প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের ৪৪তম প্রয়াণ দিবস ছিল গতকাল। প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ ও গ্যালারিগুলোয় শিল্পীর স্মরণে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্পী পর্ষদ কয়েক বছর ধরে দিনটিতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে আসছে। কিন্তু বর্তমান
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার তা সম্ভব হয়নি। বিভাগীয় চারুশিল্প পর্ষদের আহ্বায়ক চিত্রশিল্পী মো. রাজন বলেন, ‘এবার করোনার কারণে আমরা কোনো অনুষ্ঠান করিনি। শিল্পী জয়নুল আবেদিনকে শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল সন্ধ্যায় একটি অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, ‘এবারের সময়টা কঠিন। গতকাল সকালে আমাদের কয়েকটি বিভাগের সভাপতি ও শিল্পীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জয়নুল আবেদিনের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। করোনার কারণে আর কোনো অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি।’
এদিকে শিল্পীর পরিবার জয়নুল আবেদিনের একটি চিত্রকর্ম অনলাইনে নিলামে তোলার জন্য দিয়েছেন বলে তিনি জানান। নিলামের অর্থ দিয়ে এ করোনার সময়ে দুস্থ শিল্পীদের সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক নিসার আহমেদ।
এ বিষয়ে তিনি আরো জানান, নিলামে অংশ নিতে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন চলবে। আর ৬ জুন ছবিটি নিলামে তোলা হবে। জয়নুল আবেদিনের এ ছবিটির নিলামের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লাখ টাকা।
জয়নুল আবেদিনের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মলয় বালা বলেন, ‘এত বড় একজন শিল্পী জয়নুল আবেদিন, আমাদের দেশের শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তার হাতেই গড়ে উঠেছে। আমরা এই বিরাট পুরুষের উত্তরসূরি।’
শিল্পী জয়নুল আবেদিনের তিন হাজারের অধিক চিত্রকর্ম রয়েছে। যার মধ্যে পরিবারের কাছে রয়েছে ৪০০টিরও বেশি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে
৮০৭টি, বেঙ্গল গ্যালারির কাছে রয়েছে প্রায় ৫০০টি ও জয়নুল সংগ্রহশালায় ৬২টি। এছাড়া পাকিস্তানে তার অনেক কাজ সংরক্ষিত রয়েছে।
জয়নুল আবেদিনের জন্ম ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের শিল্পকলার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে জয়নুল আবেদিন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তার প্রচেষ্টাতেই ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার তত্কালীন জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি কক্ষে সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জে ‘লোকশিল্প জাদুঘর’
এবং ময়মনসিংহে ‘জয়নুল সংগ্রহশালা’
প্রতিষ্ঠা করেন। জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা তার বিখ্যাত হয়ে আছে। ‘নৌকা’
‘সংগ্রাম’
‘ম্যাডোনা’
‘সাঁওতাল রমণী’
‘গুণটানা’সহ অসংখ্য বিখ্যাত চিত্রকর্ম রয়েছে এ শিল্পীর।