আম্পানে বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ

ত্রাণ বিতরণ শুরু

বণিক বার্তা ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ভেঙে পড়েছে খুলনা বরিশাল বিভাগের ২১ জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। খুঁটি ভেঙে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় গতকালও বিদ্যুিবহীন ছিল সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে গতকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় তিন হাজার খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি এক হাজার স্থানে তার ছিঁড়েছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) খুলনা পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিক উদ্দিন বলেন, খুলনা বরিশাল বিভাগের ২১ জেলায় আম্পানের কারণে ৫৮১টি বৈদ্যুতিক পোল ভেঙে গেছে এবং হাজার ৭৭৬টি পোল হেলে গেছে। এছাড়া ৪৯০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর ছিঁড়ে গেছে। ১১৪টি বিতরণ ট্রান্সফরমার বিকল, ৯৬৬টি ইনসুলিটর ক্ষতিগ্রস্ত, হাজার ৩০৬টি পোল ফিটিংস সেট বিকল এবং ৪৬৯টি ক্রনিক টানা ছিঁড়ে গেছে। বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতের পর বৃহস্পতিবার মেরামত কার্যক্রম শুরু হয়।

ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. আবু হাসান বলেন, আম্পানের প্রভাবে বুধবার রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া গ্রিডের দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। এর ফলে গোটা এলাকা বিদ্যুিবহীন হয়ে পড়ে। কুষ্টিয়া জেলা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। কুষ্টিয়া শহরে বিকল্প ব্যবস্থায় অর্থাৎ ফরিদপুর ভেড়ামারা থেকে বিদ্যুৎ নেয়ার চেষ্টা চলছে।

খুলনা পল্লী বিদ্যুতের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন জানান, বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার আটটি উপজেলায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লাখ ১৬ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েন। ৫০০ খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ৪০০ স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ৬০০ লোকবল মাঠে কাজ করছে। ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের পর বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার কাজ শুরু হয়েছে।

ঝিনাইদহ: ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার দুদিন পরও গতকাল জেলার অধিকাংশ এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। জেলা শহরের কিছু এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও গ্রামাঞ্চলে হয়নি। এতে বিপাকে পড়েছে মানুষ।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে জেলায় পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ২০০ খুঁটি ভেঙে পড়েছে। পিডিবির ৩০টি পিলার ভেঙে পড়েছে। এছাড়াও তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, গত বুধবার থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। দুদিন পার হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন খোঁজ নিতে এলেন না।

শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি ইউপির চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান বিপুল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অনেক স্থানে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে।

ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুতের জিএম ইসাহাক আলি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। লাইন মেরামতের কাজ চলছে। আশা করি দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঝিনাইদহ শহর, কালীগঞ্জ কোটচাঁদপুরে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। শৈলকুপা মহেশপুরে শুরু করা যায়নি, কাজ চলছে।

সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল সদর উপজেলার ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন, নগদ হাজার টাকা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়া গাছের ডাল ভেঙে পড়ে নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারের মাঝে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়।

সাতক্ষীরা সদর- আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সহায়তা পৌঁছে দেন। সময় সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী।

এদিকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার . মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গতকাল শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালীতে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি পরিবারের মাঝে ১০ বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণ করেন। পরে তিনি কলারোয়া উপজেলায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝেও ঢেউটিন বিতরণ করেন।

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বিকালে শরণখোলা উপজেলায় ৫০টি পরিবারকে ঢেউটিন ৪০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সময় বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, সহকারী পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলাম, শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, করোনা পরিস্থিতি আম্পানপরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা প্রদান শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে।

এদিকে মোল্লাহাটে বাগেরহাট- আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের পক্ষ থেকে উপজেলার এক হাজার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সময় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুল আলম ছানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাফ্ফারা তাসনীন উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন