করোনাকালে নগরে বাগানবিলাস, জরুরি বলছেন মনোবিদরা

বণিক বার্তা অনলাইন

গ্রীষ্মের দাবদাহ বাড়তে শুরু করেছে। পাশের বাসার ছাদ বাগানের আম গাছে মুকুল এসেছে। গতকালের চেয়ে আজ মুকুলগুলোকে যেন বেশি প্রাণবন্ত লাগছে। মুকুলে দুটি মৌমাছি এসে বসেছে, মনে হয় এদের বিশাল মজলিস বসেছে। দেখেই মন ভালো হয়ে যায়!

মাস দুয়েক আগেও এই ছাদে এত গাছগাছালি ছিল না। বাড়ির মালিক পেশায় একজন প্রকাশক। বাগান করা তার শখ। লকডাউনের সময়ে এই শখই তার বড় সঙ্গী। তার স্ত্রী মরিচ, কুমড়ার বীজ মাসখনেক আগে একটা ড্রামে বনেছিলেন। ড্রামের মুখ সবুজ কচি চারায় ভরে গেছে। 

এমন কাজ এখন অনেকেই করছেন। বাগান করার আনন্দ ভুলিয়ে দিচ্ছে ঘরে বন্দি থাকার যন্ত্রণা, সেই সঙ্গে শিগগিরই এই ছাদ থেকেই মিলবে সুস্বাদু টাকটা সবজি। এই ভেবেও অনেকের ভেতরটা আনন্দে থরথর করছে!

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন এমন সঙ্কটকালে বাগান করা সবচেয়ে ভালো একটা অ্যান্টিডট হতে পারে। 

ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আনা ইয়গনসেন গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, আমাদের চারপাশের পরিবেশ এবং মন ভালো থাকার মধ্যে গভীর সংযোগ রয়েছে। 

মানুষ অমর নয় তবে তাই বলে অকালমৃত্যুও কাম্য নয়। বিশ্বে কভিড-১৯ এ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন প্রায় আড়াই লাখ। এজন্যই  মানুষ অকালমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে নিজেদের ঘরে বন্দি করেছেন। কেউ ঘর থেকেই অফিস করছেন অথবা ঘরের কাজে সাহায্য করছেন বা কারো কাটছে অলস সময়। স্মৃতিচারণ করে মন উদাস হয়। এসব কিছু থেকে মুক্তি পেতে আশেপাশের পরিবেশ হতে পারে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। 

কারখানা, যানবাহন সবকিছু বন্ধ হওয়ার পর থেকে বায়ুদূষণ অনেকটাই কমে গেছে। শহরের বাতাস আজকাল শরীরে অন্যরকম শিহরণ জাগায়। রাতের আকাশে তারার মিছিল, মেঘের ভেসে চলা। কোলাহল কমে যাওয়ায় নতুন লাগে পাখির কলরব। এসব কিছুই ঘরে বসে থেকেও ভালো থাকার খোরাক হতে পারে।

আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রকৃতির ইতিবাচক প্রভাব একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত। করোনার কারণে লকডাউনের মধ্যে বাগান করার আগ্রহও বাড়ছে।  গুগলের অনুসন্ধান প্রবণতা বলছে, এক বছর আগের তুলনায় কম্পোস্ট এবং বীজ সম্পর্কে জানার জন্য মানুষের মাঝে দ্বিগুণ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। 

শুধু ছাদেই নয়। রান্নাঘর, বেলকনি এমনকি জানালার ধারেও গড়ে উঠছে মানুষের শখের বাগান। যুক্তরাষ্ট্রের বাকস কাউন্টির সবচেয়ে বড় বীজ কোম্পানি বুরপির চেয়ারম্যান জর্জ বেল জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ হারে চলছে তাদের বিক্রি। তিনি বলেন, ৩০ বছরের কর্মজীবনে এই বসন্তের মতো এত বীজ বিক্রি হতে দেখেননি। 

মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন আরম্ভ হয়। মানুষ সময় কাটানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে বাগান করায় মন দিয়েছেন।  

যুক্তরাষ্ট্রে ফুল, শাকসবজির বীজেই বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। লন ও বাগানগুলো বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত সপ্তাহে এগুলো পুনরায় খোলার জন্য সিনেটে একটি বিল উপস্থাপন করা হয়েছে। বিলটি পাস হয়নি। 

প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লাখ লাখ বিজয় উদ্যান করা হয়েছিল। ইংল্যান্ডে বলতে গেলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল। ওই সময়ে খাদ্য সঙ্কট সামলাতে এই উদ্যানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তখন বাড়িতে করা বাগানকে অনেকে দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব হিসেবে দেখেছিলেন। 

বিশ্বে আবার এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ। হাজার হাজার মানুষ এরই মধ্যে বাগান করা শুরু করেছে।  এবার বাগান করা হয়ে উঠুক মানবতার প্রতীক।

বিবিসি, ট্রিবলাইভ অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন