এমন ঈদ আগে কখনো দেখেছে কি বলিউড?

মুস্তাফিজ রনি, মুম্বাই

সেই ১৯১৩ সালে নির্বাক ছবি রাজা হরিশচন্দ্র দিয়ে ভারতে চলচ্চিত্রের যাত্রা। আর ১৯৩১ সালে আলম আরা দিয়ে শুরু সবাক যুগের। এরপর পুরো ভারতেই চলচ্চিত্রের ব্যবসা ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর চলচ্চিত্রের রঙিন দুনিয়া নবযাত্রা শুরু করে। এখন পর্যন্ত ভারতের দর্শকদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্র তার প্রভাব বজায় রেখেছে। প্রভাবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে নাম তা নিঃসন্দেহে বলিউড



যে কয়েকটি উৎসব ঘিরে বলিউডের আলাদা পরিকল্পনা থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো ঈদুল ফিতর। বেশ কয়েক বছর ধরেই বলিউডে ঈদের সময়টায় সচরাচর বড় বাজেটের ছবি কিংবা প্রথম সারির তারকাদের ছবি মুক্তি পায়। ব্যবসাটাও বেশ রমরমা হয়। কিন্তু বছর পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। করোনা মহামারীর কারণে একদমই বন্ধ রয়েছে বলিউডপাড়া। নিঃসন্দেহে শতাব্দীর সবচেয়ে নিরানন্দ ঈদ পার করছে বলিউড। তবে গত শতাব্দীতেও বলিউড এত দীর্ঘসময় ধরে স্থবির হয়ে ছিল, ইতিহাস ঘেঁটে এমন নজির চোখে পড়ে না।

তবে ঈদ নিয়ে কি বলিউডে আগেও এত পরিকল্পনা হতো? ইতিহাস ঘেঁটে যেটুকু পাওয়া যায়, তাতে ঈদ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনাটা মূলত শুরু হয় একুশ শতকের শুরুতেই। আর সেটিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায় ২০০৯ সালে ঈদে সালমান খানের ছবি ওয়ান্টেড এরপর থেকে যেন বলিউডে ঈদ মানেই সালমান খান। তবে মাঝে একবার ২০১৩-এর ঈদে শাহরুখ খানের চেন্নাই এক্সপ্রেস মুক্তি পায়। আর বছর ঈদে অক্ষয় কুমারের লক্ষ্মী বম্ব সালমান খানের রাধে: ইওর মোস্ট ওয়ান্টেড ভাই ছবি দুটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এবং কমপ্লিট সিনেমা ম্যাগাজিনের সম্পাদক আতুল মোহনের ভাষ্যমতে, বছরের ঈদটা হতো পারত বলিউডের অন্যতম ব্যবসাসফল ঈদ। কারণ একদিকে সালমান খান আর অন্যদিকে অক্ষয় কুমার। প্রথম দিনেই দুটি ছবি মিলে কমপক্ষে ৪৫-৫০ কোটি রুপির ব্যবসা করতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বলিউডের জন্য শতাব্দীর সবচেয়ে বাজে ঈদ এটি।


কবে নাগাদ আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে বলিউডে? এমন প্রশ্ন এখন চারদিকেই। ভারতে সাড়ে নয় হাজারেরও বেশি প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। বলিউডের একজন অন্যতম বিশ্লেষক করণ তৌরানির মতে, জুনের মাঝামাঝির আগে পুরো ভারতে প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে ফিরতে আগস্টের পর। আর টি-সিরিজ এর মার্কেটিং প্রধান ভিনোদ ভানুশালী বলেন, খুবই বাজে একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলিউড। সবাই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা চলচ্চিত্র জগতের দিনমজুর।

বাণিজ্য বিশ্লেষক গিরিশ জোহরের ধারণা অনুযায়ী, লকডাউনের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই মাসে প্রায় হাজার কোটি রুপির লোকসান হয়েছে বলিউডে। লকডাউন যতদিন চলবে, ততদিন ক্ষতি আরো বাড়তেই থাকবে। তবে করোনার প্রভাব বলিউডে আগামী দুই বছর পর্যন্ত থাকবে বলেও অনেক চলচ্চিত্র বিশ্লেষক মত দিয়েছেন।

তবে এতকিছু উপেক্ষা করে মুক্তি পাচ্ছে অক্ষয় কুমারের লক্ষ্মী বম্ব চলচ্চিত্রটি। যদিও সেটা প্রেক্ষাগৃহে নয় বরং ডিজিটাল প্লাটফর্মে। এরই মধ্যে ডিজনি প্লাস হটস্টার স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে জুনে ছবিটি মুক্তি দেয়া হবে বলে ঘোষণা এসেছে। এছাড়া আয়ুষ্মান খুরানা অমিতাভ বচ্চন অভিনীত গুলাবো সিতাবো ছবিটিও ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইম- মুক্তি দেয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য বড় বাজেটের ছবি যেমন রাধে, সূর্যবংশী, ৮৩ কুলি নাম্বার ওয়ান ছবিগুলো প্রেক্ষাগৃহেই মুক্তি দেয়া হবে বলে আপাতত মুক্তি স্থগিত রাখা হয়েছে।

পিভিআর পিকচার্সের প্রধান নির্বাহী কামাল জ্ঞানচান্দানী বলেন, চলচ্চিত্র ব্যবসায় পুনরায় উঠে দাঁড়াতে একটু সময় লাগে। তবে আমাদের ধারণা প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেয়ার পরও প্রথম চার বা পাঁচ সপ্তাহ জনসমাগম কমই থাকবে। এরপর যখন আবার বড় বাজেটের ছবিগুলো আসা শুরু হবে, তখন হয়তো আবার আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হবে।

বলিউডের জন্য সবচেয়ে খারাপ ঈদ যাচ্ছে এবার। তার পরও চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত সবাই এবং দর্শকদের প্রত্যাশা থাকছে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের উৎসব নিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা দিবস, দশেরা, দিওয়ালি বড়দিন। সময়ের মাঝে হয়তো করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বলিউডে ফিরবে আবার সেই চিরচেনা উৎসবের আমেজ।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন