ঈদের আনন্দ হোক সকলের প্রাণে

গোপাল অধিকারী

বিচিত্র এক দেশ বাংলাদেশ। আমাদের জন্মভূমি-মাতৃভূমি। অসাম্প্রদায়িক ও সৌজন্যপ্রীতির দেশ। অসংখ্য গোষ্ঠী-সম্প্রদায় ও ভাষার দেশ বাংলাদেশ। এখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। এক অপরের সার্থে সোহার্দ্য সম্পর্কের মাধ্যমেই বসবাস করে। এক সময় এক ধর্মের রীতি-নীতি বা উৎসবে অন্য ধর্মের মানুষের আসা-যাওয়া তেমনটা ছিল না। এমনকি একই সম্প্রদায়ের বা জাতের উৎসবে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের আসা-যাওয়া ছিল না।

বিশেষকরে সনাতন ধর্মের মধ্যে বিষয়টি বেশি পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এখন জাত-পাত উঠে যাচ্ছে। ঘুচে যাচ্ছে ধর্মীয় গোড়ামী। এখন একটি জাতিতে সকলে মিলনবদ্ধ হচ্ছে আর তা হলো মানবজাতি। এর ব্যতিক্রম কিছু ভাবছে না সৃষ্টিশীল বা উদার মনের মানুষগুলো। তাইতো বলা হচ্ছে “ধর্ম যার যার উৎসব সবার”। আর যাদের মনে গোড়ামী বা কুসংস্কারে ভরা তারা ভাবছে এই বুঝি ধর্ম গেল। কিন্তু একবার উপলব্ধি করেন তো করোনা কোনো নির্দিষ্ট জাতি-ধর্ম বা গোষ্ঠীর মধ্যে হয়েছে না কি? হয় নি। ভাবুনতো মারা গেলে কেউ কাউকে সাথে নিয়ে গেছে না কি? কাউকে নিয়ে যায় না।

মানুষ জন্মগ্রহণ করে একা মৃত্য বরণও করে একা। কোন কিছুই সাথে যায় না বা নিয়ে যেতে কেউ পারবে না। আমাদের সকলের রক্তের রংও কিন্তু একই। সে দৃষ্টিতে ভাবলে আমরা সবাই সমান ও সহযোগী মানবজাতি। যেকোন উৎসব অর্থই খুশি, আনন্দ, উৎসবের আয়োজন। দুঃখ-বেদনাকে ভুলে যাওয়া। ধনী-দরিদ্র একসাথে মিলে মিশে আনন্দ ভাগাভাগি। তবে ধর্মীয় উৎসব অর্থ খুশি বা আনন্দের সাথে ত্যাগের মহিমা। তেমনি আনন্দ ও ত্যাগের মহিমা নিয়ে আসে ঈদ। মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা। এই দুইটি বড় উৎসব ধর্মীয় ভাব-গাম্ভির্য ও ত্যাগের মহিমার মাধ্যমে পালন করে। সেই সাথে যে যার সামথ্য অনুযায়ী দান করেন। সেই ধারাবাহিকতায় একমাস মাহে রমজান শেষে আগামী সোমবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। খুশির আমেজ সকলের মনে।

তবে প্রতিবছরের চেয়ে এবছর খুশির আমেজটি কম হবারই কথা।  জাত-পাত উঠে গেলেও এই বছর বাধা সেজেছে করোনা। যার কারণে অনেকে পরিবার আক্রান্ত্র। কিছু পরিবার আতঙ্কিত। ইচ্ছে না থাকলেও এই বছর ঈদটি শুধুমাত্র ধর্মীয় গাম্ভির্যে উদযাপন করতে হবে। নেই কোলাকুলি বা হাত মেলানোর সৌহার্দ্য। নেই আত্বিয়তার ভীড়ে ঈদের আনন্দ। এ যেন শুধূ ত্যাগেরই মহিমা। ইচ্ছে থাকলেও কারো বা দেখা হবে না বাবা-মায়ের সাথে। কারো বা ঈদ উদযাপন হবে না প্রিয় মানুষটির সাথে। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে চাই আমরা সত্যিই কেউ সেইভাবে ধর্মীয় বিধান মেনে চলতে পারি না। চেষ্টা করি কিন্তু কেউ কিন্তু বলতে পারি না আমি সৃষ্টিকর্তার সেবা করলাম। কারণ আমি পাপী এটাই সকলের চিরন্তন কামনা। তাই মনে হচ্ছে এবছর সৃষ্টিকর্তা যেন কঠোর পরীক্ষা নিচ্ছেন তার ইবাদতের জন্য।

তবে সদা প্রস্তুত আল্লাহর বান্দারা কঠিন অবস্থায় তার ইবাদতের জন্য আমার মনে হয়। তাই ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করতেও কুণ্ঠিত নয়। এই সকল অসুবিধা তবুও মনে থাকতে হবে আনন্দ, প্রাণে থাকতে হবে খুশির রেশ। হয়ত এই ঈদের পরই করোনা বিদায়ে মুক্ত হবে দেশ। এই বছর সমাজের অভাব-দুস্থ মানুষগুলো একটু বেশিই খুশির আমেজে ঈদ করবে কারণ সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ করোনার কারণে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বিত্তবানদের মনে করি সৃষ্টিকর্তা তওফিক দিয়েছিলেন তাইতো দান করতে জায়গা পেয়েছেন। কারণ আমি মনে করি দান করাটাও ভাগ্যের বিষয়।

ইচ্ছে করলেই অর্থ থাকলে সকলে দান করতে পারে না বা করে না। তাই আমার মনে হয় নতুন কোন সম্ভাবনার আশায় এই বছর ঈদে এই তীক্ততা। নতুন সূর্য উঠবে, ঈদ আসবে, নামাজ হবে, ঈদ চলে যাবে এমনই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতির এই নিয়মের সাথে আমাদেরও নিয়ম মেনে চলতে হবে। থাকতে হবে নিরাপদে, থাকতে হবে সামাজিক দূরত্বে। এই ঈদে সবচেয়ে অসহায় মনে করবে করোনা আক্রান্ত্র পরিবার।

কারণ করোনা আক্রান্ত্র ব্যক্তিদের থাকতে হবে ঘরে। তবে এই ঘরে থাকা নেইকো শুধু কি পরের তরে? এই ঘরে থাকা নিজে ও সকলের তরে। এই ঘরে থাকা বাহ্যিক থাকা ঘরে। মনের ঘরে সকলে থাকি সহ-অবস্থানে। ঈদের দিন অবশ্যই আমাদের করোনারোগীদের খোঁজ-খবর নেওয়া উচিত। তাদের প্রাণে দেওয়া উচিত খুশির জোয়ার। তাদের সাথে মনের আনন্দ ভাগাভাগি করা উচিত। তাই শিরোনামে লিখেছি ঈদের আনন্দ হোক সকলের প্রাণে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ করোনা নির্বিশেষ সকলের জীবনে এই ঈদ বয়ে আনুক সুখ-সমৃদ্ধি ও খুশির জোয়ার। ঈদ হোক দেশ-জাতীর কল্যাণের এবং আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও ভালাবাসার । এই শুভ প্রত্যাশায় সকলকে ঈদের মোবারকবাদ।  

লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

[email protected]

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন