ব্রিটেনের খাদ্য ও পানীয় শিল্পে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব

লকডাউন শেষে হয়তো আর খুলবে না ৩০ হাজারের বেশি পাব ও রেস্তোরাঁ

নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্যজুড়ে শাটডাউনের ফলে দেশটির আতিথেয়তা খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। এতে লকডাউন শেষে যখন ফের কার্যক্রম শুরু হবে তখন হয়তো ৩০ হাজারেরও বেশি পাব, বার রেস্তোরাঁ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কভিড-১৯ মহামারীতে ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্য। আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা লকডাউনে ব্রিটিশ ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে। রেস্তোরাঁ, পাব বারগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউন শেষে ৩০ হাজারের বেশি পাব, বার রেস্তোরাঁ হয়তো আর খুলবে না।


শঙ্কাজনক পূর্বাভাসটি তখনই এল, যখন এক সপ্তাহে আগে বেলা ইটালিয়া ক্যাফে রাউজ রেস্তোরাঁ চেইনের মালিক ক্যাজুয়াল ডাইনিং গ্রুপ সরকারের কাছে দেউলিয়া সুরক্ষার আবেদন করল। পরিস্থিতিতে গ্রুপটির ২৫০টি রেস্তোরাঁর ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে।

দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রাখার ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়বে কভিড-১৯ সংকটের আগেই চাপে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। লকডাউন শুরুর আগের ১২ মাসে প্রায় হাজার ৮০০ বার রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।


মার্চ নাগাদ গত এক বছরে দশমিক শতাংশ রেস্তোরাঁ বার কমেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিজিএ অ্যালিক্স পার্টনার্স। আগামী জুলাইয়ে আতিথেয়তা খাত ফের চালু হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনের জন্য জরিপে অংশগ্রহণ করা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক-তৃতীয়াংশই বলছে, তাদেরকে হয়তো স্থায়ীভাবেই কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। অবশ্য জরিপে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।


অ্যালিক্স পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গ্রামীন স্মিথ বলেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বিধিনিষেধ কার্যকরের ফলে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ অপারেটরের সক্ষমতার ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা মূল্যায়ন করে কার্যক্রম কমিয়ে আনছে তারা। এমনকি সবচেয়ে প্রশস্ত রেস্তোরাঁগুলোয়ও গ্রাহক উপস্থিতি সীমিত থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানই পুনরায় চালুর যৌক্তিকতা বিবেচনা করে দেখছে।

অনেক পাব অপারেটরই দুই মিটারের সামাজিক দূরত্বের নীতিমালা শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা এই দূরত্ব কার্যকর করে লাভ করতে পারবে না বিধায় অনেকেই আর খুলতে চাইছে না। দ্য ব্রিটিশ বিয়ার অ্যান্ড পাব অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দুই মিটারের দূরত্ব কার্যকরের অর্থ হলো প্রতি পাঁচটি পাবের মধ্যে মাত্র একটি পাব পুনরায় চালু করতে সক্ষম। যদি এক মিটারের দূরত্ব কার্যকর হয় তাহলে বেশির ভাগ আবারো চালু হতে পারবে।


যুক্তরাজ্যের লাখ ১৫ হাজার ১০৮টি লাইসেন্সভুক্ত ভেনুুগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই স্বাধীনভাবে পরিচালিত এবং বাকিগুলো বিভিন্ন গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্রিটিশ ওই সংস্থাটির অনুমান ক্যাজুয়াল ডাইনিং রেস্তোরাঁগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে। রেস্তোরাঁগুলো বেশির ভাগ শপিং সেন্টার অফিস ব্লকের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ার কারণে বিশ্লেষকরা মনে করেন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ফিরে আসতে আরো বেশি সময় লাগবে।

শুরুতে বড় অংকের বিনিয়োগে ফুলে-ফেঁপে উঠলেও বেশ কয়েকটি ক্যাজুয়াল ডাইনিং চেইন নাটকীয়ভাবে কার্যক্রম কমিয়ে আনছে। গত বছর জেমিস ইতালিয়ানের সবগুলো চেইনই বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে কার্লোচিও ইতালিয়ান ডাইনিং চেইনটি তার ৭৭টি আউটলেটের মধ্যে মাত্র ৩০টি চালু রাখতে পেরেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, স্থানীয় পাব, রেস্তোরাঁসহ কমিউনিটি পাব সংখ্যা গত বছর দশমিক শতাংশ কমেছে। তবে চলমান সংকট থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। নভেল করোনাভাইরাস ভীতির কারণে অনেকেই দূরের রেস্তোরাঁ, পাবগুলোয় যাওয়ার চেয়ে স্থানীয়গুলোয় যাবে।

 

গার্ডিয়ান অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন