ক্রেমলিনের দিনপঞ্জিতে শনিবার মস্কোর রেড স্কোয়ারে আয়োজিত হতে যাওয়া সামরিক মহড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রেখেছিল। চীনা নেতা শি জিনপিং ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৯০ মিনিট ধরে রাশিয়ার সামরিক শক্তি অবলোকন করতেন. যেখানে ১৫ হাজার সেনা সমাবেশসহ দেশটির সর্বাধুনিক অস্ত্রের প্রদর্শনী হতো। কিন্তু এ সূচিটা ঠিকঠাক ছিল নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর আগে। এখন পাল্টে গেছে পুরো দৃশ্যপট। কভিড-১৯ মোকাবেলায় শৈথিল্য এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ব্যাপক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে পুতিনের জনপ্রিয়তা বড় একটি ধাক্কা খেয়েছে। খবর এএফপি।
নািস জার্মানির পরাজয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে যে সামরিক মহড়া আয়োজনের কথা ছিল, তা সীমিত করছে ক্রেমলিন। এখন সামরিক জেটগুলো নিস্তরঙ্গ মস্কোর আকাশে উড্ডয়ন করবে এবং লাল, সাদা ও নীল ধোঁয়া নিক্ষেপ করবে। পুতিন পরিত্যক্ত রেড স্কোয়ারের কাছে একটি সমাধিসৌধে ফুল এবং জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। পুতিন যখন এবার ভাষণ দেবেন, তখন তিনি ক্ষুব্ধ একটি জাতির সামনে দাঁড়াবেন, যারা নভেল করোনাভাইরাস ঠেকাতে গৃহীত সরকারের পদক্ষেপে বিরক্ত।
কভিড-১৯ মহামারীতে যে দেশটির সামরিক কুচকাওয়াজ বিঘ্নিত হচ্ছে তা নয়, বরং এটা রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে এবং পুতিনের জনপ্রিয়তা সূচকে ধস নামিয়ে দিয়েছে।
গত মাসে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য ভোট দেয়ার কথা ছিল রুশদের, যাতে পুতিনের ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত হতো। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসে এ পরিকল্পনাও ভেস্তে গিয়েছে। পুতিনের জন্য এ বসন্ত যেখানে বিজয় উদযাপনের মৌসুম হওয়ার কথা ছিল, তা রাজনৈতিক হতাশায় পরিণত হয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্টের পক্ষে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাতিয়ানা স্টানোভায়া নামে এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ২০ বছরের মধ্যে এ প্রথমবারের মতো কোনো সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন পুতিন। এটি তার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে স্টানোভায়া বলেন, পুতিন যখন বড় ধরনের সাংবিধানিক সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই মহামারীটি আঘাত হানল।
শুরুতে পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় কমসংখ্যক আক্রান্তের খবর এলেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাশিয়ায় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার হু হু করে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সংক্রমণের আরেকটি রেকর্ডের কথা নিশ্চিত করেছেন। মোট সংক্রমণের দিক থেকে রাশিয়া এখন বিশ্বের পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে।
কভিড-১৯-এ মারাত্মক আক্রান্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় রাশিয়ায় তুলনামূলক মৃত্যুহার কম। তবে কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, মৃত্যুর গণনায় তারতম্যে এমনটা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে নিজ সরকারের গৃহীত কর্মসূচির প্রশংসা করেছেন পুতিন। গণহারে পরীক্ষা এবং হতাহতের সংখ্যা সীমিত রাখার মাধ্যমে রাশিয়া অন্য দেশের সামনে মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু বেশির ভাগ রাশিয়ান এতে সহমত পোষণ করছে বলে মনে হচ্ছে না। মহামারী মোকাবেলায় অন্য বিশ্ব নেতাদের বিপরীতে পুতিনের জনপ্রিয়তা সূচক কমেছে। স্বাধীন জরিপকারী প্রতিষ্ঠান লেভাডা বলছে, গত এপ্রিলে পুতিনের অনুমোদন সূচক ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। গত মার্চে তার অনুমোদন হার ছিল ৬৩ শতাংশ।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় আগে থেকেই জর্জরিত রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে মহামারীটি। এতে ক্রেমলিনের প্রতি জনগণের অসন্তোষ আরো গভীর করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।