খালি কনটেইনারে বিপদ বাড়ছে

রাশেদ এইচ চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরো

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যভর্তি কনটেইনার খুলে খালাস নেয়ার পর কনটেইনারটি খালি হয়ে পড়ে। পরে সেই খালি কনটেইনারটিতেই রফতানির উদ্দেশ্যে পণ্য বোঝাই করে জাহাজে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পণ্য রফতানি অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় অফডকগুলোতে স্তূপ জমেছে খালি কনটেইনারের। খালি থাকা অবস্থায় কনটেইনার বিদেশে পাঠাতে উৎসাহ কম। এতে করে অফডকে পণ্য রাখার জায়গা কমে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানি, রফতানি খালি সব মিলিয়ে কনটেইনার আছে এখন ৪৪ হাজার ৫২৪টি। এর মধ্যে পাঁচ হাজারের মতো খালি কনটেইনার রয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৯টি অফডকে (বেসরকারি আইসিডি) আমদানি, রফতানি খালি কনটেইনার মিলিয়ে মোট ৬৩ হাজার ২৫৭ কনটেইনার জমেছে। এর মধ্যে ৩৯ হাজারই খালি কনটেইনার। বাকি আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার আছে ২২ হাজার ৩৫৪টি এবং রফতানিতব্য কনটেইনার আছে হাজার ৯২৬টি। চট্টগ্রাম বন্দর এবং ১৯টি অফডকে কনটেইনার পরিবহনের হার বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি খালি কনটেইনারও ডিপোগুলো আনা-নেয়া করে। বন্দরে কোনো রফতানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই হয় না। রফতানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই ডিপোগুলোতে এনে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে রফতানি হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারে আমদানি হয় বেশি। কিন্তু রফতানি বেশি হয় মূলত ৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারে। পণ্য আমদানির চেয়ে রফতানি কম হওয়ার কারণে প্রতি বছর এমনিতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খালি কনটেইনার বিদেশে পাঠিয়ে দিতে হয়। তবে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রফতানির পরিমাণে ব্যবধান অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে খালি কনটেইনারের বড় স্তূপ জমেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, বন্দরের ভেতর খালি কনটেইনার হাজারের বেশি নেই। তবে অফডকগুলোতে খালি কনটেইনার অতিরিক্ত জমে গেছে। রফতানি কম হওয়ার কারণে মূলত খালি কনটেইনার জমে থাকার সংকটটি তৈরি হয়েছে।

কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশ থেকে গার্মেন্টস প্রস্তুত পণ্য, পাট পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য চামড়াজাত পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় রফতানিতে পণ্য পরিবহনের হার তলানিতে এস পৌঁছেছে। মূলত এর প্রভাবেই একটি বড়সংখ্যক খালি কনটেইনার জমে গেছে।

অফডক মালিকরা বলছেন, খালি কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য প্রথমত শিপিং কোম্পানিগুলোর অনুমতি দরকার হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে শিপিং কোম্পানিগুলো থেকে সে অনুযায়ী অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ রফতানি পণ্য নেই। শিপিং কোম্পানিগুলো বাফার স্টক রাখতে চায়। শিপিং কোম্পানি থেকে অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে কম। রফতানি পণ্য না থাকায় তারা কনটেইনার খালি থাকা অবস্থায় বিদেশে পাঠিয়ে দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে কম। এছাড়া খালি কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষও অ্যালাউ করতে হয়।

বেসরকারি আইসিডিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বণিক বার্তাকে বলেন, পরিস্থিতি খারাপ করে তুলছে খালি কনটেইনার। ১৯টি অফডকে বর্তমানে যে পরিমাণ কনটেইনার জমেছে তার বেশির ভাগই খালি কনটেইনার। খালি কনটেইনার বিদেশের উদ্দেশে জাহাজীকরণ হচ্ছে অনেক কম। আমরা শিপিং এজেন্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। খালি কনটেইনারের স্তূপ জমে যাওয়ায় পণ্যবাহী কনটেইনার পরিচালন কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়ছে আমাদের জন্য। যে হারে পণ্য আমদানি হয়, সেই হারে রফতানি না হওয়ায় খালি কনটেইনার বেশি থেকে যাচ্ছে। বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় আগেই খালি কনটেইনার বিদেশে পাঠানোর ব্যপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিপিং কোম্পানিগুলো এমনিতে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খালি কনটেইনারের ব্যাপারে আমি নিজেই সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। আমরা বলেছি জাহাজে তোলার ক্ষেত্রে বন্দরে থাকা খালি কনটেইনারকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। যেটা অফডকে থাকা খালি কনটেইনারের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে না। এটা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়াবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন