নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য। বর্তমানে কভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর হার সেখানেই সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় দেশটির সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করলেও উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে উন্নতির বিষয়ে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না। এ কারণে চলতি মাসে দেশটিতে ব্যবসায় আস্থা সূচক ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার সময়কার অবস্থানে নেমে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ।
যুক্তরাজ্যে এ সংকটকালীন ব্যবসায়ীদের আস্থার সূচক নিরূপণে একটি জরিপ চালিয়েছে লয়েডস ব্যাংক। গতকাল এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, অর্থনীতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের আশাবাদ ও কর্মী নিয়োগের মনোভাব দুটোই মে মাসে কমেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতি ১০টি প্রতিষ্ঠানের চারটির বেশি বলেছে, তারা আগামী ১২ মাসের মধ্যে কর্মী সংখ্যা কমানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। আর ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা কর্মীদের বেতন আটকে যাওয়ার আশঙ্কা করছে।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কর্তৃক লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণার প্রভাব এ জরিপে আংশিকভাবে পড়েছে। কারণ জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে ১ থেকে ১৮ মের মধ্যে। আর প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন ১০ মে।
ওই ঘোষণায় বরিস জনসন ধাপে ধাপে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানান। জনগণকে বাড়িতে তৈরি কাপড়ের মাস্ক পরা এবং গণপরিবহন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কারখানা পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হবে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাও ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে খুব একটা আশাবাদী করে তুলতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ হলো করোনা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি না হওয়া। বৃহস্পতিবারও দেশটিতে ১ হাজার ৮৭৭ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যুর হারে দেশটি সবার আগে চলে এসেছে। তাই বিধিনিষেধ শিথিল করলেও আদতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে খুব একটা উন্নতি হয়নি সেখানে।
লয়েডসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হান-জু হো সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ শিথিলের প্রক্রিয়া শুরু হলেও বাণিজ্যের পরিবেশ এখনো বেশির ভাগ কোম্পানির জন্য কঠিনই রয়েছে। তবে বিধিনিষেধ আরো শিথিল হলে আরো বেশিসংখ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারীতে সঠিক সময়ে কার্যকর নীতি গ্রহণের অভাব ও তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার ব্যর্থতার কারণেই কম জনসংখ্যার বিপরীতে যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে। মূলত প্রাদুর্ভাব শুরুর দিকে করোনার ভয়াবহতা জনগণকে সঠিকভাবে বোঝানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল যুক্তরাজ্য সরকার। নরওয়ে, ফ্রান্সের মতো ইউরোপের অন্যান্য দেশ যখন লকডাউন দিয়ে মানুষকে ঘরবন্দি করে ফেলেছিল, তখনও জনসন প্রশাসন মহামারীকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি।
