খুলনায় করোনা চিকিৎসায় প্রথম প্লাজমা থেরাপি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি (রক্ত রস প্রয়োগ) শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে খুলনায় প্রথম একজন করোনা পজিটিভ রোগীকে এ থেরাপি দেয়া হয়েছে। তিনি খুলনার করোনা ডেডিকেটে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাকে প্লাজমা থেরাপি দিতে সদ্য করোনা থেকে মুক্ত হওয়া একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করেছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, খুলনার করোনা হাসপাতালে গত ২৪ মে ভর্তি হওয়া রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকার তানভির আলমকে (৩১) প্রথম প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পর এ প্লাজমা থেরাপির ফলাফল বোঝা যাবে। তাকে প্লাজমা থেরাপীর জন্য ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মঞ্জুরুলের রক্ত নেয়া হয়েছে। যিনি সম্প্রতি করোনা পজিটিভ থেকে সুস্থ্য হয়েছেন। তিনি বাগেরহাটের নিবাসী। প্লাজমা প্রয়োগে এন্টিবডি রোগীর দেহে গেলে ভাইরাসটি অনেকাংশেই নিস্ক্রিয় হবে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

তিনি আরও জানান, প্লাজমা থেরাপির প্রক্রিয়া দু’টি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে কভিড ১৯ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া রোগীর (কমপক্ষে ১৪ দিন আগে সুস্থ হয়েছেন) কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। কারণ একবার করোনায় পজিটিভ হওয়া ব্যক্তি সুস্থ হলে তার শরীরে একটি করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি তৈরি হয়। তুলনামূলক সুস্থ ও যুবক বয়সী ডোনারের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে এই প্লাজমা পরীক্ষার পর যথাযথ নিয়ম মেনে সংরক্ষণ করা বা সাথে সাথে করোনা পজিটিভের দেহে প্রয়োগ করা হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তেও এন্টিবডি চলে আসে এবং তা করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধের ফলে রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

করোনায় সুস্থ্য হওয়া ব্যক্তির রক্ত নিয়ে কভিড-১৯ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাবে তাদের দেহে প্লাজমা থেরাপি দেয়া যাবে বলে জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, এতে প্লাজমা ডোনার খোঁজার বিড়ম্বনাও থাকবে না। প্লাজমা দ্রুত সংরক্ষণ করলে এন্টিবডির পরিমান ভাল থাকে। এটি প্রয়োগে তেমন কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই।

জানা গেছে, ডা. মঞ্জুরুল গত এপ্রিল করোনা পজিটিভ হন এবং পরবর্তীতে তিনি চিকিৎসক এর পরামর্শে সুস্থ হন এবং তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের চিকিৎসকদের আহ্বানে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে  করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীকে প্লাজমা দিতে এগিয়ে আসেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ এর ইথিকাল কমিটির অনুমোদন নিয়ে বৃহস্পতিবার ডা. মঞ্জুরুল’র প্লাজমা তানভির আলমকে প্রয়োগ করা হয়েছে।

এ কাজে সহায়তা করেন খুলনা মেডিকেল কলেজ’র অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল আহাদ, পরিচালক ডা. মুন্সি রেজা সেকেন্দার ও উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সমন্বায়ক ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের বিভাগীয প্রধান ডা. এস এম তুষার আলম, ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ডা. অনল রায়, ডা. ফিরোজ, ডা. অনিক দেউরি ও ডা. সাইফ মানসুরসহ সংশ্লিষ্ট সকলে।

জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে একটি সেল সেপারেটর মেশিন রয়েছে, যেখানে রক্তের বিভিন্ন উপাদান আলাদা করা সম্ভব। যদিও প্লাজমা থেরাপি দেয়ার জন্য ব্যবহৃত এফরেসিস মেশিন খুলনায় নেই, তারপরও সেল সেপারেটর মেশিনের মাধ্যমে ব্লাড থেকে অন্য অংশ বাদ দিয়ে শুধু প্লাজমা সংগ্রহ করে তা দিয়ে একটি প্লাজমা ব্যাংক করার চেষ্টা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন