নগদ সহায়তা তালিকায় ৫৩ ব্যক্তির একই মোবাইল নম্বরের বিষয়ে যা বললেন ইউএনও

মোয়াজ্জেম হোসেন, লালমনিরহাট

করোনা সংকটে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নগদ সহায়তার তালিকায় ৫৩ জন দুস্থের নামের পাশে লালমনিরহাটের এক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছের লোকের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি উপজেলার প্রশাসনের হাতে গিয়ে ধরা পড়ে।  

বিষয়টি নিশ্চিত করে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, শুধু কমলাবাড়ী নয় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন থেকেই এ ধরনের ভুল এসেছে। সেগুলো যাচাই বাছাই ও সংশোধনের পরই ডাটাবেজে আপলোড করা হচ্ছে। একই মোবাইল নম্বর একাধিক ব্যক্তির নামের পাশে ব্যবহারের সুযোগ নেই।          জানা গেছে, জনৈক ছমির উদ্দিন কমলাবাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলালের কাছের লোক হিসেবে  পরিচিত। এ ইউনিয়নের দুস্থদের তালিকায় ৫৩ জনের নামে পাশে তার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। ওই তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নর ৬ জন সদস্য ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

আদিতমারী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে  জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ৫১৬টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্ত করে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ইউপি সদস্যরা তালিকা তৈরি করে জমা দিলেও চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন নিজের মতো তালিকা করে জমা দেন। বিষয়টি জানার পর সদস্যরা ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেন। 

ছমির উদ্দিন তার মোবাইল নম্বরটি ব্যবহারের কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন বলেন, ইউপি সদস্যদের দেয়া নামের তালিকাই জমা দেয়া হয়েছে।

৫৩ জনের নামের পাশে ছমির উদ্দিনের মোবাইল নম্বর কেন দেয়া হয়েছে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এসব সংশোধন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আদিতমারী উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে সংশোধন করার কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু কমলাবাড়ী ইউনিয়নই নয়, সবকটি ইউনিয়নের তালিকায় এমন শতাধিক ভুল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে, সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। একই মোবাইল নম্বর অধীনে একাধিক ব্যক্তি, নাম-ঠিকানায় অসঙ্গতি, মৃত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করা এমন তালিকা পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এখানে প্রত্যেকটি নাম যাচাই করছি। এরপর সহায়তার টাকা ছাড় করার সময় জাতীয়ভাবেও এগুলো যাচাই করা হবে। তালিকার ব্যক্তি প্রকৃত কিনা সেটি এনআইডি ডাটাবেজ থেকে যাচাই করা হবে। এছাড়া নামের সঙ্গে থাকা মোবাইল নম্বরটিও যাচাই করা হবে। সুতরাং এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

কখনো কখনো ‍দুস্থ ব্যক্তি মোবাইল ফোন না থাকার কারণে অন্য ব্যক্তির নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে কী হবে, এ প্রশ্নে ইউএনও বলেন, মোবাইল নম্বর না থাকলে ওই ঘরে ১১টি ৭ লিখে দিতে বলা হয়েছে। পরে তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তার কোনো আত্মীয়ের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে পাঠাতে হবে। 

অতএব মাঠ পযায়ের তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অনিয়মের সুযোগ নেই উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, একমাত্র অনিয়ম হতে পারে যেটি ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটির মধ্যে সমন্বয় না হলে হতে পারে। চেয়ারম্যান যদি সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় না করে নিজের মতো তালিকা করেন বা নিজের অংশটি বাড়িয়ে দেন তাহলে অনেকে বঞ্চিত হবে। যেটি কমলাবাড়ী ইউপিতে হয়েছে বলে মনে হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন