয়ও প্রচার করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের অর্থনীতির কথাও ভাবতে হবে। অনির্দিষ্ট সময় ধরে লকডাউন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখলে ধ্বংস হয়ে যাবে দেশের অর্থনীতি। ঝুঁকি থাকলেও অর্থনীতির কথা, জীবিকার কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে সবকিছু খুলে দেয়ার চিন্তা করতে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারপ্রধান করোনা মেকাবেলায় কী করা যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবছেন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কী করছে, কী ভাবছে এসবও পর্যালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত -সংক্রান্ত প্রতিবেদন, সাময়িকী, গবেষকদের গবেষণার অগ্রগতি সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ ছুটি অব্যাহত রেখে মানুষকে ঘরে আটকে রেখে আসলে সে অর্থে সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতনতা, সতর্কতা অবলম্বন করে মানুষকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায়, স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী। অর্থনীতিও বাঁচাতে হবে, বাঁচাতে হবে মানুষকেও। দুটি বিষয় বিবেচনা করেই করোনা মোকাবেলার পথ ভাবছে সরকার।

তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক . হাছান মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন মাসের পর মাস বন্ধ করে একটি দেশ চলতে পারে না। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মাসের পর মাস বন্ধ রেখে কোনো দেশ টিকে থাকতে পারে না। সে কারণে উন্নত দেশগুলোয়ও ধীরে ধীরে নানা কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়েছে, মানুষ কাজে ফিরে গেছে। আমাদেরও ধীরে ধীরে সেই কাজটি করতে হবে। তবে মাথায় রাখতে হবে, সেই কাজটি করতে গিয়ে আমরা যেন আবার জনসমাগম না করি এবং শারীরিক দূরত্বটা বজায় রাখি। কর্মকাণ্ড শুরু হলেও আমাদের অবশ্যই সচেতন থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজকর্মগুলো করতে হবে। না হয় আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে পারব না। মনে রাখতে হবে, আমার সুরক্ষা আমার হাতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন