ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়েইদোর বিরুদ্ধে। সরকার দাবি করছে, মাদুরোকে উত্খাতের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাভিত্তিক একটি বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টে এ-সংক্রান্ত নথিপত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি সাবেক মার্কিন সেনা লুক ডেনম্যান, এইরেন বেরিসহ ১৩ জনকে আটক করেছে ভেনিজুয়েলা কর্তৃপক্ষ। বুধবার ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির করা হয় ডেনম্যান ও বেরিকে। এ সময় মার্কিন সেনাবাহিনীর স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সের সাবেক সদস্য ডেনম্যান জানান, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সিলভারকর্প ইউএসএর সঙ্গে একটি চুক্তি করেন ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়েইদো। সিলভারকর্পের শীর্ষ কর্মকর্তা জর্ডান গেডরু এ অভিযান পরিচালনার জন্য কলম্বিয়ায় ৫০-৬০ জন ভেনিজুয়েলীয় নাগরিককে প্রশিক্ষণ দিতে গত জানুয়ারিতে ডেনম্যান ও বেরিকে নিয়োগ দেন। দলটিকে অস্ত্রসহ সব ধরনের সরঞ্জাম দেন গেডরু।
ডেনম্যান আরো জানান, তার দায়িত্ব ছিল কারাকাস বিমানবন্দর দখল করা। দলের অন্য সদস্যরা মাদুরোকে অপহরণ করে বিমানবন্দরে আনার পর তাকে উড়োজাহাজে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে কীভাবে মাদুরোকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি ডেনম্যান।
তবে ডেনম্যান ও বেরির জবানবন্দির ভিডিও কোথায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং তাদের কোথায় আটক করে রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাত্কারে জর্ডান গেডরু ভেনিজুয়েলায় সশস্ত্র অভিযান চালানোর পরিকল্পনার কথা এবং ডেনম্যান ও বেরিকে ‘নিজের লোক’ বলে স্বীকার করেছেন। তবে ডেনম্যানের স্বীকারোক্তির পর তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
এদিকে নিকোলাস মাদুরো বিষয়টিকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার টেলেসুর টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি দাবি করেন, ষড়যন্ত্রমূলক এ অভিযানে সরাসরি প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মাদুরোর এ অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়। ট্রাম্প প্রশাসন ভেনিজুয়েলায় ক্ষমতার পরিবর্তন চায় ঠিকই, তবে তা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।’
মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির কথা স্বীকার করেছেন গুয়েইদোর উপদেষ্টা হুয়ান রেনডনও। বুধবার তিনি বলেন, ‘মাদুরো সরকারের সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করতে তাদের আটকের জন্য সিলভারকর্পের সঙ্গে তাদের একটি প্রাথমিক চুক্তি হলেও সেটি কখনই কার্যকর হয়নি।’
এদিকে জর্ডান গেডরুকে ভেনিজুয়েলার কাছে সমর্পণের দাবি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন নিকোলাস মাদুরো। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, ভেনিজুয়েলায় আটক ওই দুই মার্কিন নাগরিককে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভাব্য সব পদ্ধতি কাজে লাগাবে।
উল্লেখ্য, কারাকাস বিমানবন্দরের ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে উপকূলীয় শহর চুয়াও থেকে ষড়যন্ত্রকারী দলের সদস্যদের আটক করে ভেনিজুয়েলার কর্তৃপক্ষ। এ সময় জব্দকৃত নৌকা, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও যোগাযোগ উপকরণের ছবিও প্রকাশ করে তারা।