কভিড-১৯

পোশাক শ্রমিকদের জন্য তিন হাসপাতালে ৫০০ শয্যা প্রস্তুত

জেসমিন মলি

কর্মস্থলে যেসব পোশাক শ্রমিক কভিড-১৯ আক্রান্ত হবেন, তাদের জন্য তিনটি হাসপাতালের ৫০০ শয্যা তৈরি রাখা হয়েছে। হাসপাতালগুলো হলো মিরপুরের মা ও শিশু হাসপাতাল, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল। বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

এদিকে ৩ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রাখাবিষয়ক এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে আছে— নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আসন্ন ঈদের ছুটিতে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবেন না পোশাক ও অন্য শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা। এছাড়া শিল্প-কারখানার কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বিবেচনায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের জন্য তিনটি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, এমসিসিআই, বিএমএ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বৈঠকে অংশ নেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বণিক বার্তাকে বলেন, উপকমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা ফেরত গার্মেন্টস কর্মীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসন কার্যালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের একটি জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে সভায় অংশ নেয়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কর্তৃপক্ষ কারখানার মালিকদের ও তাদের সহযোগীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলেছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরকে তিনটি জোন হিসেবে আলাদা করে গড়ে তোলা হবে। দেশের বেশির ভাগ পোশাক কারখানা এ তিন জেলায় অবস্থিত। কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও এ জেলাগুলোতে বেশি। এসব এলাকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ করা হবে। যদি কেউ এসব এলাকার বাইরে চলে যান, তাহলে তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, তিনি আর আসতে পারবেন না। এজন্য পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টিন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া কোনো কারখানায় নভেল করোনাভাইরাসে বেশি শ্রমিক সংক্রমিত হলে কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্তও হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে। কারখানাগুলোকে নিজস্ব মেডিকেল টিম গঠন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও আলাদা একটি চিকিৎসক দল গঠন করবে।

সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। চলতি বছরের মার্চ থেকে বিভিন্ন দেশ হতে প্রায় সাত লাখ প্রবাসী দেশে আসেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তাদের ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়। এ পর্যন্ত দেশে ১১০টি হাসপাতাল কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের একটি স্বাস্থ্য ব্যবহারবিধি (গাইডলাইন) প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট তিনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি সভায় সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। 

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, পোশাক শিল্পের জন্য বিজিএমইএ একটি হেলথ গাইডলাইন তৈরি করেছে। সেই অনুযায়ী স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সভায় তিনি জানান, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য তিনটি হাসপাতালে ৫০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তিনি একটি কো-অর্ডিনেশন সেল গঠনেরও প্রস্তাব করেন ওই সময়।

বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, কারখানায় যাতায়াতকালে বিশেষ করে অটো, টেম্পো-জাতীয় যানবাহনের শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছেন। বিষয়টি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। 

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ সভায় বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, লকডাউনের স্পিরিট সমুন্নত রেখে কিছু ছোট দোকান খুলে দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০০০ পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। পুনরায় সংক্রমণ বন্ধ করতে হলে যেসব ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হচ্ছে, তাদের পূর্ণ ঠিকানা সরবরাহ করার অনুরোধ জানান তিনি। 

অতিরিক্ত আইজিপি (শিল্প পুলিশ) আব্দুস সালাম বলেন, কারখানা খোলার পর ১২টি কারখানার ১৫ জন শ্রমিক নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে বিজিএমইএর ৫৭ শতাংশ কারখানাসহ অন্যান্য অনেক কারখানা চালু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। বাকি ৩০ শতাংশ কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। তিনি সাভার ও চট্টগ্রামে টেস্টিং ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করেন। গাজীপুর মেডিকেলে টেস্ট ল্যাব চালুর প্রস্তাব করেন। 

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, টেক্সটাইল মিলগুলো তিন শিফটে চালু করা হয়েছে। মিলগুলোতে ফাঁকা জায়গা থাকায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। 

বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, এমপি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা শ্রমিকদের কাজ করাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তিনি বলেন, শ্রমিকদের জন্য কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবেন। এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন। 

বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে কারখানা চালু করা হয়েছে। তবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কাজ করতে হবে। মন্ত্রণালয় যদি মনিটরিং টিম তৈরি করে দেয়, তবে ভালো ফল পাওয়া যাবে। 

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন জানান, কারখানা সীমিত আকারে চালু না রাখা গেলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কাজেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করা যায় বলে তিনি মত দেন। 


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন