অভিমত

কার্যকারণবাদে করোনাসিদ্ধি

সৈয়দ রাইয়ান আমীর

কভিড-১৯ মোকাবেলায় এখন সময় এসেছে সামষ্টিকভাবে কাজ করার। বিশ্বে কোনো একক শক্তি এই বিপদের সঙ্গে লড়াই করে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করবে ভাবনা বেশ অমূলক বলে মনে হচ্ছে। কেননা বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষকে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রাখা যাবে না কোনোভাবেই। তাই প্রয়োজন সংহতির, যা সাহায্য করবে থেকে মুক্তি তার পরের অন্যান্য সংকট থেকে উত্তরণে। কার্যকারণবাদ নব্য কার্যকারণবাদ বেশ আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে ধরনের সংহতিকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে। কাঠামো সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রায়োগিক উদাহরণ দেখে নিলে সুবিধে হবে পরবর্তী তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে এর সম্পর্ক নিরূপণ করতে। তাতে করে আশা করা যায় যে বেশ একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে সংকট মোকাবেলায় এই তত্ত্বের ভূমিকার ওপর কেন গুরুত্বারোপ করা উচিত সে সম্পর্কে।

কার্যকরণবাদের তাত্ত্বিক হিসেবে পাওয়া যায় ডেভিড মিত্রানিকে। এখানে মূলত রাষ্ট্র রাষ্ট্রের সদস্যদের ক্রিয়াশীলতার ওপর জোর দেয়া হয়। কার্যকরণবাদের মৌলিক অনুমিতিগুলো বাস্তববাদ উদারবাদের কিছু বিষয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে এসেছে। অবশ্যই সেখানে কিছু সুনির্দিষ্টতা রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে অভিনবত্ব মৌলিকতা। কার্যকরণবাদে বলা হয় উন্নয়ন, সহযোগিতার কথা; যা রাষ্ট্রীয় ব্যষ্টিক উভয় পর্যায়েই হতে পারে। জেমস ডগহারটির মতে, কার্যকারণবাদ সংহতি মিশ্রণ তত্ত্ব বোঝার জন্য ভিত্তি হিসেবে বেশ সহায়ক।

রাষ্ট্র তার জাতীয় পর্যায় থেকে আরম্ভ করে আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ইস্যুতে নানা সমস্যার মুুখে পড়ে, যেগুলো কিছু রাষ্ট্র বিচ্ছিন্নভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হলেও প্রায় ক্ষেত্রেই তুলনামূলক সুবিধার সাহায্যে তার সমাধান অধিক ফলপ্রসূ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ফলে তাদের একটি সহযোগিতামূলক সিস্টেমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেখানে বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা একত্রে কাজ করার সুযোগ পান। যেখান থেকে সামগ্রিকভাবে সবাই লাভবান হয়।

রবার্ট জে লিবারের মতে, পরিবহন, স্বাস্থ্য কল্যাণসংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা, বৈজ্ঞানিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, বাণিজ্য বাজার উৎপাদনের মতো মৌলিক ক্রিয়াকলাপের প্রয়োজনে যদি আন্তর্জাতিক কার্যকলাপ সংগঠিত করা হয়, তবে বিশ্বশান্তিকে সর্বোত্তমরূপে প্রকাশ হতে সাহায্য করা যেতে পারে।

কার্যকরণবাদীরা বলেন, এসব যৌথ বা সাধারণ স্বার্থের বিষয়টি আসলে স্বাভাবিক প্রকৃতিগত। সে কারণেই সৃষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠন আইনের আওতায় থাকা রাষ্ট্রগুলোর আচরণে এক ধরনের মৌলিক পরিবর্তন দেখা যায়। জাতিরাষ্ট্রের অবস্থান থেকে ক্রিয়াশীল জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। যেখানে রাষ্ট্রগুলো একে অন্যের প্রতি অনেকটা আনুগত্যমূলক (সাধারণ স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে) আচরণ করে।

কার্ল ডব্লিউ ডয়েশের মতে, রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একে অন্যের থেকে আলাদা এবং বৈশিষ্ট্যগুলোও আবার বিভিন্ন নিয়ামকের দ্বারা পৃথকভাবে চিহ্নিত থাকে অথবা মিশ্র প্রকৃতির হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে উদ্ভূত সমস্যায় রাষ্ট্রগুলো নিজ স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা তা জোটবদ্ধভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করে।

কার্যকরণবাদে আরো ধারণা করা হয় যে রাষ্ট্রগুলোর সাধারণ প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের জনগণ রাষ্ট্রীয় সীমার বাইরেও এক ধরনের ক্রিয়াশীলতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, কার্যকরণবাদ মনে করে, ফেডারেশন ব্যবস্থা এই সাধারণ প্রয়োজন মেটাতে খুব বেশি কার্যকর নয়।

এখানে হাই পলিটিক্যাল বিষয়ের চেয়ে সম্পদ, উন্নতি বা কল্যাণমূলক ইস্যু, যেগুলো অপেক্ষাকৃত নমনীয়, সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে কার্যকরণবাদে বৈশ্বিক সংহতির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ তারা মনে করেন, আঞ্চলিক বিভিন্ন সংগঠন একসময় বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হতে পারে; যা শান্তি সহযোগিতা সৃষ্টিতে সহায়ক না- হতে পারে।

কার্যকরণবাদের ধারণাকে কিছুটা পরিবর্তিতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে নব্য কার্যকরণবাদের অবতারণা করেন আর্নেস্ট হ্যাস জোসেফ নাই। 

তাত্ত্বিকভাবে নব্য কার্যকরণবাদ সামনে আসে ১৯৫৮ সালে, যখন European Coal and Steel Community বা ইউরোপীয় কয়লা ইস্পাত সম্প্রদায় গঠিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটি স্থিতিশীল ইউরোপ তৈরির জন্য ফ্রান্স জার্মানির মধ্যে পুনর্মিলন ছিল অন্যতম প্রয়োজনীয় নিয়ামক।

যুদ্ধের পরে ফ্রান্স-জার্মান পুনর্মিলনের অন্যতম প্রধান বাধা ছিল কয়লা ইস্পাত উৎপাদনের প্রশ্ন। কয়লা ইস্পাত উন্নত দেশগুলোর জন্য দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ছিল; একটি সফল অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কয়লা ইউরোপের প্রাথমিক জ্বালানি উৎস ছিল, যা মূলত জ্বালানির প্রায় ৭০ শতাংশ ছিল। ইস্পাত শিল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণে কয়লার প্রয়োজন পড়ত। উভয়ই আবার অস্ত্র তৈরির জন্যও ছিল গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কয়লা খনি ইস্পাত উৎপাদনের সর্বাধিক প্রাচুর্য ছিল পশ্চিম জার্মানির দুটি অঞ্চলে: রুহর উপত্যকা সারল্যান্ড। মিত্রশক্তি পশ্চিম জার্মানি থেকে সারল্যান্ডকে বিচ্ছিন্ন করে এটিকে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিণত করে। রুহর উপত্যকায় তারা জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সীমাবদ্ধ করার প্রয়াসে কয়লা ইস্পাতের উৎপাদন, মালিকানা বিক্রয়ের ওপর বিধিনিষেধ রেখেছিল। জার্মানির প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম নেদারল্যান্ডসের সুরক্ষা নিশ্চিতে রুহর ভ্যালির কয়লা ইস্পাত উৎপাদনও সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল যেন সম্পদ জার্মানির সেনাবাহিনী পুনরায় গঠন করতে ব্যবহূত হতে না পারে।

ফ্রান্স রুহর উপত্যকায় কয়লা ইস্পাতকে নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল এবং সারল্যান্ডকে পশ্চিম জার্মানি থেকে স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে বেশ তত্পর ছিল। ফরাসি সরকার বেশ উদ্বিগ্ন ছিল ব্যাপারে যে পশ্চিম জার্মানি তার বৃহৎ কয়লা ব্যবহার করতে পারে ফ্রান্সকে আবার আক্রমণ করার জন্য। ১৯৪৯ সালে নির্বাচিত চ্যান্সেলর কনরাড অ্যাডেনোয়ারের নেতৃত্বে পশ্চিম জার্মানরা চাইত যে সারল্যান্ডকে পুনরায় জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তাছাড়া জার্মান ভারী শিল্পের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও তাদের আপত্তি ছিল। কয়লা ইস্পাত নিয়ে ফ্রাংকো-জার্মানবিরোধ অব্যাহত ছিল। দুই সাবেক বিরোধশক্তির মধ্যে পুনর্মিলন প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল।

কয়লা ইস্পাত সমস্যার সমাধান এবং ফ্রান্স জার্মানির মধ্যে সংহতির মূল কারণটি ছিল ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট শুম্যানের শুম্যান পরিকল্পনা। ১৯৫০ সালের মে শুম্যান পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছিল। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে কয়লা ইস্পাত উৎপাদন একটি আধিরাষ্ট্রিক কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকা উচিত। ঘোষণার কিছু পরে ইউরোপীয় কয়লা ইস্পাত সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু হয়। ইউরোপীয় কয়লা ইস্পাত সম্প্রদায় (ইসিএসসি) ছয় ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস লুক্সেমবার্গের (বেনেলাক্স) কয়লা ইস্পাত উত্তোলনে জড়িত ছিল। দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দ্য সিক্স হিসেবে পরিচিত ছিল। সম্মিলিত কয়লা ইস্পাত সংস্থান ফ্রান্স পশ্চিম জার্মানির মধ্যে বিরোধের হুমকিকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করে। ইসিএসসি ১৯৫২ সালে বাস্তব কাঠামো লাভ করে।

শুম্যান পরিকল্পনার আরেক অংশীদার ছিলেন জাঁ মনেটফরাসি সরকারের একজন আমলা। মনেট দুই বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালে লিগ অব নেশনসে কাজ করেছিলেন এবং ইউরোপে একটি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। মনেট ইসিএসসির প্রথম সভাপতিও ছিলেন। মনেট শুম্যানের পক্ষে ইসিএসসি ছিল ফেডারেল ইউরোপ তৈরির প্রথম পদক্ষেপ।

কার্যকারণবাদের সঙ্গে নব্য কার্যকারণবাদের মূল পার্থক্য হলো সংহতি বা সহযোগিতার পরিসরের জায়গাটিতে। কার্যকারণবাদে যেখানে বৈশ্বিক সংহতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়, সেখানে নব্য কার্যকারণবাদ গুরুত্ব দেয় আঞ্চলিক সংহতিকে। জেমস ডগহার্টি রবার্ট এল ফল্টজগ্রাফ মনে করেন, যে নব্য কার্যকারণবাদ তত্ত্বের বেশির ভাগ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশেষত যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত হয়েছে সেগুলো। তারা মনে করেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ফলেই সমন্বিত বা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ইস্যুতে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আর এটিই কাজ আদায়ের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি।

নব্য কার্যকারণবাদ যেসব ইস্যুতে সংহতির কথা উল্লেখ করে, তার অধিকাংশই হয়ে থাকে রাজনৈতিক অর্থনীতির। আর সে কারণেই নব্য কার্যকারণবাদ রাজনীতিকে অগ্রাহ্য করে না। এখানে আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয় সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে।

রবার্ট জে লিবার বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, রাজনৈতিক আনুগত্য অর্থনৈতিক স্বার্থকে অনুসরণ করে এবং নতুন আধিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় একীকরণটি অর্থনৈতিক থেকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে।

একক কর্তৃত্বের অধীনে কয়লা ইস্পাতকে একীভূত করে শুম্যান পরিকল্পনা এটা অন্তত দেখিয়েছিল যে ইউরোপীয় সংহতিকরণ সম্ভবপর একটি আলোচনার বিষয়। সঙ্গে সঙ্গে এটি ফ্রান্স জার্মানির মাঝে বিদ্যমান উত্তেজনা হ্রাস করার পেছনেও ভূমিকা রেখেছিল।

কোরিয়ান যুদ্ধের কারণে (১৯৫০-৫৩) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের পশ্চিম অংশকে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিরক্ষায় কার্যকরী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সক্ষমতা অর্জনের সাহায্যের অংশস্বরূপ পশ্চিম জার্মানিকে আরো বেশি সামরিকভাবে তত্পর করতে চেয়েছিল। অনেক ইউরোপীয় দেশ জার্মান সেনাবাহিনীর পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিরূপ ধারণা পোষণ করত। ১৯৫২ সালে ইসিএসসি হওয়ার পরই একটি ইউরোপীয় সেনাবাহিনী গঠনের জন্য আরো একটি পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়া হয়েছিল। ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সম্প্রদায় (ইডিসি) ফ্রান্স ব্যতীত সব সদস্য রাষ্ট্রের দ্বারা সমর্থিত ছিল। ১৯৫৪ সালে ফরাসি সরকারের ভেটোর কারণে ইডিসি আর আলোচনার টেবিলের বাইরে আসতে পারেনি।

১৯৫৫ সালে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পলহেনরি স্পাক ইউরোপীয় অর্থনীতির সংহতিকরণ সম্পর্কে নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। প্রস্তাব বেনেলাক্স দেশ বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস লুক্সেমবার্গের অর্থনৈতিক সংহতিকরণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর লন্ডনে নির্বাসিত বেনেলাক্স দেশগুলোর নেতারা নেদারল্যান্ডস-বেলজিয়াম-লুক্সেমবার্গ কাস্টমস কনভেনশনে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি তিনটি দেশের অর্থনীতিকে সংহত করার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ামক, যেমন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করাসহ অন্য অনেক কাজে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হয়। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে বেনেলাক্স বলা হয় এবং ১৯৫৮ সালে তিনটি দেশ বেনেলাক্স অর্থনৈতিক ইউনিয়নে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি জনগণ, পণ্য, মূলধন পরিষেবাগুলোর অবাধ চলাচল এবং সামাজিক অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয়ের জন্য সরবরাহ ঠিক রাখবেএমনটাই ধারণা করা হতো। বেনেলাক্স অর্থনৈতিক ইউনিয়নকে একটি মডেল হিসেবে বিবেচনা করে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে ইসিএসসির ছয় সদস্য রাষ্ট্র যেন তাদের অর্থনীতি একীভূত করার জন্য রকম কোনো পদক্ষেপ হাতে নেয়।

১৯৫৫ সালের ১৫ জুন ইসিএসসির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মেসিনা (ইতালি) সম্মেলনে পল হেনরি স্পাককে একটি কমিটির সভাপতিত্ব করার জন্য তোপের মুখে পড়তে হয়, যা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়গুলো (ইইসি) প্রতিষ্ঠার চুক্তির খসড়া সংস্করণ তৈরি করবে। ইইসির লক্ষ্য ছিল ছয় সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সাধারণ বাজার তৈরি করা। কিন্তু স্পাকের কমিটি ফরাসি সরকারের চাপে রাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি সংহত করতে একটি প্রস্তাবও এনেছিল। ইইসি পারমাণবিক শক্তির সংহতিকরণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন (ইউরাটম) ১৯৫৬ সালের মে মাসে ছয় রাষ্ট্রের কাছে জমা দেয়া হয়।

১৯৫৭ সালের ২৫ মার্চ এক বছর আলোচনার পরে রোমে এই ছয় রাষ্ট্র ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি সাধারণত রোম চুক্তি নামে পরিচিত, যা মূলত ইসিএসসির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল। ইইসি ছিল রাজনৈতিক অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় একীকরণের প্রধান বাহন। এত দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনার কারণ হলো, সংহতি যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার তাগিদেই তৈরি হয় তা বোঝানো।

আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় বলে ডেভিড মিত্রানি নব্য কার্যকরণবাদকে Federal Functionalist হিসেবে উল্লেখ করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে গঠন কাঠামো বা বিস্তৃতি, সেটিই আসলে নব্য কার্যকারণবাদকে প্রকৃতরূপে প্রতিফলিত করে।

আঞ্চলিক পারস্পরিক যে সংহতি বা সহযোগিতা, সেগুলো ক্রমে বিস্তৃত হতে থাকে বা ছড়িয়ে পড়ে। আর এই যে বিস্তৃতির বিষয়, তা অনেকটাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেমি অটোমেটিক

নব্য কার্যকারণবাদে বহুত্ববাদকে প্রাধান্য দেয়া হয়, যেখানে মোটামুটি সবার মতকেই বিবেচনা করা হয়।

সংহতি ব্যাখ্যায় সহায়ক অন্যান্য ধারণা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ঐতিহাসিক আলোকপাত বুঝতে সহায়তা করবে কেন কার্যকারণবাদকে বেছে নেয়া হয়েছে সমাধানের একটি পথ হিসেবে। কেননা সহযোগিতার ছড়িয়ে পড়া এবং মূলত রাজনৈতিক অর্থনীতির গুরুত্ব তত্ত্বের কাঠামোর মাঝেই তুলনামূলক বেশি আলোচিত হয়।

বাস্তববাদী তাত্ত্বিকরা মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে ইউরোপীয় সমাজগুলোয় বিধ্বস্ত হওয়া রাষ্ট্রগুলোর মাঝে ইউরোপীয় সংহতিকরণের শিকড় বের করার চেষ্টা করেন এবং এটিও দেখানোর চেষ্টা করেন যে ১৯৪৫ সালের পরে ইউরোপে বিশেষ ভূরাজনৈতিক অবস্থান চিহ্নিত হয়েছে। সংহতিকে পরবর্তীতে চিহ্নিত করা হয় সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধের শক্তি হিসেবে, যা শক্তির রাজনীতি ব্যাখ্যায় বেশ সহায়ক। উদারবাদ সংহতিকরণের দিকে এগোতে আরো অনুকূল অবস্থার জন্ম দেয়। এটি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মনোভাবকেই মূলত প্রতিফলিত করে। বিশ্ববাদ কেন্দ্র প্রান্তের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেয়, যেখানে ইংলিশ স্কুল আন্তর্জাতিক সমাজের ধারণা নিয়ে আসে। কর্মকাণ্ডের আইডেন্টিটি এবং স্বার্থে মনোনিবেশ করাকে গঠনবাদের মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে ধরা হয়, যেখানে স্বার্থের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে সংহতির দিকে এগোনোর প্রস্তাবনা লক্ষণীয়।

প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইন্টিগ্রেশন তত্ত্বগুলো যেমন কার্যকারণবাদ ফেডারেলিজম দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝের সময়কালে বিকাশ শুরু করে। ফেডারেলিজম ধরে নেয় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব এবং এভাবেই একটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র তৈরি করা যায়। ১৯৬০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত নব্য কার্যকারণবাদ বৈজ্ঞানিক নির্ভুলতা নৈর্ব্যক্তিক (ব্যক্তিসত্তাকে ঘটনার প্রভাবের বাইরে রেখে ঘটনা পর্যবেক্ষণ) ধারণার মাধ্যমে অনুমান তৈরির জন্য পরিচিত। উদার আন্তঃসরকারবাদ অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া, আলোচনা জোট গঠন, আপেক্ষিক ক্ষমতার গুরুত্ব এবং জাতীয় নেতাদের ভূমিকার ওপর মনোনিবেশ করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। এটি আন্তঃসরকারি সম্পর্কের বাস্তববাদী কাঠামোর সঙ্গে উদারবাদের অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিষয়টিকে যুক্ত করে, যেখানে রাষ্ট্রশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হয়।

১৯৯০-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত ইউরোপীয় সম্পর্ক অধ্যয়নে নব্য কার্যকারণবাদ উদার আন্তঃসরকারবাদের মধ্যে বিতর্ক প্রাধান্য পেয়েছিল, তবে সেই সময় থেকেই যুক্তিবাদ গঠনবাদের মধ্যে বিভাজনটি সামনে আসে। সময় আরো বোঝা যায় যে সংহতির শুরুতে সরকারের ভূমিকা বেশি থাকলেও তা বাস্তবায়নে আধিরাষ্ট্রিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। 

তুলনামূলক রাজনীতি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ক্ষমতার আনুভূমিক ও উল­ম্ব বিভাগসহ একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাধারণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে, যেখানে এটি ফেডারেল রাজ্যগুলোর রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত মডেলগুলো প্রয়োগ করে বিশেষভাবে গঠিত আইনসভা, নির্বাহী ও আইনসভার বিকাশ ঘটিয়েছে। বহুস্তরের শাসন ব্যবস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইতিহাসে নজিরবিহীন একটি বিশেষ রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস পায়। আন্তর্জাতিক আইন ও ইউরোপীয় আইন মতবাদগুলো আদর্শিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শৃঙ্খলার দৃষ্টিকোণ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সংহতিকরণের একটি বিশেষ ঘটনা, যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি অনন্য, পৃথক রাজনৈতিক ব্যবস্থা।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংহতির আশ্বাসের বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। কেন আন্তর্জাতিকতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো, সে বিষয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। 

চীনের শীর্ষ আইনসভার ১৩তম জাতীয় গণকংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশন সমাপ্ত হওয়ার পর ২৮ মে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেছেন, সাধারণ শত্রু কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মহামারী মোকাবেলায় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এ সহযোগিতার ব্যাপারে বারবার গুরুত্বারোপ করেন।

লি বলেছেন যে চীন ও অন্য অনেক দেশ নভেল করোনাভাইরাসটির উত্পত্তিটি আবিষ্কারের পক্ষে মত দিয়েছে, কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে ভাইরাসটির আদি উৎস অনুসন্ধান মহামারীটিকে আরো ভালোরূপে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারে।

কভিড-১৯ একটি নতুন সংক্রামক রোগ এবং আমরা যা জানি না, তার চেয়ে বড় বিষয়, যেটা আমরা জানি—লি বলেন।

তিনি আরো বলেন, কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সর্বাধিক শক্তিশালী অস্ত্র হলো ভ্যাকসিন, কার্যকর ওষুধ ও শনাক্তকরণ বিকারক এবং চীন তার গবেষণাকে সর্বজনীনভাবে কাজে লাগাবে, যাতে এ ভাইরাসকে পরাস্ত করা যায়।

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ১৫ এপ্রিল বিশ্বের সাত বিলিয়ন লোকের কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এ ভাইরাসের চিকিৎসা ও চিকিৎসা বিকাশের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে সংস্থাটি, যার বেশির ভাগ অর্থ কভিড-১৯-এর ডায়াগনস্টিক টেস্ট, চিকিৎসা ও প্রতিষেধক উন্নয়নে সহায়তা করা এবং বিশ্বব্যাপী সহজলভ্য করার জন্য ব্যবহার হবে। 

দক্ষিণ এশিয়া ও উপসাহারান আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্যও রয়েছে বরাদ্দ এর মাঝে, যাদের নতুন মহামারী মোকাবেলায় সরবরাহ, সরঞ্জাম ও অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। 

জেরোম কিম (ইউএনডিপির নেতৃত্বে এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত সংস্থা আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের (আইভিআই) মহাপরিচালক) বলেন, প্রসারিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় করোনাভাইরাস মহামারীর সমাধান রয়েছে। ‘যখনই একটি বড মহামারী আঘাত হানে, বিশ্বের বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং সরকারগুলো প্রতিষেধক বিকাশের জন্য ছুটে আসে, তবে তাদের প্রচেষ্টা সাধারণত ব্যর্থ হয়ে যায়। কেননা তা শুধু পণ্যকেন্দ্রিক হয়। বেসরকারি সংস্থা ও সরকারসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য। কারণ প্রতিষেধক বিকাশের জন্য প্রচুর পরিমাণে সময় ও মূলধন প্রয়োজন।

আইভিআই প্রতিষেধক বিকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করবে যোগ করে আইভিআই মহাপরিচালক বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় তা সরবরাহে ভূমিকা রাখবেন তারা। ‘আমরা কেবল সংহতির মাধ্যমে কভিড-১৯-কে আটকে দেব’—ডবি­উএইচওর মহাপরিচালক বলেন। ‘রাষ্ট্র, স্বাস্থ্য অংশীদার, প্রস্তুতকারক ও বেসরকারি খাতকে অবশ্যই একত্র হয়ে কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে বিজ্ঞান ও গবেষণার ফলগুলো সবার উপকার করতে পারে।’ 

২৪ এপ্রিল বিশ্বনেতাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-আয়োজক একটি ভার্চুয়াল ইভেন্টে একত্র হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব, এইউ কমিশনের সভাপতি, জি২০ প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, ভিয়েতনাম, কোস্টারিকা, ইতালি, রুয়ান্ডা, নরওয়ে, স্পেন ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রতিনিধিত্ব করেছেন। যুক্তরাজ্যের পক্ষে ছিলেন তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপারডেনস ইনোভেশনস (সিইপিআই), জিএভিআই-ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গে­াবাল ফান্ড, ইউএনআইটিএইড, ওয়েলকাম ট্রাস্ট, ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট মুভমেন্ট (আইএফআরসি), দি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স (আইএফপিএমএ), ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারার নেটওয়ার্ক (ডিসিভিএমএন) ও আন্তর্জাতিক জেনেরিক অ্যান্ড বায়োসিমার মেডিসিন অ্যাসোসিয়েশন (আইজিবিএ) সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় একত্র হওয়ার জন্য। তাদের লক্ষ্য হিসেবে কাজ করে মানুষের দুর্দশা থেকে মুক্ত একটি গ্রহ, যা করোনার ধ্বংসা্তক সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি থেকে সুরক্ষিত। তাদের সঙ্গে দুজন বিশেষ দূত যোগ দিচ্ছেন, যারা হচ্ছেন গাভি বোর্ডের সভাপতি এনগোজি ওকনজোআইওয়ালা ও গ­্যাক্সোস্মিথক্লাইনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার অ্যান্ড্রু উইট্টি। 

তারা অভূতপূর্ব অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বৈশ্বিকভাবে যেন প্রতিষেধক সহজলভ্য হয়, সেদিকে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

‘আমাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি হলো, কভিড-১৯ প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং পরাজিত করার জন্য সব সরঞ্জামের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা’—ডা. টেড্রোস বলেন। ‘কোনো দেশ এবং কোনো সংস্থা একা এটি করতে পারে না।’

 স্বাস্থ্যনেতারা বৈশ্বিক সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে ২০২০ সালের ৪ মে শুরু হওয়া এই আসন্ন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উদ্যোগের বাস্তবায়নে তারা যেন সঠিক সমর্থন অব্যাহত রাখেন এবং দাতারা যেন লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও সরঞ্জাম সরবরাহের দিকে নজর দেন।

বিশ্বনেতারা এ সম্মেলনে কভিড-১৯-এর প্রতিষেধক ও চিকিৎসায় গবেষণার জন্য প্রায় ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো প্রদানের প্রতিশ্রুতি করে, যা দরিদ্র দেশগুলোয় ওষুধ সরবরাহেও ব্যবহার হবে বলে জানা যায়।

 তবে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য কূটনীতির ভঙ্গুর অবস্থার নিদর্শন হিসেবে এ সম্মেলনে ভারত, রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ করেনি। তবে চীন ইইউতে তার রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধিত্বে সপ্তাহখানেক পরে অংশ নেয়। টিকা বা প্রতিষেধকের উদ্ভাবক যে-ই হোক না কেন, তার সরবরাহ রাখা উচিত বিশ্বব্যাপী কোনো রকম বিভেদ ছাড়াই। এ সম্পর্কে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছিলেন, যেকোনো সরবরাহকৃত টিকা কারো একার নয়। তিনি আরো বলেন, অবশ্যই যারা এটি আবিষ্কার করেছেন, তাদের ন্যায্য অর্থ প্রদান করা হবে। তবে আমরা যে সংস্থাটি বেছে নেব, তারা বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে তা সরবরাহ করবে। 

যদিওবা তত্ত্বটি আঞ্চলিকতার ওপর জোর দেয় বেশি, খেয়াল রাখা ভালো যে বর্তমান বৈশ্বিক যোগাযোগ আর এ তত্ত্বের উত্পত্তিকালীন বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাঝে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। এখন নিমেষেই তথ্য পৌঁছে যায় বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে। বাণিজ্যের বিস্তার এখন ছড়িয়েছে অতীতের সব সময়ের চেয়ে। তাই আঞ্চলিকতাকে এখন পরিবর্তন করা ভালো বিশ্বায়নে। তাতে অন্তত এ দুর্যোগ থেকে নিস্তার লাভের পথ সুগম হবে বলে আশা করা যায়।

সৈয়দ রাইয়ান আমীর

 আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা 

[email protected]

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন