চীনের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। গতকাল ভারতের একজন সরকারি কর্মকর্তা এ কথা বলেছেন। এদিকে ট্রাম্প বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখালেও ভারত ও চীনের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে তৃতীয় কোনো পক্ষের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বেইজিং। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি লাদাখ ও সিকিম সীমান্তে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। সেখানে উভয় দেশের সেনারা একে অপরের সঙ্গে কয়েকদফা হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন। দেশ দুটি নিজ নিজ সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ভারত ও চীনের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ চলছে। দুই দেশেরই ১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। দুই দেশেরই খুব শক্তিশালী সেনাবাহিনী রয়েছে। এ বিরোধে ভারত খুশি নয়। হয়তো চীনও খুশি নয়। আমি আপনাদের জানাতে চাই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। চীনের সঙ্গে যা কিছু চলছে, তা নিয়ে তিনি মানসিকভাবে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই।’
কিন্তু ট্রাম্পের এ বক্তব্যে অবাক হয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে গত দু-একদিনে কোনো কথা হয়নি। তাদের মধ্যে সর্বশেষ কথা হয়েছিল গত ৪ এপ্রিল। সে কথোপকথনের বিষয়বস্তু ছিল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন।
এর আগে টুইটারে এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভারত ও চীন চাইলে তাদের মধ্যকার বাড়তে থাকা সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতা করতে রাজি আছে। এ প্রথম ট্রাম্প ভারত-চীন কূটনীতিতে নিজেকে জড়ালেন।
ট্রাম্পের এ প্রস্তাবের বিষয়ে ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিষয় পরিষ্কার করছে যে আমরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় কূটনৈতিক উপায়ে চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছি।’
এদিকে ট্রাম্প মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখালেও ভারত ও চীনের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে তৃতীয় কোনো পক্ষের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বেইজিং। গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতার প্রস্তাব উড়িয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে লিজিয়ান বলেন, চীন-ভারতের সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে তৃতীয় কোনো পক্ষের প্রয়োজন নেই। এর আগে গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতেও সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব অনেকদিনের। ১৯৬২ সালে এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে এক দফায় যুদ্ধ হয়ে গেলেও বিরোধের মীমাংসা হয়নি। বরং মাঝেমধ্যেই দেশ দুটির সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
সামরিক পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, লাইন অব কন্ট্রোলের লাদাখ সেক্টরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরির পেছনে সম্ভাব্য কারণ হলো সীমান্তের কাছেই ভারতের নতুন রানওয়ে ও সড়ক নির্মাণের চেষ্টা। বিরোধ নিরসনের আলোচনায় বেইজিং নয়াদিল্লির কাছে এসব নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে।