আসন খালির বাধ্যবাধকতায় বাড়ছে ভাড়া

সোমবার চালু হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট

মনজুরুল ইসলাম

প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চালু হচ্ছে আগামী জুন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বেঁধে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি নীতিমালা মেনে এয়ারলাইনসগুলোকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। এর অংশ হিসেবে ফ্লাইটে যাত্রীর আসন বিন্যাস করতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। আর এজন্য আসনের অর্ধেকই খালি রাখার বাধ্যবাধকতায় টিকিটের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ৭২ আসনের উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে। বেবিচকের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনার সময় প্রতি ফ্লাইটেই ৫০ শতাংশ আসন খালি রাখতে হবে। কারণে টিকিটের দাম কিছুটা বাড়বে। তবে যাত্রীর কথা চিন্তা করে আমরা ভাড়া সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছি। আগে ৭২টি আসন আটটি ক্লাসে বিভক্ত ছিল। প্রথম ক্লাসে টিকিটের মূল্য ছিল ২৭০০ টাকা। পরবর্তী ক্লাস ৩২০০ টাকা। কিন্তু এখন প্রতি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ৩৬টি আসনের টিকিট বিক্রি করা যাবে। তাই টিকিটের মূল্যও পাঁচটির বেশি ক্লাসে ভাগ করা যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ রুটে আপাতত প্রথম দ্বিতীয় ক্লাসের টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৩২০০ ৪২০০ টাকা। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত নয়।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, নিরাপদে ফ্লাইট চলাচল নিশ্চিত করতে দেশের সব এয়ারলাইনস, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এভিয়েশন খাতের সঙ্গে জড়িত সবার জন্য ৩৫টি নির্দেশনা দিয়ে ১০ মে একটি সার্কুলার জারি করেছে বেবিচক। এতে চেক-ইন, ইন-ফ্লাইট সার্ভিস, ক্রুদের নিরাপত্তা, সার্বিক দিকনির্দেশনা, এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা, ক্রুদের কোয়ারেন্টিন ম্যানেজমেন্ট, এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স, কেবিন এয়ার ফিল্টারেশন, অক্সিজেন মাস্কসংক্রান্ত নির্দেশনা, ফ্লাইটে সন্দেহজনক রোগী পেলে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করার বিষয়ে এয়ারলাইনসগুলোকে কী কী করতে হবে সেসব বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যাত্রীদের চেক-ইনের সময় কাউন্টার আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ডিসপোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। এছাড়া কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ফ্লাইটে যাত্রীর আসন বিন্যাস করতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। উড়োজাহাজের শেষের দুই সারি খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটে যদি কোনো করোনা আক্রান্ত সন্দেহে রোগী পাওয়া যায়, তাহলে একজন কেবিন ক্রু তাকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফ্লাইটের ওই সিটগুলোতে নিয়ে বসাবেন। আর এসব নিয়ম মানতে গিয়ে খরচ বাড়ছে এয়ারলাইনসগুলোর।

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেবিচকের বেঁধে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনসহ নানা রকম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে। তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে এখনই ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে না। আগের নিয়মেই আসন প্রাপ্যতার ওপর ভাড়া বাড়বে-কমবে।

প্রসঙ্গত, দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামী সোমবার ( জুন) থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক। প্রাথমিকভাবে শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি তিনটি এয়ারলাইনস দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিল। করোনার কারণে বন্ধ হওয়ার আগে চারটি এয়ারলাইনসের দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে দৈনিক প্রায় ১৪০টির মতো ফ্লাইট চলাচল করত।

এর আগে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে যাত্রীবাহী সব বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বেবিচক। এরপর আরেকটি আদেশে সময়সীমা আরো সাতদিন বাড়িয়ে চীন ছাড়া অন্য সব দেশের সঙ্গে এপ্রিল পর্যন্ত বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত নির্ধারণ করে বেবিচক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন