বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি তেল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো চলতি বছরের জুনে এশিয়ার বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি কমিয়ে আনতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ অঞ্চলের কমপক্ষে তিনটি আমদানিকারক দেশের জন্য মোট বরাদ্দকৃত জ্বালানি তেলের ১০-৩০ শতাংশ সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে কোম্পানিটি। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
সংশ্লিষ্ট এক পরিশোধন কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ক্রেতাদের জুনে সরবরাহ করা চুক্তিতে ক্রয়াদেশ করা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর ভিত্তি করে পণ্যটির রফতানি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত এ জ্বালানি কোম্পানি। তবে এ বিষয়ে সৌদি আরামকোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে সৌদি আরব ঘোষণা দেয়, দেশটি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন রেকর্ড কমিয়ে আনতে পারে। জুনে মোট সক্ষমতার তুলনায় দৈনিক গড়ে ১০ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছে দেশটি। এ সময়ে দৈনিক গড়ে ৭৪ লাখ ৯২ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে পারে সৌদি আরব, যা গত দুই দশকের মধ্যে জ্বালানি পণ্যটির সর্বনিম্ন উত্তোলন।
মূলত সৌদি আরবের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাসের পেছনে অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) স্বাক্ষরিত চুক্তি প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্বজুড়ে মহামারী দেখা দেয়। প্রতিষেধক না থাকায় ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। এ পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে দেশে দেশে লকডাউনসহ নানা ধরনের সরকারি বিধিনিষেধ আনা হয়। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে ভেঙে পড়েছে বৈশ্বিক পরিবহন ব্যবস্থা। স্থবির হয়ে পড়েছে বিভিন্ন শিল্প খাত। দেশে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
এতে সামগ্রিকভাবে চাপে পড়েছে জ্বালানি তেলের বাজার। চলতি বছরের শুরুর দিকে জ্বালানি পণ্যটির
বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক গড়ে তিন কোটি ব্যারেল কমে গিয়েছিল, যা পণ্যটির মোট বৈশ্বিক সরবরাহের ৩০ শতাংশ। শিগগিরই পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায় চাঙ্গা ভাব ফেরার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না খাতসংশ্লিষ্টরা। এদিকে বৈশ্বিক চাহিদার এমন অপ্রত্যাশিত পতনে চাপ বেড়েছে পণ্যটির দামে। গত মাসে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম কমে ২১ বছরের সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল।
এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা করার লক্ষ্য নিয়ে আলোচনায় বসে ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলো। উত্তোলন কমিয়ে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি ফেলে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করে জোটটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওপেক প্লাসের দেশগুলো চলতি ও আগামী মাসে (মে ও জুন) দৈনিক গড়ে ১ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনার ব্যাপারে একমতে পৌঁছে, যা মোট বৈশ্বিক সরবরাহের ১০ শতাংশ এবং
জোটটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ উত্তোলন হ্রাস চুক্তি।
উত্তোলন
হ্রাসের
সঙ্গে
সঙ্গে সৌদি আবর থেকে জুনে এশিয়ায় জ্বালানি তেল রফতানি কমিয়ে দেয়ার পেছনে আরেকটি বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এশিয়ার অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করে এনেছে। অর্থনৈতিক ও শিল্প খাতগুলো ধীরে ধীরে কার্যক্রমে ফিরছে। ফলে এ অঞ্চলে জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এশিয়ায় পণ্যটির সরবরাহ ঘাটতি ফেলে দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে দেশটি।
এর আগে গত সপ্তাহে জুনে সরবরাহ চুক্তিতে সব অঞ্চলের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরামকো। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি তেল পরিবাহী কার্গোগুলো বেঞ্চমার্কের তুলনায় বেশি দাম চাইছে। তবে পরিশোধন কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে পণ্যটি ক্রয়ে আগ্রহী নয়। কারণ, মহামারীর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় পরিশোধন কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।