সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিল নিয়ে মতানৈক্য দেশগুলোর

তাসনিম মহসিন

সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিল নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে। ভারতের উদ্যোগে নেয়া তহবিলের অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় খরচ করা হবে, তা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে তার আগেই তহবিল ব্যবহার করে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

ভারতের উদ্যোগে গত ১৫ মার্চ সার্কের শীর্ষ নেতাদের ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। অন্য সব সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্র সরকারপ্রধানরা এতে অংশ নিলেও পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিল গঠনের প্রস্তাব আসে। সেই সঙ্গে তহবিলে শুরুতেই সবচেয়ে বেশি কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয় দিল্লি। এরপর বাংলাদেশ তহবিলে ১৫ লাখ, শ্রীলংকা লাখ, আফগানিস্তান ১০ লাখ, নেপাল লাখ, মালদ্বীপ লাখ ভুটান লাখ ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শুরুতে না দিলেও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান তহবিলে ৩০ লাখ ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা নিয়ে শুরু হয়েছে মতানৈক্য। ভারত চাইছে না আঞ্চলিক তহবিলের নিয়ন্ত্রণটি ছেড়ে দিতে। আর পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ সার্ক সচিবালয়ের মাধ্যমে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালনা চাইছে। তবে এরই মধ্যে সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিলের সুবিধা পেয়েছে সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। তহবিল ব্যবহার করে সেবা সরঞ্জাম দিয়ে এরই মধ্যে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল শ্রীলংকাকে সহযোগিতা করেছে ভারত।

তহবিল নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়টি বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, যেহেতু তহবিল সার্কের প্লাটফর্মে তৈরি করা হয়েছে, ফলে এর নিয়ন্ত্রণও সার্কের কাছেই থাকা ভালো বলে বাংলাদেশ মনে করে। এখানে ভারত তহবিলটি সার্কের পরিচালনার কাছে দিতে রাজি হচ্ছে না। আর এটারই সুযোগ নিয়েছে পাকিস্তান। তারা বিষয়টিকেই বেশ জোরেশোরে বাজিয়ে যাচ্ছে। তবে ভারত তহবিল ব্যবহার করে যে সেবা সরঞ্জাম সহযোগিতা করছে, তা পরিষ্কার করে বলা উচিত। কারণ পত্রপত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি, সহযোগিতা ভারত করছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কভিড-১৯ মোকাবেলায় ভারতের জনগণ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণ সরকারের জন্য চিকিৎসা সহায়তার দ্বিতীয় চালান এতে সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিল ব্যবহার করে বাংলাদেশকে এক লাখ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট উপহার দেয়ার কথা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন বণিক বার্তাকে বলেন, অপারেশন কীভাবে হবে, টাকাটা কীভাবে ব্যবহূত হবে, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। কবে শুরু হবে, তা- জানি না। ভারত নেতৃত্ব দিয়েছে। পাকিস্তান একটা প্রস্তাব দিয়েছিল সার্কের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করার। তারা বলেছিল, ফান্ড সার্ক সেক্রেটারিয়েট দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। 

বাংলাদেশ কোনো পজিশন নেয়নি। তবে বাংলাদেশ অবজারভেশন দিয়েছিল সার্ক সচিবালয়ের মাধ্যমে পরিচালনের। আমরা এটা নিয়ে তেমন কাজ করিনি। বিষয়টিতে নিউট্রাল জায়গায় রয়েছি।

জানা গেছে, সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিলে ৩০ লাখ ডলার দিয়ে জরুরি তহবিলের অর্থ সার্কের চার্টার অনুযায়ী সার্ক সচিবালয়ের মাধ্যমে ব্যবহারের বিষয়ে প্রস্তাব করেছে পাকিস্তান। এছাড়া ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী পর্যায়ের ভিডিও কনফারেন্সে সার্ক মহাসচিব তার সচিবালয়ের প্রস্তুতির কথা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জানান। সার্ক মহাসচিবের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠকে পাকিস্তান তার মতানৈক্যের কথা জানায়। পাকিস্তান জানায়, আঞ্চলিক জোট সার্ককে শক্তিশালী করার বদলে প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কোনো একটি দেশ আঞ্চলিক এজেন্ডা তার চাহিদামতো নকশা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে না। সার্কের চার্টার অনুযায়ী সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিল সার্ক সচিবালয়ের কাছে থাকতে হবে। আর এর ব্যবহার বাস্তবায়ন সদস্য দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে।

সার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিল নিয়ে পাকিস্তানের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ এপ্রিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব গণমাধ্যমকে বলেনসার্ক কভিড-১৯ জরুরি তহবিল নিয়ে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন, কীভাবে ব্যবহার করা হবে এবং কোন সময়ে ব্যবহার করা হবে তা সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর ভারতের বিষয়ে বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বর্তমানে বাস্তবায়নের অগ্রবর্তী অবস্থায় রয়েছে। সেবা সরঞ্জাম দিয়ে এরই মধ্যে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল শ্রীলংকাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। দেশগুলো তহবিলে দ্রুত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কোনো দেশের ঐকান্তিকতার মাত্রা তার ব্যবহার দ্বারা নির্ণয় করা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন