টিএসএমসির অ্যারিজোনা কারখানা

ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বিস্তারিত জানতে চান ডেমোক্র্যাট সিনেটররা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশটির অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অ্যাডভান্সড চিপ কারখানা নির্মাণ করা হবে। টিএসএমসির গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ঘিরে হওয়া চুক্তির বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটররা। খবর ফক্স বিজনেস।

টিএসএমসি গত সপ্তাহে জানায়, হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে অ্যারিজোনায় একটি অ্যাডভান্সড চিপ কারখানা নির্মাণ করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির অ্যারিজোনা কারখানায় -ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টর চিপ তৈরি করা হবে। তাইওয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটররা।

গত মঙ্গলবার ডিফেন্স সেক্রেটারি মার্ক এসপারকে পাঠানো এক চিঠিতে শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার এবং তার দুই সহকর্মী জানান, টিএসএমসির যুক্তরাষ্ট্র কারখানা বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে তারা দৃঢ় সমর্থন জানাচ্ছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মার্কিন সরকারের আরো স্বচ্ছতা প্রদর্শন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিতি রয়েছে এমন চিপ উৎপাদনকারী মাইক্রোন টেকনোলজিস গ্লোবাল ফাউন্ড্রিসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার দিক বিবেচনায় নেয়া উচিত।

তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের -সিরিজের প্রসেসর চিপ তৈরি করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের প্রধান চিপ সরবরাহকারী। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত এক মিটিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ যুক্তরাষ্ট্রে চিপ কারখানা নির্মাণের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়।

গত সপ্তাহের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ টিএসএমসির অ্যারিজোনা কারখানা পূর্ণাঙ্গ রূপে চিপ উৎপাদনে যাবে। এটা নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় কারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে স্টেট কিংবা ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের আর্থিক প্রণোদনা পেতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনার সঙ্গে স্টেট এবং বাণিজ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণে টিএসএমসি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে কী ধরনের চুক্তি হয়েছে তার বিস্তারিত প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটররা। টিএসএমসির আকস্মিক এমন পরিকল্পনাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করা হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, চিপ কারখানা নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি কাজ। টিএসএমসি এরই মধ্যে তাইওয়ানের তাইনান অঞ্চলে নতুন একটি চিপ কারখানায় হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। কারখানাটি চলতি বছরেই আইফোনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু করবে।

টিএসএমসি গত ফেব্রুয়ারিতে মূলধনি ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চাহিদা বিক্রি বৃদ্ধি তাদের ব্যবসায় বাড়তি মুনাফা যোগ করবে। যে কারণে চলতি বছর মূলধনি ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবসা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

চলতি বছর মূলধনি ব্যয় বাড়িয়ে দেড় হাজার থেকে হাজার ৬০০ কোটি ডলার নির্ধারণ করেছে টিএসএমসি। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির হাজার ৪০০ কোটি থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার মূলধনি ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছরজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির মূলধনি ব্যয় হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল।

বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের নাজুক পরিস্থিতির কারণে কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে টিএসএমসি। এখন ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। দ্রুতগতির মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির সুবিধা পেতে দরকার ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন। যে কারণে স্মার্টফোনের চাহিদা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধনি ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা বাড়াতে চাইছে টিএসএমসি। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব চিপ কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে টিএসএমসি। কারণ চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি সিংহভাগ চিপ চীনে নির্মিত কারখানায় উৎপাদন করে আসছে। ভবিষ্যতে ব্যবসায় ঝুঁকি এড়াতে তাই যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব চিপ কারখানা নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও বিষয়ে টিএসএমসি বা মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন