নভেল করোনা পরিস্থিতিতে ‘সরকারের সমালোচনা করায়’ সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা এমন পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের গ্রেফতারকৃত সকলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের জন্য সরকার গত কয়েকদিনে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। এদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে। গত ৫ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের সমালোচনামূলক পোস্ট দেওয়ায় অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রচিন্তা’র সদস্য ও করোনা-দুর্গতদের স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত দিদারুল ইসলাম ভু্ইয়া, মিনহাজ মান্নান ইমন, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। পরে তাদের ঢাকার রমনা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাকালে ত্রাণ বিতরন, ধান কাটা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার অনিয়মের বিষয়ের পর্যালোচনা এবং সমালোচনা করার দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
সরকারের এসব ‘দমনমূলক কর্মকাণ্ডের’ তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গ্রেফতারকৃত সকলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি। স্বাধীনভাবে তথ্য ও মতামত প্রকাশ করা বাংলাদেশের নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। করোনার ভয়াবহ দুর্যোগকালে এ অধিকার চর্চার কারণে মানুষকে তুলে নিয়ে, আটক করে, মামলা দিয়ে যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। করোনাকালে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও নাগরিক অধিকার এতে বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং এসময়ে চিকিৎসা, জীবিকা ও খাদ্যোর সংকট আরো ঘনীভূত হবে।’
তারা বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি করোনাকালে নাগরিকদের প্রতি সহানূভূতিশীল না হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদশর্ন কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এটি করোনা মোকাবেলায় সরকারের আন্তরিকতা ও সামর্থ্য সম্পর্কে মানুষকে আরো সন্দিহান ও অসহায় করে তুলবে। এ প্রসঙ্গে আমরা একই সাথে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে হয়রানীমুলক মামলা ও তাকে হাতকড়া পড়িয়ে তার ও সাংবাদিক সমাজের প্রতি অবমাননাকর আচরনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভিন্নমত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’
দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, কার্টুন শিল্পী আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ, ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলসহ সকলের বিরুদ্ধে মামলাকে ‘হয়রানিমূলক’ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহার চাচ্ছি এবং গ্রেফতারের শিকার ব্যক্তিবর্গের অবিলম্বে মুক্তি চাচ্ছি। করোনা মহামারীকে যেভাবে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লংঘনের মহোৎসবে রূপান্তর করা হচ্ছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাকস্বাধীনতা বাধাগ্রস্থ করার উদ্দ্যেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিপীড়নমূলক আইন প্রয়োগে সরকারকে বিরত থাকার দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক স্বপন আদনান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ড. আহসান মনসুর, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, খুশী কবির, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, ড. রুশাদ ফরিদী, ড. শহিদুল আলম, অধ্যাপক ফিরদাউস আজিম, ফরিদা আখতার, অধ্যাপক পারভীন হাসান, শিরীন প হক, লুবনা মরিয়ম, আদিলুর রহমান খান, ওমর তারেক চৌধুরী, জাকির হোসেন, হাসনাত কাইয়ুম, নূর খান লিটন, সিনথিয়া ফরিদ, সাদাফ নূর, রেজাউর রহমান লেনিন, জিয়াউর রহমান, অরূপ রাহী ও হানা সামস আহমেদ।