সংক্রমণ ঝুঁকিতে সচল শিল্প

করোনা আক্রান্ত পোশাক কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে

বদরুল আলম

গত মার্চ কভিড-১৯ আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় বাংলাদেশে। গতকাল ৫৭তম দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৮৬। এদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই গত ২৬ এপ্রিল থেকে সচল হচ্ছে শিল্প-কারখানা। শ্রমঘন পোশাক শিল্পে কভিড আক্রান্ত কর্মী সংখ্যাও বাড়ছে। প্রেক্ষাপটে শিল্প-কারখানা সচলে সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা, নজরদারিতে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

গত ২৬ এপ্রিল থেকে কারখানা সচল হতে শুরু করেছে। শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ময়মনসিংহ ছয় এলাকায় গতকাল খোলা ছিল হাজার ৩১৮টি কারখানা। এলাকাগুলোতে সব খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে হাজার ৬০২টি।

খোলা কারখানাগুলোর মধ্যে হাজার ২৪৬টি পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য। আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য কারখানা খোলা ছিল ৩৫৬টি। পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য কারখানা খোলা ছিল ১৭৪টি।

বিজিএমইএর তথ্যমতে, মে পর্যন্ত ১০টি কারখানায় কভিড-১৯ আক্রান্ত কর্মী শনাক্ত হন ১২ জন। গতকাল মে সন্ধ্যা পর্যন্ত শনাক্ত সন্দেহভাজনসহ মোট কভিড-১৯ সংক্রান্ত সংগঠনটির কাছে ঘটনা রয়েছে মোট ১৭টি। এদিকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, মে থেকে মে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আটজন পোশাক কর্মী করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন।

প্রসঙ্গে বিজিএমইএ বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাজার ৭১১ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট কোনো পেশার বিষয়ে ভাবা অবান্তর। গত ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯ আক্রান্ত ৭৮৬ জন শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পোশাক খাতের সংখ্যা কোনোভাবেই উল্লেখযোগ্য নয়। অর্থনীতির স্বার্থে শুধু পোশাক নয়, সামগ্রিক চিত্র দেখার তাগিদ জানিয়েছে সংগঠনটি।

গার্মেন্টস কারখানা খোলার পর করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে বলে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছিলেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়। গত ৩০ এপ্রিল ইউএনওকে পাঠানো এক চিঠিতে তথ্য জানানোর পাশাপাশি সাভার উপজেলায় গার্মেন্টস খোলা না রাখার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানানো হয়।

মে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধীনস্থ কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) সংস্থাটির সব উপ-মহাপরিদর্শকের উদ্দেশে একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিল্প-কারখানায় বিশেষ পরিদর্শনের নির্দেশনা দেয়া হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুত করা স্বাস্থ্য ব্যবহারবিধি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কিত বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুসরণে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫-এর সংশ্লিষ্ট বিধি প্রতিপালনের জন্য বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনায় নির্দেশ প্রদান করা হলো।

ডিআইএফই মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় স্বাক্ষরিত নির্দেশনাটিতে আরো বলা হয়, পরিদর্শকগণ কর্তৃক নির্ধারিত এলাকার কল-কারখানাগুলো পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিষয়ে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাত্ক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কল-কারখানা কর্তৃপক্ষকে সতর্কীকরণ পত্র দিতে হবে এবং অনতিবিলম্বে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো পরিপূর্ণ না করলে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাসংক্রান্ত নির্দেশনায় দেখা যায়, কর্মীদের কারখানায় আগমন থেকে শুরু করে কারখানায় কর্মীদের আবাসন ব্যবস্থা সম্পর্কেও নির্দেশনা রয়েছে। সামগ্রিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন মনিটরিং প্রসঙ্গে নির্দেশনায় বলা হয়, কারখানাগুলো নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা, তা মনিটরিং করার জন্য কারখানার নিজস্ব মনিটরিং টিম থাকতে হবে।

সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ন করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই কল-কারখানা সচল রাখা যাবে। তবে অল্পসংখ্যক কিছু কারখানা স্বাস্থ্যবিধি পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করলেও বেশির ভাগ কারখানায় যথাযথ অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন