ভারতে নকিয়ার টেলিকম গিয়ার উৎপাদন কারখানা বন্ধ

বণিক বার্তা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতে টেলিকম গিয়ার উৎপাদন কারখানার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে নকিয়া। গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি জানায়, একযোগে বেশকিছু কর্মীর নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। খবর ইটি টেলিকম।

বিবৃতিতে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে অবস্থিত শ্রীপেরুমবুদুর কারখানার কতজন কর্মীর করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পজিটিভ এসেছে, তা প্রকাশ করেনি নকিয়া। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, নকিয়ার শ্রীপেরুমবুদুর কারখানার অন্তত ৪২ জন কর্মীকে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। ভারতে টানা দুই মাসের লকডাউনে দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল কারখানাটি। একযোগে বিপুলসংখ্যক কর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নকিয়ার টেলিকম গিয়ার উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে এবং সরবরাহ চেইনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রীপেরুমবুদুর কারখানায় উৎপাদিত টেলিকম গিয়ার দিয়ে ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে রফতানি করে আসছিল নকিয়া। মোবাইল ডিভাইস ব্যবসা বিভাগ মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি করে দেয়ার পর থেকে শ্রীপেরুমবুদুর কারখানা নকিয়ার নেটওয়ার্ক গিয়ার ব্যবসা জোরদারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

বিবৃতিতে নকিয়া জানায়, এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর জন্য কারখানায় সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কর্মীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি কারখানাটির ক্যান্টিনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে লকডাউনের মধ্যেও স্বল্প পরিসরে কারখানাটি চালু করা হয়। ভারত সরকার অর্থনীতির চাকা সচল করতে লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দেয়ার পরই কারখানাটি চালু করা হয়েছিল।

অন্যদিকে চীনভিত্তিক স্মার্টফোন নির্মাতা অপো একই ধরনের জটিলতায় পড়েছে। লকডাউন শিথিল করার পর দিল্লিতে নিজেদের একটি স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা চালু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। কারখানাটি চালুর কয়েকদিন পরই পুনরায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। অপোর কারখানাতেও একযোগে নয়জন কর্মীর করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো ভারত। গত মার্চে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে মানুষ কার্যত গৃহবন্দি। আগে থেকেই চাপের মুখে থাকা ভারতীয় অর্থনীতি এখন রীতিমতো ধুঁকছে। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ভারতে কারখানার কার্যক্রম সাময়িক গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল স্যামসাং, অপোর মতো কয়েকটি বৈশ্বিক স্মার্টফোন নির্মাতা জায়ান্ট। এর ফলে দেশটিতে বেশির ভাগ স্মার্টফোন নির্মাতার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে হাতে গোনা কয়েকটি ব্র্যান্ড ঝুঁকি নিয়েই কার্যক্রম চালু রেখেছিল। ভারতের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর চাপ কমাতে সামান্য কয়েকটি কারখানার কার্যক্রম আংশিক চালু রাখা হয়েছিল।

উত্তর প্রদেশের নয়ডায় বেশির ভাগ স্মার্টফোন নির্মাতা কারখানা অবস্থিত। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চেই নয়ডা কারখানার কার্যক্রম সাময়িক গুটিয়ে নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং। কর্মকর্তাদের বাড়িতে বসে দাপ্তরিক কাজ করতে বলা হলেও উৎপাদন এখনো বন্ধ রয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠান অপো ভিভো ভারতের মাটিতে তাদের কারখানার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছে। ফলে এসব কারখানায় স্মার্টফোন উৎপাদন হচ্ছে না। শ্রমিক নন এমন কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করতে বলা হয়েছে। মূলত শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে আনুষ্ঠানিক লকডাউন শুরুর আগেই কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে স্মার্টফোন নির্মাতা।

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৩ মার্চ থেকে ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হয়। ওই সময় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আন্দাজ করে আগেই নয়ডার স্মার্টফোন কারখানাগুলো বন্ধ করা হয়। এসব কারখানা কবে উৎপাদনে যাবে, তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

গত মার্চে স্যামসাং, অপো ভিভোর মতো পুনে চেন্নাইয়ের স্মার্টফোন নেটওয়ার্ক গিয়ার উৎপাদন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল নকিয়া এরিকসন। ওই সময় নকিয়ার মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, তামিলনাড়ুতে তাদের টেলিকম গিয়ার উৎপাদন কারখানায় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা সোস্যাল ডিস্টেন্সিং মেনে চলা হচ্ছে। শ্রমিকের সংখ্যাও কমানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন