অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে এনইআইআর

কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র নিয়ে জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ সেলফোন হ্যান্ডসেট বন্ধের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রযুক্তি সরবরাহ ও পরিচালনায় গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এরইমধ্যে দুই দফায় দরপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়িয়েছে সংস্থাটি যা শেষ হবে আগামী ৩১ মে।  কিন্তু কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এ সময়ের মধ্যে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

হ্যান্ডসেট চুরি বা ছিনতাই রোধ ও অবৈধ বা নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি সেলফোনভিত্তিক অপরাধমূলক কর্মকান্ড সনাক্তে ২০১২ সালে এনইআইআর স্থাপনের উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরবর্তীতে নানা জটিলতায় এটির বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এনইআইআর প্রযুক্তি সরবরাহ, স্থাপন ও পরিচালনায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত আগ্রহীরা দরপত্র জমা দিতে পারবে ও একই দিন দরপত্র খোলা হবে। দরপত্র যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিতে কমিশনের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল তৃতীয় দফায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হয়। এতে দরপত্র জমা দেয়ার সময় ৩১মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ সময় বাড়ানো হয়েছে। এদিকে সময় আর বাড়ানো হবে না বলে দরপত্র ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত ২৩ মে ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, এর মধ্যে কয়েক দফায় দরপত্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এদিকে আর্থিক বরাদ্দের সময়কালও শেষ হয়ে আসছে। আশা করছি দরপত্র জমা দেয়ার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে। যেসব প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেবে তাদের মধ্য থেকেই যাচাই-বাছাই করে কার্যাদেশ দেয়া হবে।

তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপীই অনেক কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে পড়েছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষেও ডেমোনেস্ট্রেশনে অংশ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক দরপত্রের সময়সীমা একই কারণে বর্ধিত করেছে।

উল্লেখ্য, প্রতিটি হ্যান্ডসেটে ১৫ সংখ্যার একটি অনন্য নম্বর থাকে, যা আইএমইআই নামে পরিচিত। হ্যান্ডসেটে *#০৬# এ নম্বরগুলো পর পর চাপলে আইএমইআই নম্বর জানা যায়। হ্যান্ডসেটের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, মডেল ও ক্রমিকের সমন্বয়ে গঠন করা হয় আইএমইআই নম্বর। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটগুলোর ক্ষেত্রে এটি মানা হলেও নন-ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটে ভুয়া আইএমইআই নম্বর ব্যবহার করা হয়। সিডিএমএ প্রযুক্তির হ্যান্ডসেটের ক্ষেত্রে এটি মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফায়ার (এমইআইডি) নামে পরিচিত। ১৬ সংখ্যাবিশিষ্ট আইএমইআইএসভি নম্বরও প্রচলিত রয়েছে, যা আইএমইআইয়ের একটি সফটওয়্যার সংস্করণ। এনইআইআর স্থাপনের মাধ্যমে দেশে ব্যবহৃত প্রতিটি হ্যান্ডসেটে থাকা আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

এনইআইআর ব্যবস্থা চালু হলে নেটওয়ার্কে সচল থাকা সেলফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। পাশাপাশি বৈধ সেলফোন নিবন্ধন করা যাবে। যেসব সেলফোন অবৈধভাবে আনা হয়েছে, সেগুলো আর দেশের নেটওয়ার্কে চালানো যাবে না। তবে প্রবাসীদের আনা সেলফোনের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনইআইআর চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি।

গত বছর সেলফোন অপারেটরদের জন্য প্রকাশিত এক নির্দেশনায় এনইআইআর স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করে বিটিআরসি। অপারেটরদের ইআইআর তৈরির পর তা এনইআইআরের সঙ্গে যুক্ত হবে। সেলফোন অপারেটরের নেটওয়ার্কে নতুন হ্যান্ডসেট যুক্ত হলে সে তথ্য তাত্ক্ষণিকভাবে এনইআইআরে আসবে। গ্রাহকের হাতে থাকা নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট এনইআইআর বাস্তবায়নের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট সিমে চালু রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ছয় মাস পর কোনো নকল, অবৈধভাবে আমদানি করা বা ক্লোন হ্যান্ডসেটে সিম কাজ করবে না।

দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা হ্যান্ডসেটের বাইরেও অবৈধ পথে বিপুল অর্থের হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর যত সেলফোন আমদানি হয়, তার ২৫-৩০ শতাংশই আসে অবৈধভাবে। বর্তমানে অবৈধ পথে আসা হ্যান্ডসেটের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। এসব সেটে আইএমইআই নম্বর থাকে না বা থাকলেও ভুয়া নম্বর ব্যবহার করা হয়। অবৈধভাবে আমদানি করা এসব হ্যান্ডসেটের কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এনইআইআর চালু হলে অবৈধভাবে সেলফোন হ্যান্ডসেট আমদানি একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন