করোনা মহামারীতে মোবাইল ইন্টারনেট আর প্রযুক্তি

জিয়াউদ্দিন চৌধুরী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস সংক্রমণকে মহামারী ঘোষণা করার পর থেকেই বিভিন্ন দেশ নড়েচড়ে বসতে শুরু করে। শুরুতে মহামারীর ধাক্কা পশ্চিমা বিশ্বে লাগলেও কিছুটা দেরিতে হলেও বাংলাদেশেও বাড়তে শুরু করেছে এর সংক্রমণ। এই সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। বিশ্বকে এর আগে কখনো এমন অদৃশ্য শত্রু মোকাবেলায় ঘরবন্দি থাকতে হয়নি। যখন বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ট্রান্সমিশন বেড়েছে, ডিজিটাল ডিভাইসসহ নতুন সব প্রযুক্তি যখন উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছে তখনই এমন সংকট এসে হানা দিয়েছে।

মহামারীর এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ খাতের ভূমিকা আমরা দেখেছি। এমনকি আমরা যারা মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি, প্রত্যেকেই একে অন্যের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহামারী মোকাবেলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। মোবাইল অপারেটররা তাদের নিয়ে এগিয়ে এসেছেন আর আমরা এসেছি স্মার্টফোন নিয়ে।

এই কঠিন সময়ে এসে আমরা বুঝতে পারছি যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে কতটা সহজ করেছে। তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন তাদের ফোনেই। স্মার্টফোনে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমেই এখন লাখ লাখ মানুষ ব্যাংকিং এবং নানা ধরনের আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা সামাজিক মাধ্যমে মানুষের আনাগোনাও বাড়তে দেখেছি। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব এমনকি পিন্টারেস্ট অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ট্রেন্ডিং হিসেবে স্ট্রিমিং সাইট নেটফ্লিক্সের তৈরি এক্সট্র্যাকশন সিনেমা নিয়ে তরুণদের উচ্ছ্বাস আমরা দেখেছি। সামাজিক মাধ্যম এবং স্ট্রিমিং সাইট তরুণ-তরুণীদের কাছে কতটা প্রয়োজনীয় শক্তিশালী সেটাও দেখতে পাওয়া গেছে। শুধু এটা বিনোদনের জন্যই ব্যবহার হচ্ছে না, বরং তারা বিভিন্নজনের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে সারা দেশের অসহায়দের সহায়তার জন্য নানা ধরনের খবর শেয়ার করছে বা উদ্যোগ নিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে এই জরুরি অবস্থার সময়ে সঠিক তথ্য দিতে হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার বট আনার মতো উদ্যোগ দেখতে পেয়েছি আমরা। সম্প্রতি বিচারকার্যও শুরু হয়েছে ভার্চুয়ালি। ক্রান্তিকালে মানুষ তার হাতের মুঠোয় যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে দেশের বিশ্বের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারে সে জন্য করোনা ডটগভ ডটবিডির মতো ওয়েবসাইট অ্যাপ আনা হয়েছে। স্মার্টফোনকে কাজে লাগাতে এমন উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।

দেশে মোবাইল ইন্টারনেট মোবাইল সংযোগ বেড়েছে আগের তুলনায় বহুগুণ। এই বাড়ার পেছনে রয়েছে যোগাযোগ ইন্ডাস্ট্রির অনন্য ভূমিকা। গত মার্চে যে হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ার ঊর্ধ্বগতি। জানুয়ারি থেকে মার্চএই তিন মাসেই দেশে নতুন প্রায় অর্ধলক্ষাধিক সংযোগ হয়েছে ইন্টারনেটের। আর এর মাধ্যমে দেশে এখন ইন্টারনেট সংযোগ মোট দাঁড়িয়েছে ১০ কোটির ওপরে। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে কোটি ৭৫ লাখ হাজারই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

দেশে তথ্যপ্রযুক্তির এমন অগ্রগতির মধ্যেও স্মার্টফোনের প্রবৃদ্ধি ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই বেদনাদায়ক। এখন পর্যন্ত দেশে মোট বিক্রি হওয়া মোবাইল ফোনের মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ স্মার্টফোন। ২০১৯ সালের জুন মাসে সরকার সম্পূর্ণভাবে নির্মিত (সিবিইউ) স্মার্টফোনের ওপর আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে দিয়েছে। ফলে স্মার্টফোন আমদানি দশমিক শতাংশ কমে যায়। অথচ ফিচার ফোনকে এই আমদানি শুল্ক কাঠামোর বাইরে রাখা হয়েছে। যার ফলে সে বছর প্রবৃদ্ধি বাড়ে ২০ দশমিক শতাংশ, যা ফিচার ফোনের অবস্থানকে আরো সুসংহত করে।

বাংলাদেশে স্মার্টফোন বাজারের দুর্দান্ত সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু সেই অনুযায়ী প্রত্যাশিত ব্যবসা বাড়ছে না। অভ্যন্তরীণ বাজার বিশ্লেষণ থেকে এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় উচ্চ শুল্কহারকে। যে কারণে বাজারে গ্রে বা অবৈধ স্মার্টফোন ব্যবসা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। প্রতি বছর দেশে ২৫ লাখ মোবাইল ফোন অবৈধভাবে আনা হয়, টাকার অংকে যার পরিমাণ তিন হাজার কোটি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানির কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না, তবে শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো বলছে এর পরিমাণ অন্তত কোটি।

দেশে কম দামে ভালো মানের ডিভাইস সরবরাহ করতে আমরা দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করছি। যাতে মানুষ ডিজিটালনির্ভর হয়। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণও বাড়বে, বাড়বে স্মার্টফোনের মাধ্যমে সেবা পাওয়ার হার। আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, যেহেতু মানুষ ঘরবন্দি হওয়ার পর ইন্টারনেট স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে, এই সংখ্যা সামনে আরো বাড়বে, যা আমাদের আশাবাদী করে তুলছে।

শাওমি মনে করে উদ্ভাবনী সাশ্রয়ী দামে জনসাধারণের মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছে দেয়ার মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পেরেছে। যার ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশনে ভূমিকা রাখা সহজ হয়েছে। কভিড-১৯ আমাদের জীবনযাত্রা বদলে দিচ্ছে। আমরা আগে যা করেছি সেটি আর ভবিষ্যতে করতে হয়তো পারব না, কিন্তু আমাদের সীমাবদ্ধতার জায়গা থেকে হলেও স্মার্টফোন নতুন পন্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম করে তুলছে।

আমরা গভীরভাবে আশাবাদী, সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবনযাপনে স্মার্টফোনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং জনগণের হাতে উদ্ভাবনী অতি প্রয়োজনীয় এই ডিভাইস তুলে দেয়ার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে শুল্ক কমানোর বিষয়টি সামনে আনবে। এখনই সময় ব্র্যান্ড ব্যবসার জন্য সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য মানসম্মত পণ্য আনার এবং পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তুলতে কাজ করার। 

 

জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার, শাওমি বাংলাদেশ

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন