করোনায় ডুবছে মার্কিন অর্থনীতি, ডুবছেন ট্রাম্পও?

বণিক বার্তা ডেস্ক

মজবুত অর্থনীতি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। নিয়তির নির্মম পরিহাস, এখন সেই শক্তিই সম্ভবত তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতায় রূপ নিয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস বদলে দিল সবকিছু। পরিস্থিতি এখন এমনই, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চরম ভরাডুবি হতে পারে ট্রাম্পের। অথচ এই মহামারীর আগে তিনি ছিলেন দারুণ ফেভারিট।

যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বাড়ছে নজিরবিহীনভাবে। পতন ঘটেছে জিডিপিতে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অর্থনীতির এমন ভয়ংকর প্রবণতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাকে শেষ করে দেবে।  

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়বে দেশটি এবং এর ফলেই নভেম্বরের নির্বাচনে ঐতিহাসিক পরাজয় ঘটবে ট্রাম্পের। বুধবার অক্সফোর্ড ইকোনমিকস প্রকাশিত জাতীয় নির্বাচন রূপরেখায় এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়।

মডেলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে বেকারত্ব, আয় মুদ্রাস্ফীতি। তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়, ট্রাম্পের ব্যাপক ভরাডুবি ঘটবে এবং তিনি ৩৫ শতাংশের মতো ভোট পেতে পারেন। সংকটপূর্ব পূর্বাভাসটি এখন সম্পূর্ণ উল্টে গেল। আগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করতে পারেন।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের পূর্বাভাস সত্য হলে ১০০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বর্তমান প্রেসিডেন্টের এটা হবে সবচেয়ে খারাপ ফল। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস প্রতিবেদনে লিখেছে, অর্থনীতিতে সহসাই এমন কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটছে না, যা ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করবে। বরং এটি তার জন্য অনতিক্রম্য এক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

১৯৬৮ ১৯৭৬ সালের নির্বাচন বাদ দিলে ১৯৪৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি নির্বাচনেই অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের জরিপ (পপুলার ভোট) সঠিক হয়েছে। এছাড়া ২০০০ ২০১৬ সালের নির্বাচনে জর্জ ডব্লিউ বুশ ট্রাম্প পপুলার ভোটে হেরে গেলেও সেই যাত্রায় ঠিকই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

ন্যাশনাল ইলেকশন মডেল ধারণা করছে, এই শরতে এখন পর্যন্ত অর্থনীতির অবস্থা বেশ খারাপ, বেকারত্ব বেড়েছে ১৩ শতাংশ এবং জিডিপি গত বছরের চেয়ে কমে গেছে শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতিও ঘটছে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকস আরো বলছে, ভয়াবহ মন্দা তৈরি না হলেও অর্থনীতি এখন বেশ খারাপ অবস্থার মধ্যেই রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাজ্যগুলো আলাদা আলাদাভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস বলছে, ইলেকটোরাল কলেজে ট্রাম্প ৩২৮-২১০ ভোটের ব্যবধানে বেশ বাজেভাবে হারবেন। পূর্বাভাসে বলা হয়, সাতটি রাজ্যের যুদ্ধক্ষেত্রে এবার জয় পাবেন ডেমোক্র্যাটরা। এগুলো হলো আইওয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, ওহাইও, মিসৌরি নর্থ ক্যারোলাইনা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আমরা ধারণা করছি, এসব রাজ্যের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য হারে সংকোচন হবে এবং প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে পড়বে, তাই এখানের ভোটারদের মনোভাব বদলে যাবে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকস গত নির্বাচনে রাজ্যভিত্তিক মডেলের উন্নয়ন করে এবং ইলেকটোরাল কলেজে ট্রাম্পের অবিশ্বাস্য বিজয় নিয়েও তারা পূর্বাভাস দিয়েছিল।

পূর্বাভাস কি একটু আগেভাগেই হয়ে গেল?

অর্থনৈতিক প্রবণতার ওপর নির্ভর করে তৈরি করা মডেল আসলে কখনই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল না। তবে এটাও সত্যি, এই প্রথম কোনো মহামারীর সময় তারা পূর্বাভাস দিল। কথাটি মনে করিয়ে দিয়ে এজিএফ ইনভেস্টমেন্টের প্রধান ইউএস পলিসি স্ট্র্যাটেজিস্ট গ্রেগ ভ্যালিয়েরে বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে মডেল কাজ করে স্বাভাবিক সময়ে। কিন্তু আমরা তো এখন স্বাভাবিক সময়ে নই।

নির্বাচন এখনো ছয় মাস পরে এবং গত ছয়টি মাস দেখিয়ে দিয়েছে, এটুকু সময়ে দুনিয়া কতটা পাল্টে যেতে পারে। কেউই হয়তো কল্পনা করতে পারেনি যে বেকারত্ব ২০ শতাংশ কমে যাবে এবং জিডিপিতে ৪০ শতাংশ অবনমন ঘটবে। এখন এটাই ঘটছে। ভ্যালিয়েরে মনে করেন, আজ নির্বাচন হলে সম্ভবত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনই জিতে যেতেন। কিন্তু আগামী ছয় মাসে ট্রাম্প হয়তো তার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করে বাইডেনের বিপক্ষে নিজেকে তৈরি করতে পারবেন এবং মহামারীর দায়ভারটাও চীনের ওপর চাপাতে সমর্থ হবেন। ভ্যালিয়েরের কথায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতিবাচক কেউই হতে পারবেন না।  

নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও নির্বাচনে বড় প্রভাব রাখতে পারে, যা অক্সফোর্ড ইকোনমিকসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ট্রাম্প কীভাবে সংকট মোকাবেলা করেন, তাও হয়ে উঠতে পারে নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড। ভ্যালিয়েরের কথায়, সংক্রমণ যদি আরো বেড়ে যায়, তবে মানুষজন হয়তো এখনই দেশটি খুলে দিতে ট্রাম্পকে চাপ দিতে থাকবে। আর যদি সংক্রমণ কমে যায়, তবে ট্রাম্প কিছুটা কৃতিত্ব নিতে পারেন।

তবে ট্রাম্পকে একেবারে উড়িয়ে দেবেন না। পূর্বাভাসের অনলাইন প্লাটফর্ম প্রেডিক্টইট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এখনো ট্রাম্পের সম্ভাবনা দেখেন। আবার রিয়ালক্লিয়ারপলিটিকস নামের এক বেটিং সাইট ট্রাম্পকেই এখনো ফেভারিট হিসেবে দেখছেন।

সিএনএন অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন