চট্টগ্রামে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিদিন বেড়ে চলেছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। পরীক্ষা শুরুর প্রথম এক মাসে ৮৯ জন করোনা পজিটিভ হলেও গত ১১ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৫৫২ জন। নতুন রোগীর সংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে, সে তুলনায় খুবই অপ্রতুল চিকিৎসাসেবা।
চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত ৬৪১ জন কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৬৩ জন চট্টগ্রাম মহানগরের এবং ১৭৮ জন বিভিন্ন উপজেলার। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০০ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ৩১ জন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে ৪৬১ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। মহানগরের সবকয়টি থানায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও সংখ্যায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে কয়েকটি এলাকার মানুষ।
এরমধ্যে দামপাড়ায় ৪২, হালিশহরে ১৮, সাগরিকায় ১১, ডবলমুরিংয়ে ৯, কোতোয়ালিতে ৯, পাঁচলাইশ ও সদরঘাটে আটজন করে এবং পতেঙ্গা, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ ও বাকলিয়ায় সাতজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। বন্দর নগরীতে এখন পর্যন্ত ৪৯ জন পুলিশ সদস্য নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০ জনই দামপাড়া পুলিশ লাইনে থাকতেন বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলার উপজেলাগুলোয় ১৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতকানিয়ায় ৩২ জন, লোহাগাড়ায় ২৬, পটিয়ায় ২৬, সীতাকুণ্ডে ২৩, বাঁশখালীতে ১৭, রাঙ্গুনিয়ায় ১৪, সন্দ্বীপে আট, মিরসরাই ও বোয়ালখালীতে পাঁচজন করে আক্রান্ত হন।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও সীমিত আকারে ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে শিল্প-কারখানার কর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ৬ মে কর্ণফুলী ইপিজেডের ক্যানপার্ক নামের একটি কারখানায় কর্মরত শ্রীলংকার নাগরিক প্রথম নভেল করোনাভাইরাস পজিটিভ হন। তবে সর্বশেষ ১০ দিনে চট্টগ্রামের সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের ১০ পোশাকশিল্পের শ্রমিক
করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। এছাড়া ইপিজেডে দায়িত্ব পালনকালে শিল্প পুলিশের তিন সদস্য করোনা পজিটিভ হয়েছেন বলে শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রামে শনাক্ত রোগীদের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়ে গেলেও সেখানে চিকিৎসাসেবা খুবই অপ্রতুল। গত দুই মাস ধরে করোনা চিকিৎসা নিয়ে প্রস্তুতি নিলেও কার্যত হাসপাতাল সংখ্যা বাড়ানো যায়নি। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে শয্যা রয়েছে মাত্র ২২০টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটের সঙ্গে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট, সীতাকুণ্ডে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৩০টি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৩০টি বেড এবং বেসরকারি উদ্যোগে ৫০ শয্যার একটি ফিল্ড হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যমান হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় বেশিরভাগ করোনা পজিটিভ রোগী এখনো বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে অন্যদের মধ্যেও সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রামে নমুনা জটের কারণে ফল পেতে দেরি হওয়ার কারণেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ড. আবদুর রব বণিক বার্তাকে জানান, চট্টগ্রামে শনাক্ত রোগীর তুলনায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা খুবই কম। আমাদের পক্ষে সবাইকে চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এখনো বুঝতে পারছি না কতসংখ্যক মানুষ সংক্রমিত। কারণ চট্টগ্রামের জনসংখ্যার তুলনায় করোনার নমুনা পরীক্ষা অনেক কম হচ্ছে। পরীক্ষা বাড়ানো গেলে আরো বেশি রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হতো।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামে করোনা সন্দেহভাজনের নমুনা দেয়ার পর তার ফল জানতে পাঁচ থেকে সাতদিনের বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে করে ফল পেতে দেরি হওয়ায় তিনি অন্য কোথাও চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না। এমনকি ফলাফল হাতে পাওয়ার আগে বেশ কয়েকজন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান এ চিকিৎসক।
সার্বিক প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, চট্টগ্রামে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা বাড়ানোর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত শয্যা ছিল না। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০ মে থেকে চমেকে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার অনুমতি পাওয়া গেছে। চমেকে প্রায় ২০০ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হবে। তাছাড়া আমরা চট্টগ্রামে হাসপাতালগুলোতে শয্যা বাড়ানো, যন্ত্রপাতি বাড়ানোর প্রস্তাব জানিয়েছি। আশা করছি চট্টগ্রামে সংকট ধীরে ধীরে কমে যাবে।