ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলায় জোর প্রস্তুতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ শেষ রাত থেকে আগামীকাল সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জানমালের ক্ষতি ঠেকাতে উপকূলীয় জেলাগুলোয় প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। উপকূলীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন এলাকা থেকে মানুষ যাতে আগেই নিরাপদ অবস্থানে সরে যায়, সেজন্য মাইকিং শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

জেলা প্রশাসন জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রায় সাড়ে ২৮ টন চাল, ১৩৩ বান্ডিল ঢেউটিন, ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০০টি তাঁবু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র, হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় হাজার ২৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক ২৮৪টি মেডিকেল টিম, দুই লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, দেড় লাখ পিস খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সাগরে মাছ ধরা এবং কুমিরাঘাট থেকে সন্দ্বীপ হাতিয়ায় নৌ-চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, উপকূলীয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সতর্কসংকেত বাড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারেন। পাশাপাশি উপকূল এলাকা থেকে মানুষ যাতে সরে যায়, সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বেশকিছু নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর চ্যানেলে অবস্থানরত লোকাল জাহাজ ছোট ছোট নৌযানকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উজানে সরে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। একইভাবে বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজগুলোর ইঞ্জিন চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্থানীয় লোকজনের আশ্রয়ের জন্য ৩৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৮১৫টি কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে লাখ ৮৬ হাজার ২৭৭ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে মাঠে থাকা পাকা বোরো ধান ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে জেলার ৮৫ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমরা দুর্যোগ মোকাবেলায় এরই মধ্যে জরুরি সভা করেছি। জেলা উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। মাঠে থাকা বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার শেখ ফকর উদ্দিন বলেন, ঝড় মোকাবেলায় বন্দরের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খোলা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, এবার বাগেরহাটে ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে মাঠের ৮৫ শতাংশ ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি। ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগেই বাকি ধান কেটে নিতে মাইকিং করা হয়েছে।

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় সংখ্যা আরো বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানিয়েছেন, খুলনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪৯টি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে তিন লাখ মানুষকে আশ্রয় দেয়ার চিন্তা নেই। স্থানীয়ভাবে থাকা বিভিন্ন স্কুল-কলেজকেও আশ্রয়কেন্দ্রের তালিকায় নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে খুলনার আশ্রয় প্রত্যাশিত তিন লাখ মানুষ নিরাপদ দূরত্ব স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারবে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। আরো বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যসহায়তা প্রদানের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, জরুরি সভা করে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে একজন করে দক্ষ চিকিৎসক থাকবেন। ঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি অনুযায়ী সেবা প্রদানে টিম সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলায় হাজার ৫১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জানিয়েছে, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে লাখ ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।  

জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি বেশ কয়েকটি সভা করেছে। সভায় বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং ওই সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে।

ঝালকাঠি: ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে জরুরি সভা করেছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। গতকাল বিকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সুগন্ধা সভাকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরিফুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার মো. শাহ আলম প্রমুখ অংশ নেন।

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, আম্পান মোকাবেলায় ঝালকাঠিতে মোট ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন