মহামারীর মধ্যে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পঙ্গপালের হানা

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যতিব্যস্ত এখন পুরো বিশ্ব। ভারতও এ মহামারীর প্রকোপ থেকে বাঁচার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটিকে আরেক আপদ জেঁকে বসেছে। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে পঙ্গপাল। সেখানকার ২৪টির বেশি জেলায় ফসলভুক এ পতঙ্গের হানায় জেরবার দশা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট। খবর বিবিসি।

ভারতের পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থার উপপরিচালক কেএল গুলজার বলেন, সীমান্ত পার হয়ে আসা পঙ্গপালের হামলা ঠেকাতে লড়াই করছি আমরা। প্রায় তিন দশকের মধ্যে আমরা পঙ্গপালের এত ব্যাপক আক্রমণ দেখিনি। এবারের পঙ্গপালের ঝাঁক খুবই বিশাল। আমাদের ধারণার এক মাস আগেই তারা বংশবিস্তার করেছে ও সীমান্ত পার হয়ে এদেশে ঢুকেছে।

পঙ্গপালের এ ঝাঁক পাকিস্তান থেকে ভারতে ঢুকেছে গত ৩০ এপ্রিলের দিকে। এখন তারা রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের পাঁচটি জেলায় সক্রিয় রয়েছে।

প্রতি এক বর্গকিলোমিটারের ঝাঁকে প্রায় ৪ কোটি পঙ্গপাল থাকে। তারা খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যেতে পারে তারা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে পঙ্গপালের ঝাঁক দিনে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) পথ পাড়ি দেয়।

কেএল গুরজার বলেন, আমাদের ভাগ্য ভালো, ফসল ঘরে তোলা হয়ে গেছে। কিন্তু পঙ্গপালের ঝাঁক কেবল ফসলই নয়, বরং সবুজ শাকসবজি, পাতা, ফল, ফুল, বীজ ও ছোটছোট গাছপালা খেয়ে নিঃশেষ করে দেয়।

কর্মকর্তারা জানান, ছোট একটা পঙ্গপালের ঝাঁক প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের একদিনের খাবার সাবাড় করে দিতে পারে।

কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে পঙ্গপালের উপদ্রব মোকাবেলা নতুন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত কর্মীদের মরুভূমির প্রচণ্ড গরমে স্প্রে করার যন্ত্র, কীটনাশক ও ড্রোন ব্যবহার করে পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে মাস্ক ও সুরক্ষা পোশাক পরে তাদের রাতের বেলা মাঠে নামতে হচ্ছে পঙ্গপাল নিধনের কাজ করতে। অবশ্য গ্রামবাসীই তাদের খাবার জোগাচ্ছেন।

রাজস্থানের উদ্ভিদ রক্ষা কর্মকর্তা ওম প্রকাশ বলেন, ‘পাকিস্তানের মরু এলাকায় বংশ বিস্তারের পর পঙ্গপালের এ ঝাঁক ভারতে ঢুকেছে। তাদের উপদ্রব খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’

গত কয়েক দশকে ভারতকে বেশ কয়েক দফায় পঙ্গপাল মোকাবেলা করতে হয়েছে। ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে দেশটিতে পঙ্গপালের আক্রমণে শস্যের মড়ক লাগা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতির ২৫টি ঘটনার রেকর্ড রয়েছে।

বেশ কয়েকবার লাগাতার পঙ্গপালের উপদ্রবের পর ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা বর্তমান পাকিস্তানের করাচিতে পঙ্গপাল সতর্কীকরণ কেন্দ্র স্থাপন করে। ভারতে পৃথক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে।

ভারতের আগে পাকিস্তানে হামলা চালায় পঙ্গপাল। গত ফেব্রুয়ারিতে এ উপদ্রব মোকাবেলায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে পাকিস্তান সরকার। এবার রেকর্ড সংখ্যক পঙ্গপাল হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করছে ইসলামাবাদ। এই মরু পতঙ্গের ঝাঁক দেশটিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ফলে সেখানে খাদ্যশষ্যের দাম বেড়েছে হু হু। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান, সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশের প্রায় ৩৮ শতাংশ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে পঙ্গপাল।

চিরবৈরী মনোভাবাপন্ন দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বরাবরই শীতল সম্পর্ক বিরাজ করে। সাম্প্রতিক সময়ে এই বৈরিতা আরো বেড়েছে। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে ব্যাপক অবনতি হয়েছে। তবে পঙ্গপাল মোকাবেলায় দেশ দুটি একযোগে কাজ করছে। এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে স্কাইপের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত নয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে আফগানিস্তান ও ইরানের উদ্ভিদ সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও যোগ দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন