অর্থনীতিতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে এবার ৩৬০ দিন মেয়াদি বিশেষ রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) চালু করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় এক বছর মেয়াদি ঋণ পাবে। তবে বিশেষ রেপোর মাধ্যমে নেয়া অর্থ শুধুই সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করা যাবে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
করোনায় বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এ তহবিলের অর্থ পৌঁছানো হবে। এজন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। গঠিত তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাবে ব্যাংকগুলো। তার পরও যাতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট না হয়, এ জন্যই ৩৬০ দিন মেয়াদি বিশেষ রেপো চালু করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন সর্বোচ্চ ২৮ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধা ছিল।
করোনা সংক্রমণের পর দুই দফায় রেপোর সুদহারে পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৬ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে রেপোর সুদহার নামিয়ে আনা হয়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে। বিশেষ রেপো থেকে ঋণপ্রাপ্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিদ্যমান রেপো হারকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতি ও মুদ্রাবাজারের তারল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ বিশেষ রেপোর সুদের হার ও পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের অকশন কমিটি নির্ধারণ করে দেবে। প্রতি অকশনে এ কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
অকশনে অংশগ্রহণকারী তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ধারণকৃত এসএলআরের (স্টেটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও) অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জামানত রেখে অর্থ গ্রহণ করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের অভিহিত মূল্যের ওপর যথাক্রমে ১৫ ও ৫ শতাংশ মার্জিন রেখে অভিহিত মূল্যের অবশিষ্ট অর্থ রেপো হিসেবে দেয়া হবে। রেপোর বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পূর্ণ সিকিউরিটিজ (বাজারমূল্য/অভিহিত মূল্য অনুসারে) ‘দায়যুক্ত’ বিবেচিত হবে এবং এই সিকিউরিটিজ অন্য কোনো ক্ষেত্রের জন্য জামানত বা সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
বিশেষ এ রেপোর মাধ্যমে নেয়া অর্থ সম্প্রতি ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থ বিনিয়োগের খাতগুলো উল্লেখ করে মাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগকে অবহিত করতে হবে। এ রেপোর মাধ্যমে নেয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সরকারি সিকিউরিটিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে বিনিয়োগ করা যাবে না বলেও প্রজ্ঞাপনে শর্তারোপ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রচলিত নিয়ম অনুসারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে বিড দাখিল করবে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
প্রসঙ্গত, যে সুদহারে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়, তা-ই রেপো রেট বা নীতি সুদহার। বাজারে নগদ তারল্যের জোগান দিতেই মুদ্রানীতির এ গুরুত্বপূর্ণ টুলসটি ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে হারে ঋণ নেয়, সেটি হলো রিভার্স রেপো।
