৪৫টি গাছের দাম ৯ হাজার ৬০০ টাকা!

মাহবুব হোসেন নাটোর

গত বছর ১৬ টাকা দরে নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের ৯১২টি গাছের আম বিক্রি করে সমালোচিত হয়েছিল বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) তবে এবার ২১৩ টাকা ৩৩ পয়সা দরে আস্ত গাছই বিক্রি করে দিয়েছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দরে হাজার ৬০০ টাকায় নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের ৪৫টি গাছ বিক্রি করেছে বিএমডিএ। কার্যাদেশ পেয়ে নিয়ম না মেনেই তড়িঘড়ি করে কাটার কাজ শুরু করেছেন গাছ ক্রেতা।

বিএমডিএ কার্যালয় সূত্র জানায়, পুষ্টির চাহিদা পূরণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের উভয় পাশে আমসহ বিভিন্ন ফলদ গাছ রোপণ করে বিএমডিএ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টির চাহিদা পূরণ বন্য প্রাণীদের জন্য প্রাকৃতিক খাবারের উৎস তৈরির উদ্দেশ্যে এসব গাছ রোপণ করা হয়। গত মার্চ বিএমডিএ পাবনার দাশুড়িয়া থেকে ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে ৪৫টি আম গাছ বিক্রির জন্য নিলাম আহ্বান করে। ওই নিলামে অংশ নিয়ে মাত্র হাজার ৬০০ টাকার বিনিময়ে এসব গাছ কেনার জন্য নির্বাচিত হন নাটোর সদর এলাকার আমীর আলী। হিসেবে প্রতিটি গাছের দাম পড়েছে ২১৩ টাকা ৩৩ পয়সা।

সূত্র জানায়, গত মে আমীর আলী বরাবর গাছ কর্তনের কার্যাদেশ পাঠান বিএমডিএর নাটোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী আহসানুল করিম। এতে বিএমডিএর প্রকৌশলীর মনোনীত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে গাছ কাটার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে জানাজানি হওয়ার ভয়ে বিএমডিএর কোনো প্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়াই গাছ কাটা শুরু করেন আমীর আলী।

স্থানীয়রা জানান, বিক্রি হওয়া প্রতিটি গাছেই এবার আম ধরেছিল। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর তড়িঘড়ি করে ক্রেতা আমীর আলী আম সংগ্রহ করে গাছগুলো কাটা শুরু করেন। আর কিছু না হোক প্রতিটি গাছে আড়াই থেকে হাজার টাকার খড়ি পাওয়া যাবে। পানির দরে গাছ বিক্রি করায় অন্তত লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

নিলামে গাছ বিক্রির ব্যাপারে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করে বিএমডিএর নাটোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী আহসানুল করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার দপ্তরে গেলে বিএমডিএর নিরাপত্তা কর্মী আবদুল বারেক জানান, এখন কেউ অফিস করেন না। তিনি নিজেই শুধু পাহারা দেন। গত দু-তিনদিনে কেউ আসেননি।

নিলাম প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে গাছের ক্রেতা আমীর আলী উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, আমি যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নিলামে নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাংবাদিকদের নিলামের ব্যাপারে বলতে বাধ্য নই। সাংবাদিকরা আমাকে টাকা দেয় না যে তাদের কথা শুনতে হবে।

ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, খুবই নগণ্য দামে গাছগুলো বিক্রির কথা শুনেছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের গাছের আম বিক্রি নিয়ে ২০১৯ সালের মে বণিক বার্তায় ১৬ টাকা দরে ৯১২টি আমগাছ ইজারা শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন