বেসরকারি
গবেষণা প্রতিষ্ঠান
পাওয়ার অ্যান্ড
পার্টিসিপেশন রিসার্চ
সেন্টার (পিপিআরসি)
ও ব্র্যাক
ইনস্টিটিউট অব
গভর্ন্যান্স অ্যান্ড
ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি)
এক সাম্প্রতিক
গবেষণার ফলাফলে
উঠে এসেছে
যে নভেল
করোনাভাইরাসের কারণে
দেশে নতুন
করে ২২
দশমিক ৯
শতাংশ মানুষ
গরিব হয়েছে।
অর্থাৎ নভেল
করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে
দেশে নতুন
ও পুরনো
মিলিয়ে এখন
মোট জনগোষ্ঠীর
৪৩ শতাংশ
দারিদ্র্যসীমার নিচে
বাস করে।
এর মধ্যে
গ্রামে ৪
কোটি ২৯
লাখ ৯৪
হাজার ১২৭
জন আর
শহরে ২
কোটি ৭০
লাখ ২৮
হাজার ৭১৯
জন। গবেষণার
ফলাফলে আরো
বলা হয়েছে,
গত ফেব্রুয়ারির
তুলনায় এপ্রিলে
দেশের গরিব
মানুষের আয়
৭৫ শতাংশ,
অতিগরিবের আয়
৭৩ শতাংশ,
গরিব হওয়ার
ঝুঁকিতে থাকা
মানুষের আয়
৬৭ শতাংশ
এবং গরিব
নয় এমন
মানুষের আয়
৬৫ শতাংশ
কমেছে। গত
২০ মে
ভার্চুয়াল এক
সেমিনারে এসব
তথ্যসহ গবেষণার
বিভিন্ন দিক
তুলে ধরেন
পিপিআরসির চেয়ারম্যান
হোসেন জিল্লুর
রহমান এবং
বিআইজিডির নির্বাহী
পরিচালক ইমরান
মতিন। ভার্চুয়াল
সেমিনারে অংশ
নিয়ে সিপিডির
চেয়ারম্যান রেহমান
সোবহান বলেছেন,
করোনার কারণে
দারিদ্র্য বেড়েছে।
মানুষ নতুন
করে গরিব
হচ্ছে। সেমিনারে
অন্যদের মধ্যে
আলোচনায় অংশ
নেন পরিকল্পনা
কমিশনের অর্থনীতি
বিভাগের সদস্য
শামসুল আলম,
লন্ডন স্কুল
অব ইকোনমিকস
অ্যান্ড পলিটিক্যাল
সায়েন্সের অধ্যাপক
নায়লা কবির
ও উলস্টার
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
এস আর
আলী। উপর্যুক্ত
গবেষণার ফাইন্ডিংস
যথার্থ হলে
দেশে দারিদ্র্য
হার ১৯৪০
সালের ৪০
শতাংশকেও ছাড়িয়ে
গেছে। দেশে
দারিদ্র্য হারে
ঊর্ধ্বগতি কীভাবে
রোধ এবং
নিম্নমুখী করা
যেতে পারে,
তা আলোচনা
করাই এ
নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
সরকারি হিসাবে
১৯৯১-৯২
সালের ৫৬
দশমিক ৬
শতাংশ জাতীয়
দারিদ্র্য হার
২০০৫ সালে
৪০ শতাংশ
এবং ২০১০
সালে ৩১
দশমিক ৫
শতাংশে নেমে
আসে। ২০১৬
ও ২০১৯
সালে তা
হ্রাস পেয়ে
দাঁড়ায় যথাক্রমে
২৪ দশমিক
৩ এবং
২০ দশমিক
৫ শতাংশে।
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক
পরিকল্পনা মেয়াদে
(২০১৫-১৬—২০১৯-২০)
দেশে দারিদ্র্য
হার ১৮
দশমিক ৬
শতাংশে কমিয়ে
আনার লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারিত হয়েছে।
তবে এখানে
যে বিষয়টি
লক্ষণীয় তা
হলো, ২০০৫
থেকে ২০১০
সাল পর্যন্ত
প্রতি বছর
দারিদ্র্য ১
দশমিক ৭
শতাংশ হারে
কমলেও ২০১০
থেকে ২০১৬
সময়কালে তা
কমেছে ১
দশমিক ২
শতাংশ হারে।
২০১৬ সাল
পরবর্তী তিন
বছরেও দারিদ্র্য
হ্রাসের নিম্নমুখী
গতি বহাল
রয়েছে। দেশে
দারিদ্র্য হ্রাসের
গতি নিম্নমুখীর
চিহ্নিত কারণগুলোর
মধ্যে রয়েছে
এক. সাম্প্রতিক
বছরগুলোয় কৃষি
খাতের প্রবৃদ্ধির
হার হ্রাস।
২০০৯-১০
অর্থবছরে কৃষি
খাতের ৬
দশমিক ৫৫
শতাংশ প্রবৃদ্ধির
হার গত
১০ বছরে
গড়ে দাঁড়িয়েছে
৩ দশমিক
৭ শতাংশে
(অর্থমন্ত্রীর বাজেট
বক্তৃতা ২০১৯-২০)।
দুই. বেকারত্বের
হার, বিশেষ
করে শ্রমশক্তির
চূড়ামণি যুব
শ্রমশক্তির বেকারত্বের
হারে উল্লম্ফন।
২০১০ সালের
৬ দশমিক
৪ শতাংশের
বিপরীতে ২০১৭
সালে যুব
বেকারত্বের হার
দাঁড়ায় ১২
দশমিক ৮
শতাংশে। তিন.
সামাজিক নিরাপত্তা
কর্মসূচিতে ভাতাভোগীদের
সংখ্যার তুলনায়
অনেক কম
বরাদ্দ। চার.
আন্তঃবিভাগীয় বা
আঞ্চলিক দারিদ্র্যবৈষম্য
এবং এ
বৈষম্য নিরসনে
উদ্যোগের অভাব।
রংপুর বিভাগ
ও খুলনা
বিভাগে যখন
দারিদ্র্যের হার
যথাক্রমে ৪৭
দশমিক ২
এবং ২৭
দশমিক ৫
শতাংশ, তখন
ঢাকা বিভাগ
ও সিলেট
বিভাগে দারিদ্র্যের
হার যথাক্রমে
১৬ দশমিক
শূন্য ও
১৬ দশমিক
২ শতাংশ
(বিবিএস: বাংলাদেশ
হাউজহোল্ড ইনকাম
অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার
সার্ভে-২০১৬)।
পাঁচ. ধনী-দরিদ্রের
আয়বৈষম্য বৃদ্ধি।
দেশে প্রায়
এক দশক
ধরে যখন
দারিদ্র্য হার
হ্রাসে নিম্নগতি,
তখন মড়ার
উপর খাঁড়ার
ঘায়ের মতো
এসেছে করোনা
মহামারীর আঘাত।
গত ৮
মার্চ দেশে
প্রথম নভেল
করোনাভাইরাস আক্রান্ত
রোগী শনাক্তের
পর ২৬
মার্চ দেশ
লকডাউনের মতো
অবস্থায় চলে
আসে। কৃষি
খাতে শস্য
উৎপাদন, সংগ্রহ
ও শারীরিক
তথা সামাজিক
দূরত্ব মেনে
বিপণন ছাড়া
অন্য প্রায়
সব খাতের
কার্যক্রম বন্ধ
হয়ে যায়।
গণপরিবহন, হোটেল,
রেস্তোরাঁ, ট্যুরিজমসহ
বন্ধ হয়ে
পড়ে জিডিপিতে
সবচেয়ে বেশি
অবদান রাখা
সেবা খাত।
বন্ধ হয়ে
যায় কাঁচাবাজার,
ওষুধ, সুপারশপ
ও নিত্যপণ্যের
দোকান ছাড়া
সব ধরনের
দোকান-মার্কেট।
অধিকাংশ অফিস
এবং সব
ধরনের আদালত
বন্ধ ঘোষণা
করা হয়।
বন্ধ ঘোষণা
করা হয়
সব ধরনের
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর
বিরূপ প্রভাব
পড়ে অর্থনীতির
সব খাতের
ওপর। তৈরি
পোশাক শিল্প
মালিকদের সংগঠন
বিজিএমইএর তথ্য
মোতাবেক, চলতি
বছরের এপ্রিলে
গত বছরের
একই সময়ের
তুলনায় ৮৪
দশমিক ৮৬
শতাংশ আয়
রফতানি কমেছে।
আর চলতি
মে মাসের
প্রথম ১৮
দিনে পোশাক
রফতানি হ্রাস
পেয়েছে গত
বছরের একই
সময়ের তুলনায়
৫৬ দশমিক
৮০ শতাংশ।
তৈরি পোশাকের
প্রধান আমদানিকারক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ও যুক্তরাষ্ট্রের
ক্রেতারা ক্রয়াদেশ
বন্ধ বা
সীমিত করায়
এ অবস্থার
সৃষ্টি হয়েছে।
তৈরি পোশাকের
পাশাপাশি ইউরোপের
দেশগুলোয় চামড়া,
হিমায়িত মাছ,
প্লাস্টিক পণ্য,
পাট ও
পাটজাত পণ্য,
কাঠ ও
আসবাব শিল্প
রফতানি প্রায়
বন্ধ হয়ে
যায়।
পরিবহন সংকটের
কারণে এবং
একই সঙ্গে
অন্যান্য বছরের
তুলনায় ক্রেতার
অভাবে মৌসুমি
আম, লিচু,
কাঁঠাল, জাম,
আনারস, তরমুজ,
বাঙ্গি প্রভৃতি
বাজারজাত করতে
না পারায়
চাষীরা আর্থিকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
২৬ মার্চের
‘লকডাউনের’
কারণে বাংলাদেশের
জিডিপিতে সবচেয়ে
বেশি অবদান
রাখা সেবা
খাত মারাত্মক
ক্ষতির মুখে
পড়েছে। বলতে
গেলে, এ
খাতের আয়ে
ধস নেমেছে।
ফলে এ
খাতের উদ্যোক্তারা
যেমন দেশহারা
হয়ে পড়েছেন,
তেমনি এ
খাতে নিয়োজিত
কর্মচারীদের অধিকাংশ
কর্মহীন হয়ে
পড়েছেন। পরিবহন
খাতের ৫০
লাখ শ্রমিক
ক্ষতিগ্রস্ত হন
বলে বাংলাদেশ
সড়ক পরিবহন
শ্রমিক ফেডারেশন
সূত্রে জানা
যায়। এরা
ত্রাণের দাবিতে
রাস্তায় নেমেছেন।
গত ১০
মে স্বাস্থ্যবিধি
মেনে সীমিত
সময়ের জন্য
উৎপাদন খাত
চালু, দোকানপাট
খোলার অনুমতি
দেয়া হলেও
তখন গণপরিবহন
চলাচলের অনুমতি
দেয়া হয়নি।
ফলে গণপরিবহন
খাতের কর্মচারীরা
(সুপারভাইজার, ড্রাইভার,
হেলপার, টেকনিশিয়ান)
দরিদ্রের কাতারে
এসে দাঁড়িয়েছেন।
করোনার কারণে
ঢাকা মহানগরের
হোটেল-রেস্তোরাঁর
অধিকাংশই দুই
মাস ধরে
বন্ধ থাকায়
৬০ হাজার
কর্মচারীর কাজ
নেই, বেতন
নেই। তারা
এখন মানবেতর
জীবনযাপন করছেন
(প্রথম আলো,
২৩ মে)।
সারা দেশে,
বিশেষ করে
বিভাগীয় ও
জেলা শহরে
এদের সংখ্যা
হবে কয়েক
গুণ। গত
১০ মে
সীমিত সময়ের
জন্য স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলার
শর্তে হোটেল-রেস্তোরাঁ
খোলার অনুমতি
দেয়া হলেও
করোনাভীতি ও
গ্রাহক সমাগমের
তেমন সম্ভাবনা
না থাকায়
অনেকগুলো খোলেনি।
আন্তর্জাতিক সংস্থা
দ্য ওয়ার্ল্ড
ট্রাভেল অ্যান্ড
ট্যুরিজম কাউন্সিল
(ডব্লিউটিটিসি) বলেছে,
বিশ্বজুড়ে করোনা
মহামারীর কারণে
পর্যটন খাতের
সর্বোচ্চ পাঁচ
কোটি কর্মী
চাকরি হারাতে
পারেন। এরই
ধারাবাহিকতায় দেশেও
একদিকে যেমন
উদ্যোক্তাদের পক্ষে
ব্যবসা ধরে
রাখা কঠিন
হয়ে পড়েছে,
তেমনি অন্যদিকে
পর্যটনের সঙ্গে
জড়িত হাজার
হাজার কর্মী
চাকরি হারিয়ে
নিঃস্ব হয়ে
পড়েছেন। ১০
মে শিথিল
আদেশ পর্যটন
খাতের জন্য
প্রযোজ্য করা
হয়নি এবং
করোনায় সংক্রমণ
ও মৃত্যুর
হারের চলমান
ঊর্ধ্বগতিতে তা
করার নিকট
সম্ভাবনা আছে
বলে মনে
হয় না।
করোনায় সংক্রমণের
ভয়ে রাজধানী
ঢাকা, মেট্রোপলিটন
নগরীসহ জেলা
শহরের মানুষ
চুল কাটা
সেলুনগুলোয় যাচ্ছে
না। এতে
এসব দোকানের
মালিকদের পক্ষে
যেমন ব্যবসা
ধরে রাখা
কঠিন হয়ে
পড়েছে, তেমনি
হাজার হাজার
কর্মচারী বেকার
হয়ে পড়ায়
তাদের বেঁচে
থাকা কঠিন
হয়ে পড়েছে।
করোনার আবির্ভাবের
আগে রাজধানী
ঢাকা, মেট্রোপলিটন
নগরীসহ জেলা
শহরের বাসাবাড়িতে
হাজার হাজার
খণ্ডকালীন গৃহকর্মী
কাজ করতেন।
করোনার প্রাদুর্ভাব
দেখা দেয়ার
পর তাদের
বিদায় করে
দেয়া হয়েছে।
এদের বেশির
ভাগ এখন
ভিক্ষা করে
বেঁচে আছেন।
এ রকম
আরো অনেক
উদাহরণ দেয়া
যেতে পারে।
মোট কথা,
সপ্তম পঞ্চবার্ষিক
পরিকল্পনা অনুযায়ী
দেশের জিডিপিতে
৫৬ শতাংশ
অবদান রাখা
সেবা খাত
চরম দুর্দিনের
মধ্যে পড়েছে।
দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক
খাতের শ্রমিক-কর্মচারীর
সঙ্গে কাজ
হারানোর ঝুঁকিতে
রয়েছেন দেশের
অর্থনীতির অন্যতম
বৃহৎ শক্তি
প্রবাসীরা। প্রবাসে
থাকা প্রায়
এক কোটি
শ্রমিকের উল্লেখযোগ্য
অংশই বেকার
হয়ে পড়বেন
বলে মনে
করছে বিভিন্ন
মহল। সৌদি
আরবের বাংলাদেশ
দূতাবাসের বরাত
দিয়ে মিডিয়ায়
প্রকাশিত খবরে
বলা হয়েছে,
নভেল করোনাভাইরাস
মহামারীতে অর্থনৈতিক
ক্ষতি এবং
তেলের দাম
কমে যাওয়ার
কারণে শুধু
সৌদি আরব
থেকেই বিতাড়িত
হবেন প্রায়
১০ লাখ
বাংলাদেশী শ্রমিক।
সৌদি আরব
ছাড়াও কাতার,
ইরাক, বাহরাইনসহ
উপসাগরীয় দেশগুলো
মালয়েশিয়া থেকে
অবৈধ শ্রমিকদের
ফিরিয়ে নেয়ার
জন্য প্রতিনিয়ত
চাপ দিচ্ছে
বাংলাদেশ সরকারকে।
এরই মধ্যে
কয়েকটি দেশ
থেকে অবৈধ
হয়ে পড়া
বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে
আনা হয়েছে।
অবৈধ হয়ে
পড়া আরো
২৯ হাজার
ফেরত আসার
আশু সম্ভাবনা
দেখা দিয়েছে।
এদিকে বেসরকারি
সংস্থা ব্র্যাকের
অভিবাসন কর্মসূচির
‘বিদেশফেরত
অভিবাসী কর্মীদের
জীবন ও
জীবিকার ওপর
কভিড-১৯
মহামারীর প্রভাব’
শীর্ষক জরিপে
উঠে আসা
তথ্যে জানা
যায়, করোনা
মহামারীর সময়ে
দেশে ফিরে
আসা অভিবাসী
কর্মীদের ৮৭
শতাংশের এখন
আয়ের কোনো
উৎস নেই।
নিজের সঞ্চয়
দিয়ে তিন
মাস বা
তার বেশি
সময় চলতে
পারবেন এমন
সংখ্যা ৩৩
শতাংশ। আর
৫২ শতাংশ
বলছেন, তাদের
জরুরি ভিত্তিতে
আর্থিক সহায়তা
প্রয়োজন। সুতরাং
এরা সবাই
দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত
হবেন।
২০১৫ সালের
জুলাইয়ে পরিকল্পনা
কমিশন প্রণীত
‘জাতীয়
সামাজিক নিরাপত্তা
কৌশল’ মোতাবেক
দেশে যত
দরিদ্র মানুষ
আছে, তাদের
২৫ শতাংশের
সমান মানুষ
দারিদ্র্যসীমার আশেপাশে
থাকে। তাদের
মধ্যে অর্ধেক
মানুষ অর্থনীতি
ভালো থাকলে,
আয়-রোজগার
ভালো হলে
দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম
করে। আবার
বাকি সাড়ে
১২ শতাংশ
মানুষ, যারা
দারিদ্র্যসীমার কিছুটা
ওপরে থাকে,
তারা অর্থনীতি
খারাপ হলে
কিংবা প্রাকৃতিক
দুর্যোগ, যেমন
ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক
জলোচ্ছ্বাস, দীর্ঘায়িত
খরা, প্রলয়ঙ্করী
বন্যা হলে
কিংবা বাজারে
জিনিসপত্রের দাম
অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে
গেলে আবার
দারিদ্র্যসীমার নিচে
নেমে যায়।
চলমান করোনা
পরিস্থিতিতে ওই
শ্রেণীর মানুষ
সবচেয়ে বেশি
ঝুঁকিতে রয়েছে।
মহামারীর কারণে
দেশের ঊর্ধ্বমুখী
দারিদ্র্য হার
রোধ ও
নিম্নমুখী করতে
সরকারকে যেসব
পদক্ষেপ নিতে
হবে, সেগুলোর
মধ্যে রয়েছে
এক. স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলার
শর্তে ১০
মে থেকে
দোকানপাট, শপিংমল
খোলার অনুমতি
দিয়েছে সরকার।
এর আগে
স্বাস্থ্যবিধি পালনের
শর্তে তৈরি
পোশাক শিল্প
চালুর অনুমতি
দেয়া হয়।
‘মানুষের
জীবন-জীবিকা
অব্যাহত রাখতে
বন্ধ অবস্থা
শিথিল করা
হচ্ছে’—প্রধানমন্ত্রীর
১০ মে
তারিখের সময়োচিত
এই বক্তব্যের
অনুসরণে স্বাস্থ্যবিধি
কড়াকড়িভাবে পালনের
শর্তে ধীরে
ধীরে উৎপাদনশীল
অন্য সব
খাত চালু
করতে হবে।
দুই. দারিদ্র্যসীমার
কিছুটা ওপরে
থাকা মানুষের
মধ্যে যারা
করোনা মহামারীর
কারণে দরিদ্র
মানুষের কাতারে
এসে দাঁড়িয়েছে,
তাদের পূর্বাবস্থায়
ফিরিয়ে আনতে
সরকারকে পর্যাপ্ত
সহায়তা নিয়ে
এগিয়ে আসতে
হবে। তিন.
প্রবাসী শ্রমিকদের
রক্ষায় সরকারকে
সংশ্লিষ্ট দেশের
সঙ্গে জোর
আলোচনা চালিয়ে
যেতে হবে।
যারা চাকরি
হারিয়েছেন, তাদের
চাকরির ব্যবস্থা
করা এবং
সেখানে বৈধভাবে
বসবাসকারীদের ফেরত
না পাঠানোর
জন্য লবিং
জোরদার করতে
হবে। মনে
রাখতে হবে
রেমিট্যান্সপ্রবাহের মূল
উৎস মধ্যপ্রাচ্যের
দেশগুলো। সেখান
থেকে বিপুল
পরিমাণ শ্রমিক
দেশে ফেরত
এলে রেমিট্যান্সপ্রবাহে
মারাত্মক নেতিবাচক
প্রভাব পড়বে,
যা আমাদের
অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত
করে ফেলতে
পারে। চার.
স্বাস্থ্যবিধি মেনে
সীমিত আকারে
গণপরিবহন, যেমন
বাস, ট্রেন
ও লঞ্চ
চলাচলের সিদ্ধান্ত
এ খাতের
কর্মচারীদের চরম
দারিদ্র্য থেকে
রক্ষা এবং
ধীরে ধীরে
দারিদ্র্যসীমা অতিক্রমে
সহায়তা করবে।
তবে গণপরিবহন
চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলা
না হলে
হিতে বিপরীত
হতে পারে।
সরকার ও
মালিকপক্ষ যেন
তা ভুলে
না যায়।
সব শেষে
বলতে চাই,
গত দুই
দশকে দেশে
দারিদ্র্যের হার
৪৬ দশমিক
২ শতাংশ
থেকে ২০
দশমিক ৫
শতাংশে নামিয়ে
আনায় সংশ্লিষ্ট
সরকারগুলো যেসব
পদক্ষেপ নিয়েছে,
তা অবশ্যই
প্রশংসার দাবি
রাখে। অদৃশ্য
শত্রু করোনার
কারণে দারিদ্র্য
হারের ঊর্ধ্বগতি
রোধ ও
নিম্নমুখী করতে
সম্ভব সবকিছুই
করতে হবে।
তবে সরকারকে
সতর্ক থাকতে
হবে যেন
‘লকডাউন’
শিথিল করার
সঙ্গে সঙ্গে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে
চলায় কোনো
শিথিলতা দেখা
না দেয়।
নতুবা স্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞদের মতে,
করোনার স্থায়িত্ব
শুধু দীর্ঘায়িত
হবে না,
বরং তা
দ্বিতীয় ধাপে
১৯১৮-১৯
সালের স্প্যানিশ
ফ্লুর মতো
সংহার মূর্তি
ধারণ করে
ফিরে আসতে
পারে। সেক্ষেত্রে
দেশে দারিদ্র্যের
হার কোন
পর্যায়ে পৌঁছবে,
তা সময়
বলে দেবে।
মো. আবদুল লতিফ
মন্ডল: সাবেক সচিব