ঈদে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট চালু রাখার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ঈদের আগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দোকানপাট চালু রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুর বিভাগের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি অফিস-আদালত সব সীমিত আকারে আমরা চালু করে দিচ্ছি, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। এবং সামনে ঈদ। ঈদের আগে কেনাকাটা বা যার যা দরকার সেগুলো যাতে মানুষ করতে পারে।

তিনি বলেন, কিন্তু এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, খুব বেশি খোলামেলাভাবে সবার সঙ্গে মেশা বা এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা খুব বড় জনসমাগম করা জায়গা থেকে সবাইকে মুক্ত থাকতে হবে। কারণ সেখানে কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে গেছে। আমরা ধীরে ধীরে কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছি। যারা বের হবেন তারা নিজেরা সুরক্ষিত থাকবেন, অন্যকে সুরক্ষিত রাখবেন। আর বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরে বের হবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু একটু থমকে গিয়েছিল। এরই মধ্যে আমরা মে পর্যন্ত ছুটির ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেটিকে ১৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে চাচ্ছি। কিন্তু রমজানে ঈদের কেনাকাটা বা সাহরি খাওয়া বা রোজার বাজারহাট করা, সেগুলো যাতে চলতে পারে, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখে সেগুলো চালু রাখারও নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি।

সময় জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা বজায় রেখে অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার জন্য মন্ত্রিসভা বিভাগ থেকে শিগগিরই কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সভা চলাকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাজহারুল হক প্রধান জানান, চায়ের দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি বৃদ্ধির কারণে পঞ্চগড়ের চা-চাষীরা দুরবস্থায় পড়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাইলে শেখ হাসিনা একজন চা চাষীর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওই চা চাষীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষকদের জন্য যে প্রণোদনা দিচ্ছি ক্ষুদ্র চা চাষীরা যাতে তার অন্তর্ভুক্ত থাকে, তার ব্যবস্থা আমরা করে দেব। তাতে কোনো অসুবিধা হবে না। চা বাগানের শ্রমিকদের আমরা আলাদাভাবে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে থাকি। বড় বড় চা বাগান যাদের আছে তারা তো অন্য রকম সুবিধা পায়।

সরকারপ্রধান বলেন, অদৃশ্য ভাইরাসের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে এসেছে। ভাইরাসের কারণে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাদের ঈদের আগে কিছু আর্থিক সহায়তা আমরা দিতে চাই, যাতে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

করোনা সংকটের মধ্যে রংপুরে যেন আবার মঙ্গা ফিরে না আসে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে যারা একটু সচ্ছল পরিবার আছে বা আমাদের জেলা প্রশাসন, দলীয় নেতাকর্মী সবাইকে অনুরোধ করব, এলাকায় যেন আবার মঙ্গা ফিরে না আসে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। রংপুর অঞ্চলে যদি দুস্থ লোক থাকে, তাদের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। কোনো মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। আর নিম্নবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত অনেকেরই হয়তো কিছু অসুবিধা থাকতে পারে বা যারা হাত পাততে পারে না, তাদের সহযোগিতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করে সরকারপ্রধান বলেন, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য নিজের দেশকে আমরা রক্ষা করব। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে, আমরা বিভিন্ন খাদ্য পাঠিয়েছি, সহযোগিতা পাঠিয়েছি এবং আরো হয়তো আমাদের পাঠাতে হবে। সেজন্য আমাদের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে।

কৃষি খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা সেখানে ডেইরি ফার্ম, পোলট্রি ফার্ম থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র, মাঝারি কৃষক, যারা মত্স্য চাষ করেনপ্রত্যেকে যেন তার ব্যবসাটা চালাতে কিছু সুযোগ পান, সেদিকে লক্ষ রেখেই পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটা বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছি। তাছাড়া হাজার ৫০০ কোটি টাকা আমরা ভর্তুকিও দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রায় ১০ লাখ টন ধান সংগ্রহ করব। এর মধ্যে লাখ ২০ হাজার টন আতপ, ৮০ হাজার টন গমসহ প্রায় ২১ লাখ টন খাদ্যশস্য আমরা সংগ্রহ করব। ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য যদি আমরা সংগ্রহ করি, তাহলে আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের আর খাওয়ার কোনো অসুবিধা হবে না। এরপর আমাদের সীমিত আকারে আউশ, আমন সেগুলোও আসবে বা অন্যান্য ফসল আসবে।

রেলপথে পণ্য পরিবহন চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে আমরা রেল চালু করে দিয়েছি। পচনশীল পণ্য বা একেক এলাকায় বেশি উৎপাদন হয় এমন পণ্য যাতে দ্রুত পরিবহন করা যায়, সেজন্য রেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু চালুও হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন