ঘূর্ণিঝড় আম্পান: পানযোগ্য পানি নেই কয়রার ৫২ গ্রামে

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নষ্ট হয়ে গেছে নলকূপ ও পুকুরসহ মিঠা পানির সব আধার। বিভিন্ন জলাশয়ে লোনা পানিতে ভাসছে মরা মাছ, পশু ও পাখি। দূষণের কারণে পানি হয়ে পড়ছে পান অযোগ্য। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার ৫২টি গ্রামে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে এসব গ্রামে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়রা সদর, দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি ও মহারাজপুর ইউনিয়নের ৫২টি গ্রামে বিশুদ্ধ পানি নেই। অন্য ৩টি ইউনিয়নেও পানির সংকট তীব্র। পানি না পেয়ে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও অন্য এলাকা থেকে সংগ্রহ করে আনা ৩২ লিটার পানি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উত্তর বেদকাশি হাজতখালী রিতা রানী বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। কিন্তু সেখানে খাবার পানি পাওয়া যায় না। তাই বাড়িতে চলে এসেছি। এসে দেখি ঘর নাই।

তিনি বলেন, খাবার না পেলেও সমস্যা হয় না। কিন্তু সময়মত পানি না পেলে খুব কষ্ট হয়। এ কারণে কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে ওপার থেকে কলস ভরে পানি আনতে হচ্ছে। যাওয়ার সময় খালি কলস নিয়ে নদ পার হতে সমস্যা হয় না। কিন্তু কলস ভরে পানি নিয়ে নদ পার হতে খুব কষ্ট হয়। একটু এদিক সেদিক হলেই লোনা পানি ঢুকে কলসের পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা বলেন, আম্পানের কারণে মাছ, পশু ও পাখি মরে পানিতে পড়ে থাকার কারণে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। আক্রান্ত ৪টি ইউনিয়নে ১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেখান থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া হচ্ছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, জলাশয়ের পানিতে অতিরিক্ত লবণ। তাই প্রশাসন থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, আম্পানের প্রভাবে কয়রায় ৯০০ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে কয়রা সদরে দুটি ভ্রাম্যমাণ প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এ প্লান্টটি দিয়ে লবণ পানিকে সুপেয় করা হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় একটি প্লান্ট দিয়ে ২ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব। তবে যাতায়াতের পথ ভাল না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকায় এ প্লান্ট নেয়া যাচ্ছে না। তাই ২ হাজার ১০০ জেরিকেন সরবরাহ করা হয়েছে। সদর থেকে বিশুদ্ধ পানি প্রশাসনের লোকজনই প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে ভূমিকা রাখছেন। যাতায়াতের ব্যবস্থা ঠিক হলে প্রত্যন্ত এলাকায় আরো দুটি ভ্রাম্যমাণ প্লান্ট স্থাপন করার প্রস্তুতি রয়েছে। পাশাপাশি কয়রায় ৪ লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। একেকটি ট্যাবলেট দিয়ে ৪-৫ লিটার পানি বিশুদ্ধ করা সম্ভব। স্থানীয় লোকজন যে কোনো উৎস থেকে মিষ্টি পানি সংগ্রহ করে এ ট্যাবলেট দিয়ে তা বিশুদ্ধ করে পান করতে পারবেন। কয়রার পাশাপাশি পাইকগাছা ও দাকোপেও একটি করে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন