করোনাকালে ঘরবন্দী ঈদ

বণিক বার্তা অনলাইন

আজ ঈদুল ফিতর। রমজান মাসের ৩০ দিন রোজা রাখার পর ঈদ উদযাপন করছে মুসলিম সম্প্রদায়। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মহাধুমধামে উদযাপিত হয় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব। প্রতিবছর নতুন জামাকাপড় পড়ে সুগন্ধি আতড়-সুরমা লাগিয়ে সকালে দল বেঁধে ঈদগাহে যাওয়াটা ঈদের পরিচিত দৃশ্য। এবছর অজানা এক ভাইরাসের কবলে পড়ে উৎসবে ভাটা পড়েছে। এবছর ঈদ ভিন্ন এক আবহে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে প্রায় দুমাস ধরে ঘরবন্দী বাংলাদেশের মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে মানুষ ঈদ উদযাপন করবে ঘরবন্দী হয়েই।

শেষ সময়ে চলাচলে কিছুটা শিথিলতা আর অনলাইনের কল্যানে অনেকেই নতুন জামা কাপড় কিনেছেন, তবে তা অন্যান্য বছরের মতো নয় নিশ্চয়ই। দুকোটি মানুষের এই শহরের মানুষ ঈদের আগে যেভাবে ঢল নামিয়ে গ্রামের দিকে ছুটে যান এবার সেই অবস্থা নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি আর বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মানুষ ঢাকা ছাড়লেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সেই সংখ্যাটাও অন্যান্য বছরের তুলনায় নেহায়েত কম।

ঈদ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে ‘ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এই ঈদ উদযাপনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে করোনাযুদ্ধে সামনের সারির মানুষদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

প্রতিবছর ঈদের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মী, বিচারক, বিদেশী কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এবছর তেমনটা হচ্ছে না বলেই আভাস পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার দেওয়া ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ বছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আত্মীয় স্বজনের খোঁজখবর নেব।’

করোনাভাইরাসের মহামারীর সময়ে ঈদ উদযাপনে এসেছে বিভিন্ন নির্দেশনা। ভয়ানক ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ঈদ জামাত হবে মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

এবছর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউেন্ডশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন মুয়াজ্জিন হাফেজ কারী কাজী মাসুদুর রহমান। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী।

তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতের ইমামতি করবেন পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ জামাত, এতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতের ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান। এই ৫টি জামাতে কোনও ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এবারের ঈদ জামাত আয়োজনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বাসস’কে জানান, এবারের ঈদে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনের কোনো উদ্যোগ থাকছে না। তবে সরকারের নির্দেশনা মেনে মসজিদগুলোতে ঈদ জামাত আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার বলেন, ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকায় খোলা মাঠে কোনো ধরনের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মেয়র আতিকুল ইসলামও নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এদিকে ঈদুল ফিতরে ঢাকা নগরবাসীর জন্য শুক্রবার বিকেলে ১৪টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নির্দেশনায় বলা হয়েছে- করোনা পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাসায় যাতায়াত থেকে বিরত থাকুন। ঈদের দিন ও পরবর্তী সময়ে বিনোদন কেন্দ্রে না গিয়ে নিজ ঘরে অবস্থান করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করুন।

ডিএমপির ১৪টি নির্দেশনার মধ্যে ৯টিই ঈদ জামাত কেন্দ্রীক। বলা হয়েছে- ঈদের নামাজের জামাতের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বেছানো যাবে না। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।

এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদের প্রবেশ পথে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে। আর মসজিদের ওজুখানা ব্যবহার না করে প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ঈদের নামাজের জামাতে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে।

ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতারে দাঁড়াতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঈদের নামাজ পড়তে মসজিদে শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক ব্যবস্থা রাখার জন্য মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করেছে ডিএমপি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন