আলোকপাত

বাংলাদেশে নন-কোভিড রোগীরা কি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে?

ড. নাসরিন সুলতানা

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারীতে সারা বিশ্বে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে লাখ ৬২ হাজারের বেশি মৃত্যুবরণ করেছে এবং প্রায় ২৬ লাখ আরোগ্য  লাভ করেছে। বাংলাদেশে পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৫৬০ জন। গত মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে সরকার করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য নির্ধারণ করে দেয়। পরবর্তীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আরো কয়েকটি হাসপাতালকে কভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে পর্যায়ক্রমে ৩০ মে পর্যন্ত  দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ক্রমে কভিড রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান কভিড-১৯ মোকাবেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে নন-কভিড রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসাসহ জরুরি চিকিৎসা যথাযথ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। অবস্থায় নন-কভিড রোগীর স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, শিশুরোগ, বিভিন্ন  দীর্ঘমেয়াদি রোগ (ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হার্টের রোগী, কিডনি রোগী, প্যারালাইজড রোগী), বার্ধক্যজনিত রোগ এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবার কী অবস্থা, ধরনের নন-কভিড রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে কিনা, তা পর্যালোচনা করে দেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিক পরিমাণ স্বাস্থ্যসেবাদানকারী  প্রতিষ্ঠান করোনা শনাক্তকরণ চিকিৎসায় নিয়োজিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৯টি ল্যাবে করোনা রোগের পরীক্ষা চলছে, যার মধ্যে ২৫টি ঢাকায় এবং ২৪টি ঢাকার বাইরে। গত   মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস রিলিজ অনুযায়ী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, মিরপুর লালকুঠি হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ দেশের প্রায় ৩৪টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষভাবে করোনা মোকাবেলায় নিয়োজিত হয়। অথচ এই হাসপাতালগুলোয়  করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হতো। ফলে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য হাসপাতালের সংখ্যা হঠাৎ হ্রাস পাওয়ায় চিকিৎসা গ্রহণের অভিগম্যতা কমে যায়। তাছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিদ্যমান প্রায় ৫০ হাজার শয্যা থেকে প্রায় সাত হাজার শয্যাকে (৬৯০৯) কভিড-১৯ আইসোলেশন বেড হিসেবে প্রস্তুত করা হয় ( মে, ২০২০, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) করোনা মহামারী শুরুর আগে এই সাত হাজার শয্যা অন্যান্য রোগের (নন-কভিড রোগের) চিকিৎসার জন্য ব্যবহূত হতো।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নার্সিং অধিদপ্তরের অধীনে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সাপোর্টিং স্টাফ যে পরিমাণ (১৯৩,৬৮৭টি) থাকার কথা, তার প্রায় এক-পঞ্চমাংশের অধিক পদে (৪২,১৫৫টিজনবল ঘাটতি রয়েছে (স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, এইচআরএইচ ডাটা শিট-২০১৯) অন্যদিকে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য গ্লোবাল বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী যে পরিমাণ  চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর দরকারসেক্ষেত্রে ৪৫ জনের বিপরীতে বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র নয়জন। আবার নন-কভিড ইউনিটের জনবল কভিড ইউনিটে স্থানান্তর হওয়ায় সাধারণ রোগের চিকিৎসায় জনবলের আরো ঘাটতি দেখা দেয়। যদিও সম্প্রতি  করোনা মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে সরকার দুই হাজার ডাক্তার এবং পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি পূরণে তা খুবই অপ্রতুল।

বর্তমানে বাংলাদেশে দুই হাজারের অধিক চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী সাপোর্টিং স্টাফ চিকিৎসা দিতে গিয়ে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের অনেকেই নন-কভিড হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। আক্রান্ত এই চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না। শুধু যে এই দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিতে পারছেন না তা নয়, বরং এর প্রভাব আরো ব্যাপক। কারণ চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হয়। এই টিমের একজন আক্রান্ত হলে পুরো টিমের সেবাদান ব্যাহত হয়। যেমন একটা হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান বা অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট যদি আক্রান্ত হন, তাহলে পুরো টিমকে কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়। একই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের একাধিক চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্তের ফলে হাসপাতালগুলোর নির্দিষ্ট কোনো ইউনিট (যেমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট), আবার কোথাও পুরো হাসপাতাল লকডাউন করে দেয়া হয়েছে (যেমন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) এতে ওই হাসপাতালগুলো কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে সাধারণ রোগীদের স্বাভাবিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বল্পমেয়াদের জন্য সাধারণ চিকিৎসা সীমিত রাখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদের জন্য সীমিত রাখলে প্রাণহানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা প্রায় লাখ ৩৭ হাজার, যার মধ্যে ৬৪ শতাংশ শয্যা বেসরকারি হাসপাতালের। অথচ করোনা যুদ্ধে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অংশগ্রহণ  উল্লেখযোগ্য নয়। শুধু তাই নয়, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক চেম্বার তাদের চিকিৎসা প্রদান সীমিত করে দিয়েছে বা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সাধারণ রোগীরা বেসরকারি খাতের চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের দেশের আর্থিকভাবে সচ্ছল বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরের হাসপাতালগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। করোনা বৈশ্বিক মহামারী হওয়ায় বর্তমানে তাদের বিদেশ গমনের  সুযোগ নেই, ফলে তারাও সাধারণ রোগী হিসেবে চিকিৎসা গ্রহণ করছে, যা চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।

পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে স্বাস্থ্য খাতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক থেকে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী পর্যন্ত প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে করোনা চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। কেউবা করোনা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ করোনা মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণ জনসচেতনতা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ আবার করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে তুলনামূলকভাবে কম আসছেন। মোট কথা, স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আপাতত করোনা মোকাবেলার দিকে। ফলে নন-কভিড রোগীর চিকিৎসাপ্রাপ্তি হুমকির মুখে রয়েছে। তদুপরি রোগীদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ কমাতে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমেও শুধু জরুরি অবস্থা ব্যতীত অন্যান্য রোগীকে হাসপাতালে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে নন-কভিড রোগীর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসাসেবাপ্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।

যদিও সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে কভিড নিবেদিত হাসপাতালগুলোয় যথেষ্ট পরিমাণ পিপিই বিতরণ করছে, তার পরও নন-কভিড হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত এবং যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর অভাব রয়েছে। নন-কভিড হাসপাতালে কভিডের লক্ষণ সম্পর্কিত তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নেয়ায় চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকরা অনেক সময় সাধারণ রোগীদের যথাযথভাবে চিকিৎসা দিতে অপারগ।

এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে নন-করোনা রোগীদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন (যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হার্টের রোগী, কিডনি রোগী, প্যারালাইজড রোগী) এবং গর্ভবতী মা শিশুদের সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা লক্ষ করেছি যে মানুষ হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। সংক্রমণ শুরুর দিকে ঢাকার একজন মুক্তিযোদ্ধা চারটি হাসপাতাল ঘুরেও কোনো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র চিকিৎসার জন্য কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুবরণ করেন, যে বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের নয় মাসের একজন গর্ভবতী মা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে আটোরিকশাতেই মারা গেছেন (দৈনিক সমকাল ২২ এপ্রিল, অনলাইন ভার্সন) সাতক্ষীরায় কোনো হাসপাতাল ভর্তি না নেয়ার কারণে এক গর্ভবতী মা ভ্যানেই সন্তান প্রসব করেছেন ( মে, সময় টিভি) মে কিডনির জটিলতায় অসুস্থ বাংলাদেশ সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব ঢাকার প্রায় সব কয়টি নামিদামি হাসপাতালে ঘুরেও যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর মৃত্যুবরণ করেন। এক মাস ২৪ দিন বয়সী সুমা নামের কেরানীগঞ্জের এক শিশু ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে ঘোরার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে (আইসিইউ সুবিধা) মৃত্যুবরণ করে (১৯ মে, দৈনিক প্রথম আলো) রকম আরো অনেক খবর প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এসব ঘটনা করোনাকালে নন-কভিড রোগীদের খুব বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে।

গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা যথেষ্ট ছিল। বছর শুধু জানুয়ারিতেই প্রায় ২০০ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, যা গত বছরের দ্বিগুণের বেশি। তদুপরি বছর বৃষ্টির মৌসুম তুলনামূলক আগে শুরু হয়েছে। করোনা চলাকালে এবারো যদি গত বছরের ন্যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্র হয় এবং আমাদের যদি পূর্বপ্রস্তুতি না থাকে, তাহলে আমরা, বিশেষ করে ঢাকাবাসী হয়তোবা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ব।

করোনা মহামারী চলাকালীন নন-কভিড বা সাধারণ রোগীর চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে সরকার, স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য স্বল্পমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করাও প্রয়োজন। যদিও সরকার এরই মধ্যে দ্রুততম সময়ে সাত হাজারের মতো জনবল নিয়োগ দিয়েছে, তার পরও নিয়োগের এই পরিমাণ আরো বাড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্য খাতের জনবলের সংকট কমিয়ে আনা দরকার। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্ট জনবলকে মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোর মতো হাসপাতালে আসা যেকোনো রোগীকে টিটিআইয়ের (Testing, Tracing & Isolaton) মাধ্যমে কভিড নন-কভিড রোগী আলাদা করে সবার চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া ভিডিও কলিং স্বাস্থ্যসেবা কার্যকরভাবে সহজলভ্য করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হবে। ঢাকায় করোনার সংক্রমণ বেশি হওয়ায় বড় দু-একটা হাসপাতালকে শুধু নন-কভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। পাশাপাশি হাসপাতালের প্রবেশপথে রোগীদের জন্য মাস্ক, গ্লাভস হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তদুপরি করোনাকালীন স্বল্পমেয়াদের জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সরকারি নজরদারি বাড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে। অন্যদিকে করোনার সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সাধারণ রোগীকে হাসপাতালে যাওয়ার সময় সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে এবং চিকিৎসা নেয়ার সময় কভিড-১৯-এর লক্ষণ সম্পর্কিত তথ্য গোপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জনগণকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।

এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো একটার পর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। যখন হঠাৎ করে এমন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে অন্যান্য রোগীর চিকিৎসা কম গুরুত্ব পায়। সেজন্য মহামারী মোকাবেলায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এজন্য বিভাগ বা জেলা পর্যায়ে মহামারী হাসপাতাল তৈরি করা যায় কিনা, সে বিষয়ে গবেষণানির্ভর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

বাংলাদেশে করোনা রোগের বিস্তারের ধরন, জনগণের সচেতনতা, সরকার কর্তৃক আরোপিত বিধি-নিষেধ মানার বিষয়ে জনগণের সহযোগিতার ধরন দেখে মনে হয় করোনার প্রভাব বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানীর মতে, করোনা নিয়ন্ত্রণে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। অবস্থায় নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবার সুযোগ চিকিৎসা ব্যবস্থার মান সার্বিকভাবে উন্নয়ন করা না হলে নন-কভিড রোগীদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার ব্যাপক শঙ্কা রয়েছে।

২৭ মে সরকার দেশের সব সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে কভিড নন-কভিড রোগীকে ভিন্ন ইউনিটে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। অবশ্যই এটি সময়োপযোগী উদ্যোগ, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তদুপরি ৩১ মে থেকে দেশে আর সাধারণ ছুটি থাকছে না। সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলবে। সীমিত পরিসরের আকার কতটা সীমিত এবং কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, তা বাস্তবে দেখা যাবে। তবে এটা স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে যে জুন থেকে কভিড সংক্রমণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে কভিড এবং নন-কভিড উভয় রোগীদের প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা আরো ঝুঁকির মুখে পড়বে। কাজেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, নীতিনির্ধারক, জনগণ সবাই যদি স্ব-স্ব অবস্থান থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে একদিকে যেমন আমরা করোনা মোকাবেলায় সক্ষম হব, অন্যদিকে করোনাকালীন নন-কভিড রোগীদের প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

 

. নাসরিন সুলতানা: অধ্যাপক পরিচালক

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected] 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন