সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের পরই রাশিয়া

আইসিইউতে ভেন্টিলেটর থেকে আগুন

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় স্পেন, যুক্তরাজ্য ইতালিকেও ছাড়িয়ে গেছে রাশিয়া। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা লাখ ৩২ হাজার। অন্যদিকে স্পেন, যুক্তরাজ্য ইতালিতে সংখ্যা যথাক্রমে লাখ ২৮ হাজার, লাখ ২৩ হাজার লাখ ২০ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যায় রাশিয়ার ওপরে রয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ ৮০ হাজার কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও রাশিয়ায় প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে অনেক কম হচ্ছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন হাজার ১১৬ জন। সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য দেশগুলোতে মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে ৮১ হাজার ৫৩৯, ২৬ হাজার ৯২০, ৩২ হাজার ৬৫ ৩০ হাজার ৭৩৯ জনের।

প্রথমদিকে রাশিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে রুশ কর্তৃপক্ষ। দেশজুড়ে এখন পর্যন্ত ৫৬ লাখের বেশি মানুষের করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি রাজধানী মস্কোর। দেশটির মোট আক্রান্তের অর্ধেকই মস্কোর অধিবাসী।

আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ড: রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত পাঁচজন কভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পিটার্সবুর্গের সেন্ট জর্জ হাসপাতালে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

রুশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আইসিইউর ভেন্টিলেটরের শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

রাশিয়ার ইমার্জেন্সি মিনিস্ট্রি বলছে, আগুনের সূত্রপাতের পর হাসপাতালটি থেকে ১৫০ জন কভিড-১৯ রোগীকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। তবে এতে কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। 

অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া সবাইকে আইসিইউতে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। সেন্ট পিটার্সবুর্গের জরুরি বিভাগের একটি সূত্র রুশ সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বলেছে, ভেন্টিলেটরগুলো ওভারলোডেড হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত চাপের কারণেই ভেন্টিলেটরে আগুন ধরেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

রাশিয়ায় নিয়ে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে দ্বিতীয়বারের মতো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। গত শনিবার মস্কোর একটি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে একজন মারা যান। ওই হাসপাতালেও করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছিল।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র আক্রান্ত: নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ। ইন্টারফ্যাক্স তার বরাত দিয়ে লিখেছে, হ্যাঁ, আমি অসুস্থ। আমার চিকিৎসা চলছে। ৫২ বছর বয়সী পেসকোভ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। তার শারীরিক অবস্থা কতটা জটিল, তাও জানা যায়নি।

পেসকোভের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সর্বশেষ কবে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। গত এপ্রিল থেকেই নিজ বাসভবনে সেলফ আইসোলেশনে আছেন পুতিন। অবশ্য মে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আইসোলেশন ভেঙে জনসমক্ষে আসেন তিনি।

লকডাউন শিথিল: করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ার মধ্যেই গতকাল থেকে ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করেছে রাশিয়া। সোমবার প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিভিশনে এক ভাষণে ঘোষণা দেন।

মহামারীটির বিস্তার ঠেকাতে রাশিয়ায় গত মার্চের শেষ দিকে লকডাউন জারি করা হয়। ৩০ এপ্রিল এর মেয়াদ শেষের পর তা ১১ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছিলেন পুতিন। দীর্ঘ লকডাউনে মানুষ বাসা থেকে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ ছিল। এতে অনেকেই আর্থিক সংকটে পড়েছে। বেকারত্ব এক মাসে দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই মূলত লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিলের পথে হাঁটলেন পুতিন।

অবশ্য তিনি বলেন, কড়াকড়ি শিথিল করা হবে ধীরে ধীরে। বড় ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধই থাকবে। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ঘরেই থাকতে হবে। কেবল আর্থিক সংকটে থাকা নির্মাণ কৃষির মতো কয়েকটি খাতের কর্মীরা কাজে ফিরবেন। তাবে তাদেরও সতর্কতা মেনে কাজ করতে হবে।

এছাড়া দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ এলাকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। রাজধানী মস্কোয় ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউন জারি রাখবে।

বিবিসি, রয়টার্স

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন