সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ার প্রমাণ দিচ্ছে যে পাঁচটি খাবার

বণিক বার্তা ডেস্ক

গবাদি পশুকে মেরে ফেলা, কয়েক মিলিয়ন লিটার দুধ নষ্ট করাতাজা সবজি পচে যেতে দেয়ার যে চিত্র তা ফুড ব্যাংকগুলোর সামনে কয়েক মাইল লম্বা যে লাইন তার ঠিক বিপরীত অবস্থা নির্দেশ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বেকারত্ব খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেখানে ছয়জন আমেরিকানের মাঝে কভিড-১৯-এর আগে একজন সমস্যায় ভুগত, সে সংখ্যা এখন নিশ্চিতভাবেই  বেড়েছে। কৃষকরা বলছেন, যাদের খাবারের খুব প্রয়োজন তাদের হাতে তা পৌঁছানো বেশ কঠিন ব্যাপার এবং কখনো কখনো তা সামর্থ্যের বাইরে। আমেরিকান ফার্ম ব্যুরো ফেডারেশনের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে কেবল শতাংশ ফার্ম স্থানীয়ভাবে খাদ্য সরবরাহ করে। এছাড়া দেশটিতে দুটি স্বতন্ত্র সাপ্লাই চেইন চালু আছে। একটি মুদি দোকানে সরবরাহ করে এবং অন্যটি ফুড সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে (রেস্টুরেন্ট, স্কুল, হাসপাতাল এবং বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যারা খাদ্য সরবরাহ করে) যেহেতু পরেরটি বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, তাই এখন গোটা সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছে।

সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ার সত্যতা উপলব্ধি করা যাবে পাঁচটি খাবার দিয়ে, যা কিনা দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে ফুড সিস্টেম তার শিকার হয়েছে।

গরুর মাংস

সুপার মার্কেটগুলোতে গরুর মাংসের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ইনফরমেশন রিসোর্সের পরিসংখ্যান বলছে, মার্চের শেষ দিকে গরুর মাংসের বিক্রি বেড়েছে ৯২ শতাংশ। কিন্তু দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য ভোজনালয় মাত্র খুলতে শুরু করেছে। রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরুর মাংস অনেক ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল।

এদিকে ন্যাশনাল ক্যাটেলম্যান বিফ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গবাদি পশুর ব্যবসা ২০২১ সালের মধ্যে ১৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে।

কভিড-১৯-এর কারণে গোটা সাপ্লাই চেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্য পরিবেশসংক্রান্ত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৫ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার ৭৪৪ জন শ্রমিক কভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন।

সব মিলিয়ে দোকানগুলোতে এখন গুরুর মাংসের চাহিদা বাড়লেও তা বন্ধ রেস্টুরেন্টগুলো রফতানি বাণিজ্যের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

দুধ

স্কুল রেস্টুরেন্টগুলোতে দুগ্ধজাত পণ্যগুলোর চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পনির, মাখন আইসক্রিম। ফলে বিক্রি করতে না পেরে এখন কাঁচা দুধ নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন দুগ্ধ খামারিরা। তারা বাধ্য হচ্ছেন প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন লিটার দুধ ফেলে দিতে।

মূলত স্কুলগুলোই হচ্ছে দুধের অন্যতম ক্রেতা। ফলে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিক্রেতারা। এছাড়া দোকানগুলোতেও দুধের বিক্রি সীমিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে দুধের চাহিদা এখন ১২ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

সাধারণ দুধ ট্যাংকে করে ডেইরি ফার্মগুলোতে আসে। সেই দুধ অবশ্যই পাস্তুরিত প্যাকেটজাত করাসহ অনেকগুলো খাদ্যনিরাপত্তা মান নিশ্চিতের কাজ করতে হয়। একটি আলাদা ফার্মের পক্ষে দুধ প্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো ব্যাপকভাবে খরচ না বাড়িয়ে অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই খামারগুলোর পক্ষে সরাসরি দোকানগুলোতে দুধ পাঠানো সম্ভব নয়। বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত প্যাকেজিং করে খরচ সীমিত রাখা যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে অর্থনীতির বড় একটি অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। সে ধারাবাহিকতায় দুগ্ধ খামারগুলোর ক্রেতারাও এখন বড় অংকের অর্ডারগুলো বাতিল করছে এবং রেস্টুরেন্টগুলোতেও দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা পড়ে গেছে। কিন্তু এখনো খামারগুলোতে বিপুল পরিমাণ দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় তা নষ্ট করে ফেলতে হচ্ছে।

ডিম

মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে দেশে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। যা কিনা মুদি দোকানগুলোকে ডিমের সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। এছাড়া খামারিদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ফুড সার্ভিসগুলোতে নতুন ক্রেতা খুঁজে পেতে সংকটে পড়তে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে আবার উৎপাদিত ডিমের ৩০ শতাংশ তরল আকারে বিক্রি করা হয়। কিন্তু এখন খামারিরা বড় বড় পাত্রে ডিম ফেলে রেখেছেন এবং মুদি দোকানে বিক্রি করার কোনো ব্যবস্থাও নেই।

আলু

রেস্টুরেন্টগুলোতে আলু সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার। নানাভাবে এটিকে খাওয়া যায়। কিন্তু মাংস দুগ্ধজাত পণ্যের মতো আলুর চাহিদাও অনেক কমে গেছে। অনেক ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ী মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে কৃষকদের কাছে অর্ডার বাতিল করেছে। রয়টার্স বলছে, স্টোরেজগুলো এখন আলুতে ভর্তি হয়ে আছে। কোনো কোনো খামার যাদের প্রয়োজন তাদের বিনা মূল্যে আলু দিয়ে দিচ্ছে।

শাক অন্যান্য

খুচরা বাজারে প্রায় ৬০ শতাংশ সবজি বিক্রি হয় এবং বাকি ৪০ শতাংশ বিক্রি হয় রেস্টুরেন্টগুলোতে। এই তথ্য দিয়েছেন প্রডিউস মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ম্যাক্স টেপলিস্টকি। তিনি আরো বলেন, স্কুল হোটেলগুলোতে পাতা শাকের বেশ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্কুল, হোটেল রেস্টুরেন্ট এখন বন্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসডিএ ১৯ বিলিয়ন ডলারের করোনাভাইরাস ফুড অ্যাসিস্ট্যান্ট চালু  করেছে। যেখানে কৃষক খামারি ছাড়াও কিছু অংশ যাবে ফুড ব্যাংক, চার্চ অন্যান্য অলাভজনক খাতে। কিন্তু এই সহায়তা খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের দুর্বলতাকে বদলে দিতে পারবে না। অন্যদিকে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ব্রাউন এবং অন্যান্য কৃষি অর্থনীতিবিদরা কৃষকদের সহায়তার লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করছেন, যা কিনা ভবিষ্যৎ বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতির অংশ।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন