লকডাউনের ধাক্কায় ভারতে কয়লা উত্তোলনে ধস

এক মাসে উত্তোলন কমল ১৬.৫%

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে ভারতে দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলছে। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত দেশটির বেশির ভাগ আর্থিক শিল্প খাতের কার্যক্রম সময়ে কার্যত স্থগিত রয়েছে। এতে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে কমে গেছে। এদিকে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় কয়লার মজুদ বেড়েছে। ফলে খাতটিতে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতিতে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন কমিয়ে দিয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস এপ্রিলে দেশটির খনিগুলো থেকে কয়লার উত্তোলন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক শতাংশ কমে গেছে। খবর ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস ইকোনমিক টাইসম।

ভারতে প্রতি বছরের এপ্রিলে নতুন অর্থবছর শুরু হয়, যা শেষ হয় পরের বছরের মার্চে। দেশটির সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (এপ্রিলে) ভারতের খনিগুলো থেকে মোট কোটি ৬৫ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৬ দশমিক শতাংশ কম।

সময়ে ভারতের রাষ্টায়ত্ত এবং বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা উত্তোলন রিফাইনারি কোম্পানি কোল ইন্ডিয়ার উত্তোলন দাঁড়িয়েছে কোটি লাখ টনে, আগের অর্থবছরের এপ্রিলের তুলনায় যা ১১ শতাংশ কম। এপ্রিলে ভারতের সামগ্রিক কয়লা উত্তোলন হ্রাসের পেছনে কোল ইন্ডিয়ার উত্তোলন হ্রাস মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া সময়ে দেশটির অন্যতম কয়লা উত্তোলন কোম্পানি এসসিসিএলের উত্তোলন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ কমে কোম্পানিটি এপ্রিলে মোট ৩০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করেছে।

কয়লা খনিজে সমৃৃদ্ধ হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে ভারত প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রচুর কয়লা আমদানি করে। গত বছর পণ্যটির শীর্ষ আমদানিকারক দেশের তালিকায় জাপানের পরই ভারতের অবস্থান। পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি দ্রুততর করতে আমদানি কমিয়ে কয়লায় স্বনির্ভর হওয়ার পরিকল্পনা করছে দেশটি। লক্ষ্যে ভারত সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও বিদায়ী অর্থবছরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলনে মন্দা ভাব বজায় থাকতে দেখা গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের খনিগুলো থেকে সব মিলিয়ে ৬০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ৬০ লাখ টন। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছরে দেশটির কয়লা উত্তোলন কমেছে ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টন। কোল ইন্ডিয়ার উত্তোলন হ্রাস এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে।

বিদায়ী অর্থবছরে ভারতের কোল ইন্ডিয়া কোম্পানিটির কয়লা উত্তোলন কমেছে আগের অর্থবছরের তুলনায় দশমিক শতাংশ। অর্থবছরের শুরুর দিকে ভারি মৌসুমি বৃষ্টিপাতে কোম্পানিটির খনিজ উত্তোলন কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হয়, যা পণ্যটির উত্তোলন হ্রাসের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া কোম্পানিটির মালিকানাধীন কয়েকটি বৃহৎ খনিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কয়েকটি কর্মচারী ইউনিয়নের ধর্মঘটও এর পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

তবে চলতি অর্থবছরে কয়লার উত্তোলন রেকর্ড বাড়ার প্রত্যাশা করছে ভারত। দেশটির কয়লা খনিজ বিষয়ক সচিব অনিল জৈন বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে কয়লার উত্তোলন বেড়ে ৭০ কোটি টনে উন্নীত হতে পারে। রেকর্ড উত্তোলন বৃদ্ধি পণ্যটির আমদানিনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। অনিল জৈন বলেন, উত্তোলন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কয়লা আমদানিনির্ভরতা কমাতে সক্ষম হতে পারবে দেশটি। বর্তমানে বছরপ্রতি গড়ে সাড়ে ২৩ কোটি টন কয়লা আমদানি করে ভারত।

কয়লায় স্বনির্ভর হতে ২০২৪ সালের মধ্যে কোল ইন্ডিয়ার বার্ষিক উত্তোলন বাড়িয়ে গড়ে ১০০ কোটি টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এছাড়া লক্ষ্য পূরণে এবার থেকে কয়লা খাতে উদারীকরণ নীতির পথে হাঁটছে দেশটি। দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সম্প্রতি জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি কয়লা রয়েছে এমন দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান তৃতীয়। তা সত্ত্বেও ভারতকে পণ্যটি আমদানি করতে হচ্ছে। সে কারণেই এবার থেকে কয়লার ব্লকের ক্ষেত্রে উদারীকরণের পথ বেছে নিয়েছে দেশটি। বাণিজ্যিকভাবে কয়লা খননের অনুমতি দেবে ভারত সরকার। প্রথমে ৫০টি কয়লা ব্লককে নিলাম করবে সরকার। পরবর্তীকালে কয়লা উত্তোলন সহজীকরণ মজুদ বৃদ্ধাির লক্ষ্যে ৫০ হাজার কোটি রুপির অকাঠামোগত বিনিয়োগ করবে দেশটির সরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন