একটি ভাষাকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিল কভিড-১৯!

রুহিনা ফেরদৌস

লিচোর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মুছে গেলো গ্রেট আন্দামানিজ ভাষা পরিবারের সারে ভাষা। আন্দামানি ভাষা মূলত  এক জোড়া ভাষা নিয়ে গঠিত একটি ভাষা। জোড়াটি হচ্ছে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের আন্দামানি নেগ্রিট বা আন্দামানি আদিবাসীদের কথিত গ্রেট আন্দামানিজ ভাষা এবং ওগান ভাষা।

লিচো ছিলেন গ্রেট আন্দামানিজ ভাষা পরিবারের অবশিষ্ট চার বক্তার একজন এবং সারে ভাষার শেষ বক্তা। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ আন্দামান দ্বীপের পোর্ট ব্লেয়ারে বসবাস করতেন। ৪ এপ্রিল যক্ষ্মা ও হৃদরোগে ভুগে  মৃত্যু হয় তার।  যেহেতু যক্ষায় ভুগছিলেন তাই কভিড-১৯ এর ছোবল যে তাকে কেড়ে নেয়নি এর নিশ্চয়তা কী? ঠিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লিচো মারা গেছেন কিনা তা নিশ্চিত না হলেও যে ধরনের অসুস্থতা নিয়ে তার মুত্যৃ হয়েছে সেক্ষেত্রে কভিডকেই দায়ী করছেন অনেকে।

লিচো  ছিলেন রাজা  জিরাকের প্রথম সন্তান এবং তিনি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ও ভাষার উত্তরাধিকার বহন করছিলেন। তার অবদান রয়েছে গ্রেট আন্দামানিজ ভাষার ব্যাকরণ ও অভিধান তৈরিতে। উপজাতির মধ্যে অন্যতম বুদ্ধিমান নারী তিনি, কাজ করেছেন আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জের শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে। সারে ভাষার পাশাপাশি জেরু, পুজুক্কর, আন্দামানিজ হিন্দি ভাষা জানতেন। 

বলার অপেক্ষা  রাখে না যে  কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে  পড়েছে সুদূর আন্দামান দীপপুঞ্জেও। ২১ এপ্রিল নাগাদ সেখানে কভিড শনাক্ত হয়েছে ১৫ জনের। অন্যদিকে ১১ জন ব্যক্তি ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। যদিও  অনেকেই  সেখানে ভাইরাসটির কমিউনিটি সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে নাকচ করে দিচ্ছেন না। যদি সেখানে কমিউনিটি সংক্রামণের মতো বিষয় ঘটে তবে দ্বীপের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যরা যেমন জীবনঝুঁকিতে পড়বেন তেমনি হারিয়ে যেতে পারে তাদের মুখের কথিত ভাষাগুলোও।

লিচোর মৃত্যুর পর গ্রেট আন্দামানিজ ভাষা পরিবারের মাত্র তিন জন সদস্য জীবিত আছেন, তাদের প্রত্যেকেরই বয়স ৫০ এর উপরে, তারাও বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। সবমিলিয়ে কভিড-১৯ এর বিস্তার নতুন করে এ মানুষগুলোর জীবন যেমন ঝুঁকিতে ফেলেছে তেমনি তাদের ভাষাকেও বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আদিবাসী এ গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যাতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো সেখানে বাইরের বাসিন্দাদের যে কোনো ধরনের প্রবেশ ও ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা  জারি  করেছে। তাছাড়া গোষ্ঠীগুলোকে ভাইরাস থেকে  সুরক্ষিত  রাখতে গান, নৃত্য  ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন  প্রথাগত আয়োজনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু মহামারীর সময় দেখা যায়, সাধারণ জনগণের মৃত্যুর হারের তুলনায় আদিবাসী জনগণের মৃত্যুর হার চারগুণ বেশি। তাই করোনাভাইরাস বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অস্তিত্বের জন্য নতুন ঝুঁকি নিয়েই হাজির হয়েছে ; আর এ আশঙ্কাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই।

সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান ও মিডিয়াম ডটকম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন