মুসলিম বিশ্বে বিষণ্ণ ঈদ

বণিক বার্তা অনলাইন

জনসংখ্যায় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ ইন্দোনেশিয়া। সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশটির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ আসন্ন। ঠিক এমনই সময় নভেল করোনাভাইরাস প্রতিদিনই দেশটিকে ফেলছে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত ২১ হাজার ৭৫৪ জন, প্রাণ হারিয়েছে ১ হাজার ৩৫১ জন। আরেক মুসলিমপ্রধান দেশ বাংলাদেশে আজ শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩২ হাজার, বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৫২ জন। মহামারীতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ দুই দেশের এবারের ঈদ-উল-ফিতর এসেছে ভিন্ন এক আবহে।

ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের মতো ইরান, তুরস্ক, মিশর, লেবানন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ সব মুসলিম দেশেই এবার ইদের আমেজকে বিষণ্ণতায় ভরিয়ে দিচ্ছে করোনাভাইরাস।

বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া উভয়ই দেশই অভিবাসী শ্রমিকদের আয়ের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী থাবা বসানোয় এ দুই দেশের অভিবাসীরা বেকার বসে থাকায় আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। তাই দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন না। এতে ওইসব মানুষের পরিবারের ঈদও আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে না।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো দেশবাসীকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করেন এবং রাজধানী থেকে মানুষজন বাড়িতে না ফেরেন। যদিও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে জেনেও বহু মানুষ গত কয়েকদিনে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
 
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৯ দিনে ইন্দোনেশিয়ায় সংক্রমণের হার বেড়েছে। বিশেষ করে পূর্ব জাভায় সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। সব মিলে, দেশটিতে এখন মোট আক্রান্ত ২১ হাজারেরও বেশি। এমন পরিস্থিতি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে জাকার্তা থেকে প্রবেশ বা বের হওয়ার অনুমতি দেবে না কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশেও গত ১০ দিনের আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই দেড় হাজারেরও বেশি। দেশ যখন মহামারী মোকাবেলায় ধুঁকছে তখন ঈদের জন্য ঘুরমুখো মানুষের ঢল। বৃহস্পতিবার প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। পুলিশি প্রহরাকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্নভাবে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছান দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার মানুষ। এদের মধ্যে কেউ কেউ কৌশলে ঘাট থেকে কিছুটা দূরে ট্রলারে করে নদী পার হওয়ার ঝুঁকি নেন, তবে অধিকাংশকেই পুলিশ বাসে করে ঢাকায় ফিরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া প্রশাসন বাধ্য হয়ে ফেরিতে যাত্রী পরিবহন করতে বাধ্য হচ্ছে। শনিবার মাওয়া ও পাটুরিয়ায় যাত্রীদের ঢল দেখা যায়।

বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশ ঈদ সামনে রেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কেননা এ সময় জনসমাগম ঘটলে তা থেকে কভিড-১৯ এর বড় ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে।

লেবানন আগে থেকেই আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, যা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে কভিড-১৯। এবারের ঈদ হবে বেশ নিরানন্দের। বৈরুতের বেকার বসে থাকা বাস চালক মোহাম্মদ এ নিয়ে বলেন, ‘এমনকি গৃহযুদ্ধের সময়ও হাতে টাকা থাকতো এবং কেউ না খেয়ে মরেনি। এখন আমাদের এই পরিস্থিতি হবে তা কে জানতো।’

মিশরে ঈদের পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ কারফিউ বাড়িয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত করেছে, আর রোববার থেকে পরবর্তী ছয়দিন কোনো গাড়িঘোড়া চলবে না। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের শহর বেথেলহেমকে পুরোপুরি সিল করে দেয়া হবে। আর ঈদের তিনদিন সেখানে পুরোপুরি লকডাউনের আওতায় থাকবে।

ইরানি কর্তৃপক্ষও ঈদের সময় মানুষকে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাঈদ নাকামি বলেছেন, জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে তাদের দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তার কথায়, ‘কাজেই আমি প্রিয় ইরানবাসীকে বলল, আপনারা ঈদের ছুটিতে যাতায়াত করবেন না, ঘরেই থাকুন। নতুন সফর মানেই নতুন সংক্রমণ।’

আজ শনিবার পর্যন্ত ইরানে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫২১ জন; মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৩৫৯ জনের। ধুকছে আরেক মুসলিম দেশ তুরস্কও, তাদের আক্রান্ত ১ লাখ ৫৪ হাজারেরও বেশি, মারা গেছে ৪ হাজার ২৭৬ জন।

ঈদ সবচেয়ে কষ্টের কাটবে পরিবার থেকে দূরে থাকা বিদেশবিভুইয়ে এবং মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়াদের। ইন্দোনেশিয়ায় অলাভজনক অভিবাসী শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ক মাইজিদাহ সালাস এ নিয়ে বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য এবারের ইদটি হবে সবচেয়ে বিষণ্ণতা ও কষ্টের।’

পিছিয়ে পড়া মুসলিম দেশগুলোর লাখো লাখো শ্রমিক বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠান। ইদের সময় এলে পরিবারের জন্য বাড়তি টাকা পাঠান তারা। তাদের প্রেরিত অর্থেই পরিবারগুলোর ইদ আনন্দঘন হয়। এ সময় বিশেষ ভোজের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা হয়, উপহার দেয়া হয় স্বজনদের। কিন্তু এবার এসব শ্রমিকের অধিকাংশই কর্মহীন হয়ে বসে থাকছেন, যার প্রভাব পড়ছে ঈদেও।

গার্ডিয়ান অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন