কারখানা বন্ধের ঝুঁকি

করোনায় অরক্ষিত পাঁচ লাখ পোশাক কর্মীর কর্মসংস্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণে রফতানি ক্রয়াদেশ হারিয়েছে পোশাক শিল্প-কারখানাগুলো। অদূর ভবিষ্যতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর এর মধ্যে বেশকিছু কারখানা চালু হলেও সবগুলো চালু করা যায়নি। এর মধ্যে অনেকগুলোই আর চালু করা যাবে না বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। অবস্থায় চলমান পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক কারখানাগুলোর প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

গত ২৬ মার্চের পর সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রায় সব পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেগুলো আবার চালু হতে থাকে ২৬ এপ্রিল থেকে। চালু কারখানাগুলোর সবকয়টিতেই এখনো সব শ্রমিককে যুক্ত করা যায়নি। আবার কাজের অভাবে বেশকিছু কারখানা চালুও হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের কর্মসংস্থানকে।

শিল্প পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ময়মনসিংহ ছয় শিল্প এলাকায় সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে হাজার ৬০২টি। এর মধ্যে শুধু পোশাক কারখানা আছে হাজার ৯৮৩টি। এসব পোশাক কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত চালু হয়েছে হাজার ৮০১টি। বাকি হাজার ১৮২টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আট হাজার শ্রমিককে ছাঁটাইও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্পসংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পোশাক খাতসংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এর মধ্যে অনেক কারখানা আর সচল হবে না। ফলে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক কর্মসংস্থান হারাবে। গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোট হাজার ১৫০টি কারখানার ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ২২ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানে।

বিজিএমইএর সর্বশেষ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সংগঠনটির মোট সদস্য সংখ্যা হাজার ৬২১। গত মার্চেও সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে সরাসরি রফতানি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কারখানা ছিল হাজার ২৭৪টি। অন্যদিকে চলতি মাসে সরাসরি রফতানির সঙ্গে সম্পৃক্ত কারখানার সংখ্যা হাজার ৯২৬টি। হিসেবে এপ্রিলের মধ্যে সরাসরি রফতানি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারখানা বন্ধ হয়েছে ৩৪৮টি। এর অধিকাংশই চিরতরে বন্ধ হয়ে পড়েছে বলে দাবি বিজিএমইএর। অর্থাৎ শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে এরই মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে নভেল করোনাভাইরাস।

বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি . রুবানা হক বলেন, সম্প্রতি বন্ধের তালিকার নতুন সংযোজন দেখা গিয়েছে। ৩৪৮টি কারখানার মধ্যে ২৬৮টি কারখানার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত হয়েছে। বাকিগুলো চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। কারখানাগুলোর শ্রমিক সংখ্যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও আনুমানিক হিসাবে চার-পাঁচ লাখ কোনো অতিরঞ্জিত সংখ্যা হবে না। এভাবে শিল্প সক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হবে রফতানি কর্মসংস্থানেও।

রুবানা হক আরো বলেন, আমরা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কারখানাগুলোর সঙ্গেও সমন্বয় বজায় রেখেছি। ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সরকারের সঙ্গেও সমন্বয় করছি। পরিস্থিতি মোকাবেলা উত্তরণের জন্য অনেক নীতি সহায়তার প্রস্তাবও আমাদের রয়েছে। সরকারের সঠিক নীতি-সহযোগিতায় অতীতের মতো এবারো সংকট থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যাব।

বিজিএমইএ বলছে, পোশাক খাতে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর নিরাপত্তা ইস্যুতে হাজারেরও বেশি কারখানা বন্ধ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি বিনিময় হারের প্রভাবে আর্থিক সংকটের জেরেও কারখানা বন্ধ হয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানা বন্ধ হয়েছে ৬০টিরও বেশি।

এদিকে পোশাক খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর ৮৩৮ সক্রিয় সদস্যের মধ্যে সরাসরি রফতানির সঙ্গে যুক্ত কারখানা রয়েছে ৭৩৭টি। সহসা সংগঠনটির সদস্য অন্তত ১০০ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। শঙ্কা রয়েছে অনেক উদ্যোক্তারই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ারও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন