নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সংকটের পাশাপাশি অতিদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্নবিত্তসহ মধ্যবিত্তের একাংশ প্রচণ্ডভাবে জীবিকা সংকটের সম্মুখীন। বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রকল্পগুলো অপর্যাপ্ত এবং সর্বজনীন নয়। ফলে চলমান মহামারী মোকাবেলায় যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন। এছাড়া আসন্ন বাজেটে জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ পেতে নতুন দরিদ্রদের অগ্রাধিকারভাবে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘আসন্ন বাজেট ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, আইসিসিও কোঅপারেশন বাংলাদেশের কর্মসূচি প্রধান আবুল কালাম আজাদ।
আলোচনাপত্র উপস্থাপন করে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ বাড়িয়ে ৮৯ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। পিআরএসপি খাতে বরাদ্দ ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে; যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সাড়ে ৭৪ লাখ মানুষ বিভিন্ন ভাতা পেয়েছিলেন। এছাড়া বরাদ্দ ছিল ৬৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বরাদ্দকৃত অর্থের এক-তৃতীয়াংশই পেনশনভোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে প্রকৃত অর্থে দরিদ্র কিংবা পিছিয়ে পড়াদের কাছে কতটুকু অর্থ যাচ্ছে, সেটি পরিষ্কার নয়।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষা—দুটোই জরুরি। সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতেই হবে। পাশাপাশি দরিদ্র ও অসহায় মানুষ যে মানবেতর অবস্থায় পতিত হচ্ছে, তাতে খাদ্য ও কাজের ব্যবস্থা করার ওপর নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকৃত উপকারভোগীর কাছে যেন সে বরাদ্দ ঠিকভাবে পৌঁছায়, সেজন্য এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাত এতে প্রাধান্য পাবে নিশ্চয়ই। করোনা মোকাবেলায় হার্ড ইমিউনিটি কৌশলে এগোতে হলে ব্যাপক চেকআপের প্রয়োজন হবে, সেজন্যই বরাদ্দ দরকার। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্যও প্রস্তাবনার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা দরকার। তবে সেটার যথাযথ বাস্তবায়নটাই আমাদের দেশে বরাবরের সমস্যা।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সাধারণ মানুষের, বিশেষত গ্রামের দরিদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থান সচল রাখতে হবে। নারীদের পুষ্টিও কিন্তু বরাবরের মতো এ সময়ে আরো ঝুঁকির মুখে রয়েছে।