আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাতাস নেই, গুমোট ‍অবস্থা। যেন বড় বিপদের আগের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে খুলনায়। ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে আসছে ঝড়। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তবে এই করোনা মহামারীর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে সংশ্লিষ্টরা। যদিও এরই মধ্যে দ্বিগুণ আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানিয়েছেন, খুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪৯টি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে ৩ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব না। তাই বিভিন্ন স্কুল কলেজকেও আশ্রয়কেন্দ্রের তালিকায় নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত করা সম্ভব হয়েছে। 

তবে এতে খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না স্থানীয়রা। কয়রা সদরের গোফরান হক বলেন, বাজারের মধ্যেই এখনো প্রশাসন সামাজিক দূরত্ব মানাতে পারেননি। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ যাওয়া শুরু করলে তো ঢল নামবে। তখন স্বাস্থ্যবিধি মানানো আরো কঠিন হবে। 

দাকোপের খানজাহান মোল্লা বলেন, চালনা সদরের এমএম ডিগ্রি কলেজের নিচতলা ও সামনের বড় মাঠে বসানো হয়েছে কাঁচা বাজার। এখানে এমনিতেই সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো নজির নেই। এই কলেজটিই আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। এখানে লোকজন আসা শুরু করলে সবই ভেস্তে যাবে। 

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চলানো হবে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং, তারপরও সার্বিক প্রচেষ্টা নেয়া হবে। সুনির্দিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে থাকা উপজেলার সকল স্কুল কলেজও এবার আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। অসুস্থ লোকজনকে আলাদা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। আর আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনকে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। 

তবে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ঠিক রাখার জন্যই খুলনার ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি অন্যান্য স্কুল কলেজ তালিকায় নিয়ে ৬শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সামাজিক দূরত্ব মানা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।   

এদিকে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানিয়েছেন, জরুরি সভা করে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি টিমে একজন করে দক্ষ চিকিৎসক থাকবেন। যারা ঝড়ের আগে থেকেই এলাকায় সক্রিয় থাকবেন। প্রয়েজনীয় ওষুধ সামগ্রীর জোগান রয়েছে। 

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবের মধ্যে গতকাল সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে খুলনা জেলার বিভিন্ন বাঁধ রক্ষার বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন খুলনার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউর রহমান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন