উল্টো রথে ব্রাজিলের ‘নির্বোধ’ প্রেসিডেন্ট

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী রবিস জনসনের উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংস তার স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে বিপাকে পড়া সন্তানের পাশে থাকতে লকডাউন বিধি ভেঙে ২৬০ মাইল ব্যক্তিগত গাড়িতে ভ্রমণ করায় বিতর্ক চরমে। তার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। 

গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। যদিও জনসন তার পাশেই থাকছেন। বলেছেন, একজন দায়িত্বশীল বাবা হিসেবেই তিনি এমনটি করেছেন। 

ঠিক একই সময় পৃথিবীর আরেক প্রান্তের সবচেয়ে বড় দেশের ‘খেয়ালি’ প্রেসিডেন্ট এমন কাণ্ড করছেন প্রায় প্রতিদিনই। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা যখন ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৮ আর মৃত্যু ২৩ হাজার ৪৭৩ জন। তখন কী করে সেই দেশের প্রেসিডেন্ট হটডগ খেতে দোকানে যান? 

চরম ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারো ব্রাজিলে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়েও অপরিণামদর্শী আচরণ করছেন। বিপর্যস্ত দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা তো দূরের কথা নিজেই নানা বিতর্কিত কাণ্ড করে যাচ্ছেন!

এমনকি প্রেসিডেন্টের আচরণে ব্রাজিলের সিটি মেয়ররাও ক্ষেপেছেন। মানাউসের মেয়র তো বলসোনারোকে ‘নির্বোধ’ প্রেসিডেন্ট আখ্যা দিয়ে তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে! একই চিত্র দেখা যাচ্ছে নিউইয়র্কের গভর্নর আর প্রেসিডেন্টের মধ্যকার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে। 

আজ মঙ্গলবার (২৬ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা নাগাদ ব্রাজিলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৮ । আক্রান্তের সংখ্যায় তাদের উপরে এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্র (১৬ লাখেরও বেশি)। আর বিশ্বে মোচ আক্রান এখন প্রায় ৫৬ লাখ।

বলসোনারোর ওপর খুব ক্ষেপেছেন আমাজনের কেন্দ্রে অবস্থিত শহর মানাউসের মেয়র আর্তুর ভার্জিলিও নেতো। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসে ব্রাজিলের এতো বিপুল মানুষের মৃত্যুর জন্য বলসোনারোও ‘সমানভাবে’ দায়ী। ২০ লাখ মানুষের শহরের এই মেয়র বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের মনোবাসনা একজন স্বৈরশাসক হওয়া, কিন্তু তিনি খুবই নির্বোধ!’

কভিড-১৯ মহামারীতে ব্রাজিল যখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়ে আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পরের অবস্থানে ওঠে গেছে তখন পুরো দেশে এ নিয়ে মারাত্মক ভীতি তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে বলসোনারোর ওপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। ঠিক এমনই সময় প্রেসিডেন্টের দিকে কামানের গোলা ছুঁড়লেন নেতো। 

দেশে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরুর দিকে নেতো প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি চুপ থাকুন এবং ঘরে থাকুন।’ কিন্তু এখন তিনি বলছেন, ‘পদত্যাগ, পদত্যাগ এবং পদত্যাগ; কারণ তিনি ব্রাজিলকে চালাচ্ছেন না।’

তার এই আক্রমণ অবশ্য অযৌক্তিক নয়। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশ করা এপ্রিল মাসের মন্ত্রিসভা বৈঠকের এক ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, নেতোকে ‘অশ্রাব্য’ ভাষায় গালি দিচ্ছে বলসোনারো। মানাউসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে নেতোকে গণকবর খুঁড়তে হয়েছিল বলে বাজেভাবে মন্তব্য করেন বলসোনারো। 

মানাউসে এখন আক্রান্ত ৪০ হাজারের বেশি, আর সেখানে মারা গেছে ১ হাজার ২০০ জন। ব্রাজিলের আরো বেশ কিছু শহরের অবস্থা এখন নাজুক। হাসপাতালগুলো রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সাও পাওলোর মেয়র ব্রুনো কোভাস গত সপ্তাহে জানান, সেখানে সরকারি হাসপাতালগুলোর ৯০ শতাংশই রোগীতে পূর্ণ। এই মেয়রও বলসোনারোর ওপর ক্ষুব্ধ। 

নভেল করোনাভাইরাস হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলেও ব্রাজিলের খেয়ালী ‘রাজা’ বলসোনারো একে অতটা ‘প্রাণঘাতী’ মনে করেন না এবং কথাটি তিনি একাধিকবার বলেছেন। এমনকি তিনি লকডাউনেরও বিরোধী, এমনকি লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন মাস্ক ছাড়াই! 

ব্রাজিল যখন আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে যায় তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি অবশ্য নিজের বাগ্মিতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। বলছেন, ব্রাজিলের অর্থনীতিকেও রক্ষা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিত্যক্ত স্কুল ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী হাসপাতাল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেতো প্রেসিডেন্টের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, তার বাগ্মিতার কারণেই ব্রাজিলের মানুষ আইসোলেশনকে পাত্তা দিচ্ছে না। নেতোর কথায়, ‘ব্রাজিলে করোনায় মৃত্যুর জন্য তিনিও (বলসোনারো) সমানভাবে দায়ী। আমি জানি না কীভাবে ব্যাখ্যা করব যে, এমন নিচু মানের একজন মানুষ কী করে ২১ কোটি মানুষের দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন!’

একই দিন বিকালে রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় এক র‌্যালিতে সমর্থকদের সামনে হাজির হন বলসোনারো, যেখানে দেখা যায় মাস্ক না পরেই তিনি ভিড়ের মধ্যে হাঁটছেন। এ বিষয়ে নেতো খোঁচা দিয় বলেন, ‘তিনি জানেনই না কীভাবে ঠিকমতো মাস্ক পরতে হয়, এমনকি তিনি যেসব মানুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন তারাও মাস্ক পরেনি।’

দিন যত গড়াচ্ছে বলসোনারোর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ততই ক্ষোভ আর ঘৃণায় রূপ নিচ্ছে। গত শনিবার ব্রাসিলিয়ায় এক পানীয়ের দোকানে হটডগ ও কোমল পানীয় খেতে গিয়ে গালাগালিও শুনে এসেছেন তিনি। ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, বলসোনারো যখন খাচ্ছিলেন তখন কিছু মানুষ চিৎকার করে তাকে ‘খুনি’ ও ‘আবর্জনা’ এসব বলছিলেন। এক পর্যায়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত বলসোনারো ক্ষেপে গিয়ে পেছন দিকে ঘুরে তর্জনি তুলে বিক্ষোভকারীদের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোটি মানুষকে কি তিনি চুপ করাতে পারবেন? 

সূত্র: বিবিসি ও সিএনএন 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন